Vsva Bharati

শান্তিনিকেতনে শঙ্কায় বাংলাদেশের পড়ুয়ারা

রাজ্য

ওপার বাংলার হিংসা ঘুম কেড়েছে এপার বাংলায়। উদ্বেগ আর উৎকন্ঠায় কাটছে প্রতিটা ক্ষণ। দেশে কি হচ্ছে ? আর কি রক্ত ঝরল ? কবে থামবে এই দমন পীড়ন ? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন ঘরদোর ছেড়ে দূর বিঁভুইয়ে পড়ে থাকা তরতাজারা। তাদের দুশ্চিন্তা কয়েকগুন বাড়িয়েছে যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতা। আপন দেশে রক্তপাত, হিংসা, হামলায় বাংলাদেশী পড়ুয়াদের এমনই বিধ্বস্ততার সাক্ষী হয়েছে শান্তিনিকেতন। পড়ুয়াদের গলায় কাতর আর্তি, ‘অবিলম্বে বন্ধ হোক হিংসা। স্বাভাবিক হোক দেশ।’
কথা ঘোষ। বিশ্বভারতীর বাংলা বিভাগের ছাত্রী। দিন কয়েক হল এসেছেন বাংলাদেশ থেকে। গত দু-তিন দিন ধরে আর সেভাবে যোগাযোগ করতে পারছেন না পরিজনদের সাথে। তবে জেনে ফেলেছেন দেশের হাল। একের পর এক প্রাণহানির ঘটনা, হিংসার পরিণতিতে দেদার রক্তপাত বিচলিত করেছে এই ছাত্রীকে। যোগাযোগ করা হলে একরাশ উদ্বেগ নিয়েই জানিয়েছেন, ‘‘খুবই আতঙ্কিত। হতাশ। ভীত। মন খারাপ। কি হচ্ছে দেশে সবটা বুঝতে পারছি না। আগামীতে কি হবে তাও জানি না।’’ 
তারই সহপাঠী আবু সাহিদ, আস্তাবুদ্দীনদেরও হাল এক। ইন্টারনেটের মাধ্যমেই দেশ ও পরিজনদের সাথে যোগাযোগে অভ্যস্ত ওপাড় বাংলার এই পড়ুয়ারা। সেই যোগাযোগও হয়েছে বিচ্ছিন্ন। ফলে এক অনভীপ্রেত চঞ্চলতা, চিন্তা ভর করেছে এই তরতাজাদের মনে। কেউ চাইছেন অবিলম্বে বন্ধ হোক এই হিংসা। সরকার দ্রুত দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করুক। কেউ বা সরাসরি আন্দোলনকে সমর্থনও জানিয়েছেন। যেমন সঙ্গীত ভবনের দীপা সাহা কিংবা শ্রাবন্তি সায়ন্তনীদের কথায়, ‘‘এমন পরিস্থিতি মুখে পড়তে হবে পড়তে এসে, স্বপ্নেও ভাবিনি। গত দু-দিন ধরে যোগাযোগ করতে পারছি না বাড়ির সাথে। আন্দোলনকারীদের উপর এমন আঘাত কোনোমতেই সমর্থন যোগ্য নয়। আন্দোলনকে অবশ্যই সমর্থন করি। কারণ এই আন্দোলনের সাথে আমাদের ভবিষ্যত জড়িয়ে আছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আরজি, অবিলম্বে শান্ত করুন পরিস্থিতি।’’
অনেকের কথা বলতে বলতে চোখের দু-কোণ চিকচিক করে উঠেছে। বিশ্বভারতীর পড়ুয়া অমৃতা সরকার, দীপা সাহাদের গলায় উঠে এসেছে, ‘‘কত মায়ের কোল খালি হল। কত দিদি তাদের ভাইকে হারালো। এমন দিন দেখতে হবে  ভাবিনি। মন ব্যাকুল হয়ে উঠেছে। চাই না আর একফোঁটাও রক্ত ঝরুক।’’
ছাত্রদের আন্দোলনে বিপর্যন্ত বাংলাদেশ। কোটা বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে ঘিরে সংঘর্ষে একদিনেই নিহত হয়েছেন ১৯ জন। এনিয়ে আন্দোলেনে মোট ৩২ জন প্রাণ হারিয়েছেন বলে জানা গেছে। নিহতদের অধিকাংশেরই বয়স তিরিশের নীচে। নিহতদের মধ্যে আছেন সাংবাদিকও। আহতের সংখ্যা দু'শো ছাড়িয়ে গেছে ইতিমধ্যেই। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছাত্র আন্দোলনের ওপর পুলিশ এবং নিরাপত্তা বাহিনীর দমপীড়নের তীব্র নিন্দার ঝড় উঠেছে নানামহল থেকে। যার আঁচ মিলেছে এপার বাংলার শান্তিনিকেতনেও।

Comments :0

Login to leave a comment