পশ্চিমবঙ্গে নতুন সরকার তৈরি হওয়ার পরেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বলেছিলেন, বামফ্রন্ট সরকারের সময়কালের ৩৪ বছরের দুর্নীতির তদন্ত হবে। শাস্তি দেওয়া হবে বামফ্রন্ট সরকারের দোষীদের।
সরকার গঠনের ৬মাস পরে এই লক্ষ্যে সরকার বিশেষ অডিট টিমও তৈরি করেছিল দপ্তরে দপ্তরে। মুখ্যমন্ত্রী হুমকি দিয়েছিলেন, অডিটে ত্রুটি ধরা পড়লেই সিআইডি তদন্ত করানো হবে। জেলে পাঠানো হবে বামফ্রন্টের প্রাক্তন মন্ত্রীদের। দু’বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরে জানা যায়, উল্লেখযোগ্য কোনও ত্রুটিই খুঁজে পাওয়া যায়নি। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সেই বিশেষ অডিটের কাজ। অডিটের নামে অতীতের দুর্নীতি খোঁজায় মনোযোগ দিলেও বর্তমান দুর্নীতিরোধে সরকারের কোনও উদ্যোগ নেই। সরকার ও প্রশাসনে দুর্নীতিরোধে ২০০৭ সালে বামফ্রন্ট সরকার পশ্চিমবঙ্গে লোকায়ুক্ত গঠন করেছিল। তখন লোকায়ুক্তের আওতায় মুখ্যমন্ত্রীও ছিলেন। অর্থাৎ দুর্নীতির অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে করা যেত লোকায়ুক্তে। মমতা ব্যানার্জি ক্ষমতায় থেকে তা বদলে দিয়েছেন। তিনি ২০১৮-তে যে আইন করেছেন তাতে, ‘পাবলিক অর্ডার’ বা জনশৃঙ্খলার সঙ্গে সম্পর্কিত কোনও বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করা যায় না। এমনকি অন্য বিষয়েও মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত করতে হলে বিধানসভার দুই তৃতীয়াংশ সদস্যের সম্মতি নিতে হবে। দুর্নীতির তদন্তে লোকায়ুক্তের বিন্দুমাত্র গুরুত্ব রাখেননি মমতা ব্যানার্জি। সমালোচকদের কথায়,‘‘পাঁঠার অনুমতি নিয়ে কালীপুজো করতে হলে সেই পুজো আর কোনোদিন হবে না।’’
মমতা ব্যানার্জি বিধানসভায় কী বলেছিলেন? ‘‘২০১৩ সালের কেন্দ্রীয় লোকপাল আইন কিংবা ২০০৩ সালের এ’ রাজ্যের লোকায়ুক্ত আইন টোটো মেনে নিতে যাবো কেন? আমি টোটো পার্টি নই। আমাদের নিজস্ব মতামত আছে। সেই অনুযায়ী আমরা আইন সংশোধন করে নিচ্ছি। কাল আপনাদের মেজরিটি এলে (বিধানসভায়) তখন আপনারা আইন সংশোধন করে নেবেন।’’
এই ‘বিজেপি-সুলভ ঔদ্ধত্য’ মমতা ব্যানার্জিই দেখিয়েছিলেন।
পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে সামগ্রিকভাবে দুর্নীতির অভিযোগ বরাবরই কম ছিল। স্বাধীনতার পরে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ বহু বিপজ্জনক রাজনীতির মুখোমুখি হয়েছেন। বিচ্ছিন্নতাবাদ, স্বৈরতন্ত্র, আধা-ফ্যাসিবাদী সন্ত্রাস, গণতন্ত্রের ওপরে আক্রমণ, নানা বিপদে রাজনৈতিক শক্তিকে জড়িত থাকতে দেখা গেছে। কিন্তু বড় মাপের অর্থনৈতিক কেলেঙ্কারির ঘটনা কমই ঘটেছে। শুধু রাজনৈতিক নেতা নয়, এমনকি পুলিশ ও সিভিল প্রশাসনের পদস্থ অফিসারদের বিরুদ্ধেও অন্য রাজ্যের তুলনায় আর্থিক কেলেঙ্কারিতে যুক্ত থাকার অভিযোগ ছিল কম। কিন্তু পরিস্থিতিতে বড় রকমের বাঁক দেখা গেল পশ্চিমবঙ্গে দীর্ঘ সাড়ে তিন দশক পরে সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে। নতুন সরকারের নীতি এবং বাস্তব আচরণের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা মন্ত্রীরা জড়িয়ে পড়েছেন পাহাড়প্রমাণ দুর্নীতিতে। বামফ্রন্টের ৩৪ বছরের কথা বাদ দিলেও, স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলার সমগ্র ইতিহাসে কখনো এমন দুর্নীতির নজির মেলেনি।
Corruption Left
বামপন্থীদের ছোঁয়া যায়নি, মোদী পারেননি, মমতাও না!
×
Comments :0