Editorial

সেই ধর্মের কুয়োতেই বিজেপি’র ঠাঁই

সম্পাদকীয় বিভাগ

হরিয়ানায় ক্ষমতাসীন বিজেপি-র পরাজয় একরকম নিশ্চিত থাকলেও কংগ্রেসের আত্মতুষ্টি এবং দলীয় আভ্যন্তরীণ বিরোধের কারণে হারা ম্যাচ জিতে নিয়েছে মোদীর দল। লোকসভা নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়ে শরিকদের ঘাড়ে চেপে কোনও মতে সরকার গড়লেও বেশ চাপেই ছিল। হরিয়ানা বিধানসভায় জিতে তাদের মনোবল বেশ চাঙ্গা হয়েছে। এখন সামনের মহারাষ্ট্র ও ঝাড়খণ্ডের নির্বাচনে যদি জিততে পারে তাহলে হৃত গৌরব ফিরে পাবে এবং বুক ফুলিয়ে দাপট দেখাতে পারে। কিন্তু গত লোকসভা নির্বাচন যদি নির্ণায়ক হয় তাহলে মহারাষ্ট্র বা ঝাড়খণ্ড কোনও জায়গাতেই বিজেপি-র জেতার কথা নয়। কিন্তু মোদী-শাহরা মনে করছেন হরিয়ানায় যখন তাঁরা বাজিমাত করতে পেরেছেন তাহলে মহারাষ্ট্র-ঝাড়খণ্ডেও তারা জিতবেন। কিন্তু হরিয়ানার পরিস্থিতি আর মহারাষ্ট্র-ঝাড়খণ্ডের পরিস্থিতি যে এক নয় সেটা তারা আন্দাজ করতে পারলেও প্রকাশ্যে বুঝতে দিতে চাইছেন না।
হরিয়ানায় কংগ্রেস একাই লড়াই করেছিল। ইন্ডিয়া মঞ্চের শরিকদের সঙ্গে কোনও সমঝোতা হয়নি। কিন্তু মহারাষ্ট্র ও ঝাড়খণ্ডে বিরোধীরা জোটবদ্ধভাবে লড়াই করছে। তেমনি অভ্যন্তরীণ বিরোধ থাকলে সেটা অনেকটাই সামাল দেওয়া সম্ভব হয়েছে। তাই মোদী-শাহরা মুখে কিছু না বললেও মনে মনে বুঝে গেছেন মহারাষ্ট্রে গদি রক্ষা এবং ঝাড়খণ্ডে ক্ষমতায় ফেরা সহজ নয়। তবে পরাজয় অনিবার্য জেনেও হাল ছাড়ার পাত্র বিজেপি নয়। তাই প্রচারের অ্যাজেন্ডায় কৌশলগত পরিবর্তন করে মানুষ বিভ্রান্ত করে কাজ হাসিলে উঠে পড়ে লেগেছে।
রাজ্য হোক বা কেন্দ্রীয়, যে কোন গণতান্ত্রিক নির্বাচনে প্রধানতম অ্যাজেন্ডা মানুষের জীবন-জীবিকার প্রশ্ন। তাই অর্থনীতিই হয়ে ওঠে মুখ্য। শিল্পে বিনিয়োগ হচ্ছে কিনা, কর্মসংস্থা বাড়ছে কিনা, জিনিসপত্রের দাম স্থিতিশীল থাকছে কিনা, কৃষির ও কৃষকের সঙ্কট কমছে কিনা, মানুষের রোজগার বাড়ছে কিনা ইত্যাদি বিষয়গুলি প্রচারকে ঘিরে থাকে। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে বিজেপি এই বিষয়গুলি পুরোপুরি এড়িয়ে ধর্ম, জাতপাতের ঘৃণা-বিদ্বেষকে জোরালো করে বিভাজনের রাজনীতির ফসল তুলতে চাইছে। মোদী-শাহরা মানুষের সমস্যা যদি নির্বাচনের ইস্যু হয় তাহলে কোনোদিনই তাদের জেতা সম্ভব হবে না। কারণ মানুষের জীবন-জীবিকার স্বার্থে মোদীদের কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার পুরোপুরি ব্যর্থ। মিথ্যা, ভাঁওতা, প্রতারণা করে মানুষের মাথায় ধর্মের বিষ ঢুকিয়ে কাজ হাসিল করার চেষ্টা করছে।
আদিবাসী অধ্যুষিত দেশের সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা রাজ্যগুলির অন্যতম ঝাড়খণ্ড। সেখানে উন্নয়ন ও মানুষের রুজি-রোজগারের কথাই নির্বাচনের প্রধান ইস্যু। অথচ মোদী-শাহরা পড়ে আছেন বাংলাদেশের মুসলিম অনুপ্রবেশকারী নিয়ে। মিথ্যার ভিতের উপর দাঁড়িয়ে অবাস্তবকে প্রতিষ্ঠিত করে আদিবাসী ভোট কবজা করতে চাইছে। বাংলাদেশের মুসলিম যুবকরা এসে যদি ঝাড়খণ্ডের সব আদিবাসী মেয়েদের বিয়ে করে সব জমি দখল করে নেয় তাহলে তো মোদী-শাহর পদত্যাগ করে সন্ন্যাসে যাওয়া উচিত। সীমান্ত সুরক্ষিত রাখার ব্যর্থতার দায় সবার আগে তাদের। তেমনি মহারাষ্ট্রে দলিত, আদিবাসী, ওবিসি ভোট না পেলে তাদের জেতা সম্ভব নয়। তাই বিভাজনের দায় চাপাচ্ছে বিরোধীদের ওপর। আসলে জাতভিত্তিক জনগণনার দাবির বিরোধিতা করতে না পেরে হিন্দু ঐক্যের স্লোগান দিচ্ছে। হিন্দু ছাতার আড়ালে নির্মম আর্থ-সামাজিক বৈষম্যকে টিকিয়ে রাখতে চায়।
 

Comments :0

Login to leave a comment