Editorial

কে চোর, কে চোর তুই চোর, তুই চোর

সম্পাদকীয় বিভাগ

বিজেপি না তৃণমূল, কে কত বড় চোর, স্লোগান যুদ্ধে তার ফয়সালা হবার আগেই সাঙ্গ হয়ে গেল বিধানসভার তিনদিনের বিশেষ অধিবেশন। যদিও এই বিশেষ অধিবেশন শাসক ও বিরোধী দলের চুরির বহর নির্ধারণের জন্য ডাকা হয়নি, হয়েছে বাংলা ভাষা তথা দেশের বিভিন্ন রাজ্যে বাংলাভাষীদের ওপর বি‍‌জেপি সরকারের হেনস্তা নিয়ে আলোচনা করার জন্য। শেষ পর্যন্ত আলোচয় বিষয় বিসর্জন দিয়ে সরকার পক্ষ তৃণমূল এবং বিরোধী পক্ষ বি‍‌জেপি একে অন্যকে চোর সাব্যস্ত করতে সর্বশক্তি নিয়োগ করে। চোর সম্বোধনে স্লোগানের কানফাটা শব্দে বিধানসভায় রীতিমতো লঙ্কাকাণ্ড বেধে যায়। হাতাহাতি, ধাক্কাধাক্কি, ঠেলাঠেলির মধ্যে আহত হয়ে হাসপাতালেও যেতে হয় কয়েকজনকে। বিধানসভার ভেতর এমন এক জঘন্য নজিরবিহীন কাণ্ড ঘটেছে এবং সেটা ঘটিয়েছে জনগণের ভোটে নির্বাচিত বিধায়করা। লজ্জায়, ঘেন্নায় গা রি‍‌ রি করলেও দেখছে বাংলার মানুষ, শ্রদ্ধার চোখে দেখেন বিশ্বের মানুষ। গণতন্ত্রের মন্দির হিসাবে যাকে মানুষ শ্রদ্ধার চোখে দেখেন তাকে কতটা কদর্যরূপ দেওয়া যায় বাংলার জনপ্রতিনিধিরা তা আর একবার দেখিয়ে দিয়েছেন।
কানে শুনলেও নিজের কানকে বিশ্বাস করা কঠিন হয়ে যাবে যে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভায় রীতিমতো কলতলার খেউরে মেতে উঠেছেন। ন্যূনতম সংযম, পরিমিতিবোধ, গাম্ভীর্য, ভাষাজ্ঞানহীনভাবে তিনি স্লোগান দিচ্ছেন। মোদী, অমিত শাহ এবং বি‍‌ জেপি-কে সরাসরি চোর বলে গাল পাড়ছেন। কখনো ডাকাত বলছেন। আবার লুটেরা বলতে ছাড়ছেন না। আবার পালটা বিজেপি-ও রেয়াত করছে না মুখ্যমন্ত্রীকে। তারাও তারস্বরেও চিৎকার করছেন চাল চোর, চাকরি চোর, বালি চোর, কয়লা চোর ইত্যাদি বলে।
এরা কারা! কাদের প্রতিনিধি হয়ে বিধানসভায় এসেছে। বিধায়ক হবার জন্য ন্যূনতম রাজনৈতিক কাণ্ডজ্ঞানও কি থাকতে নেই। তৃণমূল বা বিজেপি’র ছাতার নিচে জায়গা পেলে কি যা খুশি তাই করা যায়। গণতান্ত্রিক কাঠামোর মৌলিক প্রতিষ্ঠানকে এভাবে কলঙ্কিত করা যায়। আসলে রাজনীতি আর নীতি, আদর্শ ও মূল্যবোধের ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে নেই। তৃণমূল, বিজেপি তার ভিতকে সরিয়ে চুরি-দুর্নীতি-অসভ্যতার ভিতের উপর প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছে। বিধানসভা হয়ে উঠছে চোর-জোচ্চোরদের মৃগয়া ক্ষেত্র। দেশ ও জনগণের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে এরা দলের ও নিজের আখের গোছাতে চুরি সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছাতে চায়। তারা জানে দলের হাত মাথায় আছে। নেতা-নেত্রীর অভয়বাণী আছে। সর্বোপরি পুলিশ, তদন্ত সংস্থা আছে সুরক্ষার জন্য ও আড়াল করার জন্য। তাই তাদের কাছে চুরি-দুর্নীতি কোনও অপরাধ নয়। কে কত বড় চোর বা ডাকাত সেটাই জাহির করার বিষয়। বোঝাই যাবে মানুষ সচেতন না হলে গণতন্ত্রের দুঃসময় অনিবার্য। উন্নত ও আধুনিক সভ্যতার যেটুকু আলো বাংলাকে আলোকিত করেছিল সেটা ঘন অন্ধকারে ঢাকা পড়তে বেশি সময় লাগবে না।

মন্তব্যসমূহ :0

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন