সিপিআই(এম)’র পক্ষ থেকে অনেক আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল আগামী ২২ জানুয়ারি অযোধ্যায় রামমন্দির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি উপস্থিত থাকবেন না। বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ও রামমন্দির কর্তৃপক্ষের তরফে সিতারাম ইয়েচুরিকে অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। এবার রাম মন্দির উদ্বোধনে উপস্থিত না থাকার কথা ঘোষণা করেছে কংগ্রেস। সোনিয়া গান্ধী, মল্লিকা অর্জুন কাড়গে ও অধীর চৌধুরিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কংগ্রেসের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে তিন নেতার কেউই যাবেন না। এর আগে অবশ্য বিহারে জেডিইউ নেতা নীতীশ কুমার এবং আরজেডি’র নেতারাও জানিয়েছেন তাঁরা কেউ অনুষ্ঠানে যোগ দেবে না। ডিএমকে’র পক্ষ থেকে উপস্থিত না থাকার কথা জানানো হয়েছে। সিপিআই’র পক্ষ থেকেও না যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। বেশিরভাগ বিরোধী দলের কাছে আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণপত্র যায়নি। যারা আমন্ত্রণ পত্র পেয়েছে তাঁদের কেউই যাচ্ছেন না। কেউ কেউ সরাসরি বললেও না যাওয়ার ইঙ্গিত স্পষ্ট।
একটি ধর্মীয় মন্দির উদ্বোধনে উপস্থিত না থাকার কথা সকলের আগে নির্দ্বিধায় জানিয়েছে সিপিআই(এম)। দলের সুনির্দিষ্ট অবস্থান হলো ধর্মের সঙ্গে রাজনীতির কোনোরকম সম্পর্ক থাকা উচিত নয়। ধর্ম প্রত্যেক মানুষের ব্যক্তিগত বিশ্বাস ও আচরণের বিষয়। মানুষ তাঁর ব্যক্তিগত বিশ্বাস অনুসারে নিজের মতো করে ধর্মাচরণ করবে। রাষ্ট্র বা রাজনীতির তাতে নাকগলানো বা হস্তক্ষেপ করার অধিকার নেই। তাছাড়া ভারত সাংবিধানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক সাধারণতন্ত্র। সুতরাং ভারত রাষ্ট্রের মধ্যে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলির দলগতভাবে ধর্মের সঙ্গে প্রত্যক্ষ সংস্রব রাখা উচিত নয়। কিন্তু দেশের বর্তমান শাসক দল বিজেপি কোনও ধর্মনিরপেক্ষ দল নয়। হিন্দুত্বের মৌলিক আদর্শের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা আরএসএস’র রাজনৈতিক শাখা বিজেপি। ভারতের বুকে হিন্দু রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাই তাদের একমাত্র লক্ষ্য। তাই বিজেপি’র রাজনীতির অন্যতম অ্যাজেন্ডা ধর্ম উন্মাদনা ও ধর্মীয় জিগির তুলে ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজন সৃষ্টি করা। ধর্মের ভিত্তিতে মেরুকরণ করে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতেই তারা ধর্মকে দলের রাজনৈতিক প্রচারে প্রধান অঙ্গ করে তুলেছে। অযোধ্যায় রামমন্দির তৈরির এবং তার উদ্বোধন যতটা ধর্মীয় তার থেকে অনেক বেশি রাজনৈতিক প্রকল্প। আরএসএস-বিজেপি’র রাজনৈতিক স্বার্থে এই গোটা প্রকল্পটি তৈরি হয়েছে এবং পরিচালিত হচ্ছে। এটা যদি ধর্মীয় প্রকল্প হতো তাহলে একটা অর্ধনির্মিত মন্দিরের উদ্বোধন হতো না এবং তাকে ঘিরে দেশময় উন্মাদনা ও জিগির তোলার ব্যবস্থা হতো না। তিনতলা বিশিষ্ট মন্দিরের সবে একতলার কাজ শেষ হয়েছে। বাকি দোতলা ও তিনতলার কাজ শেষ হতে আর দু’বছর লাগবে। আগামী লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি’র রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতেই তড়িঘড়ি মন্দির উদ্বোধনে ঝাঁপিয়ে পড়েছে আরএসএস—বিজেপি। আর প্রাণ প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কোনও ব্রাহ্মণ সাধু সন্ন্যাসীর বদলে ওবিসি প্রধানমন্ত্রীকে।
সম্ভবত সেই কারণে দেশের চার শঙ্করাচার্যে সকলেই মন্দিরে প্রাণ প্রতিষ্ঠার অনু্ষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে অস্বীকার করেছেন। তাঁদের মতে মন্দির কর্তৃপক্ষ সনাতন হিন্দু ধর্মের রীতিনীতি-আচার লঙ্ঘন করেছে। এমন এক অনুষ্ঠানে তাদের পক্ষে হাজির থাকা সম্ভব নয় বলে স্পষ্ট করে দিয়েছেন। কয়েক মাস আগে তামিলনাডুর এক মন্ত্রীর সনাতন ধর্ম নিয়ে মন্তব্যে বিজেপি নেতারা রে-রে করে তেড়েফুঁড়ে উঠেছিলেন। এখন শঙ্করাচার্যদের মন্তব্যে রা-কাড়ারও সাহস্য পাচ্ছেন না। শঙ্করাচার্যদের মন্তব্যেও স্পষ্ট আরএসএস-বিজেপি সনাতন ধর্মের অনুশাসন লঙ্ঘন করছে তাদের ভোটের রাজনীতির স্বার্থে।
EDITORIAL
বিজেপি’র ভোট মন্দির
×
Comments :0