শেষ পর্যন্ত তিনিই। একটা গোটা দল, একটা দেশ যাঁর ওপরে নির্ভর করে বিশ্বকাপ খেলতে গেছে। মরণ-বাঁচন ম্যাচে ৬৩ মিনিটে তাঁর ম্যাজিক আর্জেন্টিনাকে প্রাণ ফিরিয়ে দিল। মেসির ম্যাজিক বাজনা বাজিয়ে আসে না। যখন মনে হচ্ছে শান্ত খেলা হচ্ছে, কোথাও কোনো সম্ভাবনার রং নেই, বিপক্ষের পেনাল্টি বক্সে ভিড়ভাট্টা, সেই সময়েই দূর থেকে একটি মাটি ঘেঁষা শট। ওচোয়ার মতো দারুণ গোলরক্ষকও হতবাক হয়ে গেলেন। বিশ্বকাপে টিকে গেল আর্জেন্টিনা।
মেক্সিকোর বিরুদ্ধে এই ম্যাচের ইতিহাসে যদি মেসির নাম লেখা থাকে অচলাবস্থা ভেঙে আলবিসেলেস্তাকে জাগিয়ে দেবার জন্য, তাহলে অবশ্যই লেখা থাকবে এঞ্জো ফার্নান্ডেজের দ্বিতীয় গোলের কথাও। বিপক্ষের রক্ষণকে এক ভাঁজে টলিয়ে দিয়ে তাঁর বাঁক খাওয়ানো শট যেভাবে গোলে ঢুকলো তা মেসির গোলের প্রতিদ্নদ্বী হয়ে থাকলো। চোখ জুড়িয়ে যাওয়া বলতে যা বোঝায়।
গত ম্যাচ থেকে একাধিক প্লেয়ার পরিবর্তন করে মাঠে নেমেছিল আর্জেন্টিনা। খেলার ছকে কোনো বদল প্রথম ৪৫ মিনিট চোখে পড়েনি। বিশ্বকাপে অস্তিত্বের সঙ্কট নিয়ে মাঠে নামলেও আর্জেন্টিনার খেলায় শুরু থেকেই বোঝাপড়ার অভাব ছিল। মেক্সিকোই বরং ছিল অনেক মরিয়া। একসঙ্গে নামা-ওঠা, আর্জোন্টিনার আক্রমণভাগের কেউ বল পেলেই কাড়তে ঝাঁপিয়ে পড়ার তাগিদ ছিল তাদেরই। মাঝমাঠে আর্জেন্টিনাকে থিতু হতেই দেয়নি প্রথমার্ধে। ডি পলের মতো কার্যকরী প্লেয়ারকেও ক্রমাগত বল খোয়াতে দেখা গেছে। আর্জেন্টিনার নতুন দুই উইং ব্যাকের কাছ থেকে প্রথমার্ধে কিছুই পাওয়া যায়নি। বরং তাঁদের দেখে সন্ত্রস্ত মনে হয়েছে। ফলে আর্জেন্টিনার উইং আক্রমণে কোনো ধার ছিল না। ডি মারিয়া চেষ্টা করেছেন কিন্তু মেক্সিকোর সমষ্টিগত প্রতিরোধের সামনে তাঁকেও দুর্বল মনে হয়েছে।
প্রথমার্ধে ভেগার একটি দুরন্ত ফ্রি কিক ততোধিক দক্ষতায় বাঁচান আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক মার্তিনেজ। একেবারে শেষ মূহূর্তে আর্জেন্টিনার একমাত্র সঙ্ঘবদ্ধ আক্রমণটি হয়। লাউতারো মার্তিনেজের পা থেকে কোনোক্রমে বল লাইনের বাইরে পাঠিয়ে কর্নারের বিনিময়ে রেহাই পায় মেক্সিকো।
দ্বিতীয়ার্ধে অবশ্য চেপে ধরে আর্জেন্টিনা। একসঙ্গে অনেকে উঠে বিপক্ষের জমি দখল করে। কিন্তু খুব ধারালো কোনো আক্রমণ তৈরি হয়নি। শুধু টের পাওয়া যাচ্ছিল, ধীরে ধীরে দম হারাচ্ছে মেক্সিকো। আশঙ্কার কালো মেঘ তখনও ছিল আর্জেন্টিনা শিবিরে। ক্রমাগত ফাউল হয়েই চলেছে, খেলার গতিকে ধীর করে দিয়ে। সেই সময়েই, চলে এলো মেসির লগ্ন। তাঁর প্রখর ফুটবল বুদ্ধি, ফুটবলের জ্যামিতি সম্পর্কে বোধ যেন তেমন কিছুই না ঢঙে একটি শট নেওয়া খেলার রং পালটে দিল। যেমন দিয়েছে কত অগুন্তি বার। মারাদোনার মতো এদিন ছিল মেসিরও ২১তম বিশ্বকাপ ম্যাচ। তাঁর সম্মান রেখেছেন উত্তরসুরিরা। এখন সামনে পোল্যান্ড। তবে পরপর ৬টি আন্তর্জাতিক ম্যাচে গোল পাওয়া মেসিকে রুখে দেওয়া আর সহজ হবে না।
Comments :0