এটা ২০১৮ নয়। এটা ২০২৩। দিকে দিকে তৃণমূলের দুষ্কৃতী রাজের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ চলছে। সেই প্রতিরোধ ভেঙে তৃণমূলকে সাহায্য করতে নেমেছে পুলিশ। ক্ষোভ বাড়ছে মানুষের। পুলিশকে যদি কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়, তারজন্য দায়ী থাকবেন একমাত্র জেলা শাসক এবং পুলিশ সুপাররা।
পঞ্চায়েত নির্বাচন পর্বে তৃণমূল কংগ্রেসের সহায়ক ভূমিকা নেওয়ার দায়ে এই ভাষাতেই পুলিশের সমালোচনা করলেন সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শমীক লাহিড়ী।
রাজ্যের প্রেক্ষিত মনে করিয়ে তিনি বলেছেন, ‘‘পুলিশকে মাথায় রাখতে হবে, তাঁরা শাসক দলের কর্মী নন। তাঁরা সরকারি কর্মী।’’ বৃহস্পতিবার বারুইপুরে সাংবাদিক সম্মেলন করেন সিপিআই(এম) দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক লাহিড়ী। ছিলেন প্রবীণ সিপিআই(এম) নেতা কান্তি গাঙ্গুলি এবং রাজ্য কমিটির সদস্য রাহুল ঘোষ, তুষার ঘোষ এবং রতন বাগচী।
প্রসঙ্গত, তৃণমূল নেতা এবং সাংসদ অভিষেক ব্যানার্জি দাবি করেছেন, তৃণমূল অবাধ নির্বাচনের পক্ষে। তৃণমূল ছাড়া সব মানুষের কাছে কেউ যায়নি। সবাই সমস্ত সরকারি প্রকল্প নিয়মিত পাচ্ছে কিনা, সেই খোঁজ একমাত্র তৃণমূল রেখেছে। কেন্দ্রীয় বাহিনী এলে তৃণমূলের অসুবিধা নেই। তৃণমূল সর্বত্র অবাধ নির্বাচন চায়।
কিন্তু বাস্তব যে আদৌ তা নয়, প্রতিনিয়ত কীভাবে পুলিশ এবং তৃণমূলের যৌথ বাহিনীর আক্রমণ প্রতিহত করে নিজেদের অধিকার রক্ষার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন সাধারণ মানুষ তা তুলে ধরেন শমীক লাহিড়ী।
তিনি বলেন, ‘‘দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা জুড়ে পঞ্চায়েত ব্যবস্থার তিন স্তরেই কার্যত লুটের রাজত্ব চালিয়েছে তৃণমূল। তার বিরুদ্ধে মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। ঐক্যবদ্ধ মানুষের প্রতিরোধে তৃণমূলকে পিছু হঠতে হয়েছে। জায়গায় জায়গায় গণপ্রতিরোধের চাপে তৃণমূলের কোমর ভেঙে গিয়েছে। তাই তৃণমূল এবং পুলিশের আশ্রয় নিয়েছে। এই মুহূর্তে পুলিশ তৃণমূলকে অক্সিজেন জোগাচ্ছে। সেই অক্সিজেন জোগানের পন্থা হিসেবে তৃণমূল বিজেপি বিরোধী প্রার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হামলা চালানো কিংবা মিথ্যা মামলা দেওয়াকে বেছে নেওয়া হয়েছে।’’
লাহিড়ী যোগ করেন, ‘‘তারপরেও যে প্রতিরোধ তৈরি হয়েছে, তা সাধারণ মানুষের সমর্থন ছাড়া সম্ভব ছিল না। এর থেকেই স্পষ্ট, পঞ্চায়েত নির্বাচনে খুবই ভালো ফলাফল হতে চলেছে বামপন্থীদের। মানুষ ভোট দিতে পারলেই তৃণমূল বিজেপির বিদায় নিশ্চিত। সেই আশঙ্কা থেকেই জায়গায় জায়গায় সন্ত্রাস তৈরির চেষ্টা করছে তৃণমূল।’’
অপর একটি প্রশ্নের উত্তরে লাহিড়ী জানান, ‘‘লুটের পঞ্চায়েত থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে গিয়েছেন গ্রাম বাংলার মানুষ। জ্যোতি বসুর নেতৃত্বে পঞ্চায়েতি ব্যবস্থা শুরুই হয়েছিল গ্রামের সাধারণ মানুষের হাতে প্রশাসনিক ক্ষমতা তুলে দেওয়ার জন্য। মমতা ব্যানার্জি সেই ব্যবস্থা ধ্বংস করেছেন। তিনি সাধারণ মানুষের হাত থেকে পঞ্চায়েতকে কেড়ে নিয়ে লুটেরাদের হাতে তুলে দিয়েছেন। এই অবস্থা বদলের জন্যই স্লোগান উঠেছে, লুটেরাদের হাত থেকে পঞ্চায়েত উদ্ধার করো, মানুষের হাতে পঞ্চায়েত তুলে দাও।’’
পঞ্চায়েত প্রস্ততি সম্পর্কিত একটি প্রশ্নের উত্তরে শমীক লাহিড়ী বলেন, ‘‘গ্রাম বাংলার মানুষ প্রতিবাদ, প্রতিরোধের মেজাজে রয়েছেন। বামপন্থীদের তরফে জেলায় জেলায় আহ্বান জানানো হয়েছে, ঐক্যবদ্ধ ভাবে জোট বেঁধে ভোট দিতে যান। ভোটদানে বাধা এলে ঐক্যবদ্ধ ভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলুন।’’
প্রসঙ্গত, চলতি পঞ্চায়েত নির্বাচনে বাম এবং কংগ্রেস গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে ৫০ হাজারের কাছে আসনে লড়াই করছে। আইএসএফ এবং বাম-কংগ্রেস সমর্থিত নির্দল প্রার্থীদের ধরলে সেই সংখ্যা আরও ১০ হাজার মতো বৃদ্ধি পাবে। অপরদিকে গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে বিজেপি ৩৮ হাজার মনোনয়ন জমা দিয়েছে। এর থেকেই স্পষ্ট, গ্রাম বাংলার বিস্তীর্ণ এলাকায় তৃণমূলের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে উঠে এসেছেন তৃণমূল বিজেপি বিরোধী শক্তিগুলি। সেই আশঙ্কা থেকেই শাসকের হামলার মূল নিশানায় উঠে এসেছেন বাম-কংগ্রেস-আইএসএফ প্রার্থীরা।
এদিনই মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জে সিপিআই(এম) প্রার্থীর উপর হামলা চালায় তৃণমূল। আহত ওই প্রার্থীকে জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। হাসপাতালে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন সিপিআই(এম)’র পলিটব্যুরো সদস্য রামচন্দ্র ডোম, সিপিআই(এম)’র মুর্শিদাবাদ জেলা কমিটির সম্পাদক জামির মোল্লা সহ নেতৃবৃন্দ।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিন ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই মুর্শিদাবাদে তৃণমূলে ভাঙন দেখা দিয়েছে। গ্রাম পঞ্চয়েত স্তরে ৯০ শতাংশের বেশি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বাম এবং কংগ্রেস প্রার্থীরা। পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদ স্তরে প্রতিদ্বন্দিতার হার ১০০ শতাংশ। মনোনয়ন জমা দেওয়া আটকাতে রানিনগর এবং ডোমকলে ব্লক অফিসের সামনে সশস্ত্র জমায়েত করে তৃণমূল। গণ প্রতিরোধ করে সেই জমায়েত সরিয়ে মনোনয়ন জমা দেন বাম এবং কংগ্রেস কর্মী সমর্থকরা।
অপরদিকে পরাজয়ের আশঙ্কায় মঙ্গলবার রাতে দক্ষিণ ২৪ পরগণার কুলপির দক্ষিণ গাজীপুর পঞ্চায়েতের বিদায়ী তৃণমূলী প্রধানের নেতৃত্বে হামলা চালানো হয়। ২৬টির বেশি বাড়ি ভাঙচুর এবং লুট হয়। সেই হামলায় গুরুতর জখম হন বছর ২৮-এর কংগ্রেস নেতা আলফাজুদ্দিন হালদার। বৃহস্পতিবার তিনি প্রাণ হারান। আরও বেশ কয়েকজন কংগ্রেস সমর্থক গুরুতর জখম অবস্থায় চিকিৎসাধীন।
সিপিআই(এম) নেতৃবৃন্দ বলেছেন, অত্যাচারের জবাব ভোটের বাক্সেই দেবেন জনতা।
Comments :0