Alipurduar

বিজেপি’র অকর্মণ্যতা আর চাপা যাচ্ছে না

রাজ্য জেলা

শম্ভুচরণ নাথ: আলিপুরদুয়ার
 

 অনিন্দ্যসুন্দর জেলা। পাহাড়ি নদী, জঙ্গল— সব মিলিয়ে বরাবরের আকর্ষণীয় আলিপুরদুয়ার। সেই আলিপুরদুয়ারের ৫ বিধানসভা আসনের ৫টিই জিতেছিল বিজেপি। এরমধ্যে আলিপুরদুয়ার কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়ক দলবদলু হয়ে নাম লিখিয়েছেন শাসক দলে। একমাত্র সাংসদ জন বার্লা। তিনিও বিজেপি’র।
পঞ্চায়েত ভোটের মুখে বিজেপি’র বিধায়ক, সাংসদের সাফল্যের খতিয়ান পুরোই সাদা পাতা! এই অভিযোগ ফালাকাটার বাসিন্দা সুরেশ রায় সিংহের।
বিধানসভায় বিরোধী দলের মুখ্য সচেতক মনোজ টিগগা। মাদারিহাটের বাসিন্দা ওমর ফারুক বলছেন আমাদের বিধায়ক মনোজ টিগগার কাজে খুশি হতে পারিনি। উন্নয়নের কাজে ওঁর অবদান শূন্য!
এক কথায় বিধায়কের পড়শিরাই অখুশি বিধায়কের কাজে!
বীরপাড়া-লঙ্কাপাড়া রোড থেকে সিংহানিয়া মোড় হয়ে চা বাগানের ঢোকার রাস্তার অনেকটা অংশ ভাঙা এবড়ো খেবড়ো। উঁচু জায়গার জল এখান দিয়ে বয়ে গিয়ে পথ এখন নালার চেহারা নিয়েছে। স্রেফ দুটো নিকাশি নালা হলেই বেঁচে যেত রাস্তাটা। সেটুকু কাজও হয়নি। অথচ এটাই বিধায়কের জন্মস্থান সিংহানিয়া গ্রাম। পরপর দু’বারের বিধায়ক মনোজ টিগগাকে কেউ বলছেন,‘কুছ ভি নেহি কিয়া।’ আবার কেউ জুড়ে দিচ্ছেন, ‘অউর উম্মিদ ভি নেহি।’
ঘরের ছেলে মনোজের ব্যর্থতায় কপালের ভাঁজ চওড়া হচ্ছে আলিপুরদুয়ারের বিজেপি’র।
সাংসদ জন বার্লাকে নিয়েও বিড়ম্বনা কম কিছু নয় দলের। আলাদা রাজ্যের দাবি তুলে অশান্তি আর উসকানি দেওয়া ছাড়া কী কাজ সাংসদ করেছেন সে হিসাবও খুঁজছেন আলিপুরদুয়ারের কৃষিবলয় ও চা বলয়ের বাসিন্দারা। পঞ্চায়েত ভোটে যথেষ্টই পিছিয়ে বিজেপি, পঞ্চায়েতের সব আসনে প্রার্থী দিয়ে উঠতে পারেনি।
সিআইটিইউ নিয়ন্ত্রিত চা বাগান ইউনিয়নের জেলা সম্পাদক বিকাশ মোহালি বলেন, আলিপুরদুয়ারে চা বাগান ও বনবস্তির বাসিন্দারা তৃণমূলের শাসনে অবহেলিত ও শোষিত হয়েছেন মালিকের দ্বারা। সেই সুযোগ নিয়ে আরএসএস জেলার বিভিন্ন বাগানে শ্রমিকদের ও বনবস্তিবাসিদের ভুল বুঝিয়ে বিজেপি’র দিকে ঝুঁকিয়ে নিয়েছিল। কিন্তু কয়েক বছরেই শ্রমিকদের মোহভঙ্গ ঘটেছে। এর প্রভাব পড়বে পঞ্চায়েত ভোটে। তৃণমূল ও বিজেপি থেকে সরছেন শ্রমিকরা। 
সিপিআই(এম) আলিপুরদুয়ার জেলা সম্পাদক কিশোর দাস বলেন, জেলায় ৬৪টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ৫টি ব্লকে শুধু চা বাগানের পঞ্চায়েত রয়েছে ১৬টি। এ ছাড়াও বেশ কিছু চা বাগান ও বনবস্তি সাধারণ পঞ্চায়েতের মধ্যে জুড়ে রয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই চা বাগান শ্রমিকরা বিজেপি এবং তৃণমূলকে আর বন্ধু মনে করতেই রাজি নয়। দুই ফুলের পতাকা ফিকে হচ্ছে আলিপুরদুয়ারের চা বলয়ে। ফের উড়ছে লাল পতাকা।
পঞ্চায়েত ভোটের কথা মাথায় রেখে চা শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধি না পেরে মুখ্যমন্ত্রী শ্রমিকদের মজুরি দৈনিক ১৮টাকা অ্যাডহক বাড়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন। ভেবেছিলেন এতেই পঞ্চায়েত ভোটে বাজিমাত হবে। কিন্তু বাগান মালিকরা রাজি নন অ্যাডহক মজুরি বৃদ্ধিতে। ওঁরা আদালতে গিয়েছেন। মাঠে মারা গিয়েছে তৃণমূলের ভোট নিজের বাক্সে টানার ছক। স্থায়ী শ্রমিকরা সেই দিনের শেষে হাতে পাচ্ছেন ২৩২ টাকা।
একদিন ভিন রাজ্য থেকে উত্তরে, ডুয়ার্সে এসে চা বাগানে কাজ করতেন শ্রমিকেরা। এখন উলটো ছবি। বাগানে কাজ নেই নতুন প্রজন্মের। চা শ্রমিকদের বস্তি উজার করে শ্রমিকরা ছুটে যাচ্ছেন ভিন রাজ্যে। চা বাগান মানেই এখন রুগ্‌ণতা আর রক্তাল্পতা, চা বাগান মানেই বিনা চিকিৎসায় ধুঁকে ধুঁকে মরে যাওয়া। আর আছে অভাবের তাড়নায় নারী পাচারের ঘটনা।
পঞ্চায়েতের ভোটে লাল ঝান্ডার সংগঠন আর জয়ের সম্ভাবনা দুই-ই বাড়ছে বলছেন, সিপিআই(এম)জেলা সম্পাদক কিশোর দাস।
মাদারিহাট ব্লকের লংকাপাড়া চা বাগান আজও তালাবন্ধ। এই বাগানের কাজ হারানো শ্রমিক আর তাঁদের পরিবারের নতুন প্রজন্ম ও ভোট দিয়ে নতুন পঞ্চায়েত গড়বে। তাঁরা চিনেছেন বিজেপি-কে, চিনেছে তৃণমূলকেও। অভিজ্ঞতা থেকেই তাঁরা বন্ধু খুঁজে নেবেন।
 

Comments :0

Login to leave a comment