COM SUHRID DUTTA COMMEMORATED

কমরেড সুহৃদ দত্তের স্মরণসভা সিঙ্গুরে, ষড়যন্ত্রের জাল ছেঁড়ার ডাক (ভিডিও)

রাজ্য জেলা

শুক্রবার সিঙ্গুরে কমরেড সুহৃদ দত্তের স্মরণসভায় বক্তব্য রাখছেন মহম্মদ সেলিম।

শুভ্রজ্যোতি মজুমদার ও অনন্ত সাঁতরা, সিঙ্গুর

কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে বারবার ষড়যন্ত্র হয়েছে। এ রাজ্যে বামফ্রন্ট সরকারের বিরুদ্ধে বারবার ষড়যন্ত্র করেছে শাসক শ্রেণি। তেমনই ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছিলেন কমরেড সুহৃদ দত্ত। যিনি ব্যক্তিজীবনে সুখের হাতছানি ছেড়ে শোষণহীন সমাজ গড়ার লক্ষ্যে নিজেকে শামিল করেছিলেন। তাঁর স্মরণসভায় কেবল শোক নয়, শপথ নিতে হবে ষড়যন্ত্রের জাল ছিঁড়ে মেহনতি, গরিব মানুষের স্বার্থে বাংলায়, দেশে লড়াই জোরদার করার।
শুক্রবার সিঙ্গুরে কমরেড সুহৃদ দত্তের স্মরণসভায় এই আহ্বান জানিয়েছেন সিপিআই(এম) নেতৃবৃন্দ। পার্টির প্রবীণ নেতা, হুগলী জেলা কমিটির প্রাক্তন সদস্য কমরেড সুহৃদ দত্তের স্মরণসভা হয়েছে সিঙ্গুর বীণাপানি ক্লাব ময়দানে। বক্তব্য রাখেন পার্টির পলিট ব্যুরো সদস্য ও রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শ্রীদীপ ভট্টাচার্য, রাজ্য কমিটির সদস্য সৃজন ভট্টাচার্য। সভাপতিত্ব করেন পার্টির রাজ্য নেতৃত্ব ও হুগলী জেলা সম্পাদক দেবব্রত ঘোষ।
বক্তব্য রাখেন জেলা সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য সদস্য সৌমিত্র চ্যাটার্জী, আব্দুল হাই, প্রদীপ সাহা, রামকৃষ্ণ রায়চৌধুরী, শ্রুতিনাথ প্রহরাজ, ভাস্কর রায়, জগন্নাথ ঘোষ, তীর্থঙ্কর রায়, পুর্ণেন্দু চ্যাটার্জি, স্নেহাশীষ রায়, মিন্টু বেরা প্রমুখ।


সেলিম বলেন, ‘‘সিঙ্গুরে গাড়ি কারখানার প্রকল্পে তিন চতুর্থাংশ মানুষ ক্ষতিপূরণ নিয়েছিলেন, প্রকল্পে সমর্থন দিয়েছিলেন। তা সম্ভব হয়েছিল কমিউনিস্ট পার্টি, কৃষকসভা এবং সুহৃদ দত্তের মতো নেতৃবৃন্দের জন্য। নিজের জন্য তিনি কিছু চাননি। চেয়েছিলেন মানুষের জন্য। সেই কারণেই ষড়যন্ত্রের শিকার হতে হয়েছিল তাঁকে।’’
সেলিম বলেন, ‘‘সুহৃদ দত্তের মতো সৎ মানুষদের রাজনীতির পরিবৃত্ত থেকেই সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তার জায়গা নিচ্ছে মহাজন আর দুর্জনরা। দুর্নীতি-দুষ্কৃতী জোট লুট চালাচ্ছে। মানুষের টাকা লুট করছে। সেই জন্যই তৃণমূলের নেতা মন্ত্রীদের বাড়ি, খাটের তলা থেকে নোটের স্তূপ বেরচ্ছে।’’ 
কেন্দ্রীয় সংস্থা এবং বিজেপি’র কড়া সমালোচনা করেন সেলিম। তিনি বলেন, ‘‘বলা হয়েছিল নবান্নের দুর্নীতি ধরতে ছাপ্পান্ন ইঞ্চি দরকার। ছাপ্পান্ন ইঞ্চির শাসনে নবান্নের দুর্নীতি আরও বেড়েছে। ইডি-সিবিআই’র ওপর ভরসা করেছেন অনেকে। কলকাতা হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছে লিপ্স অ্যান্ড বাউন্ডসের কর্তা বন্দি হয়ে হাসপাতালে ভর্তি সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের গলার স্বরের নমুনা নিতে হবে। যে সিবিআই সুহৃদ দত্তের শরীরে বিষ ঢোকাতে পারে, হাইকোর্টের নির্দেশের পরও কন্ঠস্বরের নমুনা নিতে পারে না। প্রধানমন্ত্রী আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাজ কী কেবল ভাষণ দেওয়া?’’ 
তৃণমূল সাংসদ এবং মুখ্যমন্ত্রী ভাইপো অভিষেক ব্যানার্জি লিপ্স অ্যান্ড বাউন্ডস সংস্থার সিইও। এই সংস্থায় নিয়োগ দুর্নীতির টাকা জমা পড়ার অভিযোগ রয়েছে। ভদ্রের ফোনে কথোপকথনে সেই সূত্র রয়েছে বলে দাবি কেন্দ্রীয় তদন্তকারীদের। প্রমাণ পেশের জন্য গলার স্বরের নমুনা পরীক্ষার কথা। 
এই প্রসঙ্গেই সেলিম বলেন, ‘‘কয়লা দুর্নীতির চার্জশিট থেকে কেন বাদ যায় ভাইপোর নাম? কেন শিক্ষক নিয়োগ দু্র্নীতিতে আজও দোষীরা শাস্তি পেল না?’’ তিনি বলেন, ‘‘বিভিন্ন সময়ে দেখা যাচ্ছে তল্লাশি করছে ইডি-সিবিআই। দোষীদের শাস্তি হচ্ছে না। লুটের জন্যই স্লোগান তোলা হয়েছিল লাল হটানোর।’’ 
শ্রীদীপ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ কৃষির বিকাশের ভিত্তিতেই শিল্প গড়ার প্রয়োজন ছিল রাজ্যে। বামফ্রন্ট সরকার তার উদ্যোগ নিয়েছিল। প্রতিক্রিয়ার শক্তি কত নিচে নামতে পারে তার উদাহরণ সুহৃদ দত্তের বিরুদ্ধে মামলা তার উদাহরণ। যিনি সারাজীবন মানুষের জন্য কাজ করলেন তাঁকেই জঘন্য মামলায় বন্দি করা হলো। নির্যাতন হলো তিহার জেলে। তাঁর শরীরে পলিগ্রাফ টেস্টের নামে ঢুকিয়ে দেওয়া হলো বিষাক্ত রাসায়নিক। সারা জীবন সেই যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়েছে তাঁকে। ’’


ব্রিটিশ শাসনের সময় থেকে কমিউনিস্ট বিরোধী ষড়যন্ত্রের উল্লেখ করেন ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘‘ষড়যন্ত্রের মোকাবিলা করেই শ্রমজীবীর পক্ষে, ছাত্র-যুব, মহিলাদের পক্ষে লড়াই করেছে কমিউনিস্টরা। কমরেড সুহৃদ দত্তের স্মরণসভায় সেই লড়াই জারি রাখাই আমাদের শপথ।’’    
 

Comments :0

Login to leave a comment