Purulia School

সাত বছরেও চালু হয়নি, স্কুল ভবন মদ্যপদের দখলে

জেলা

দেয়ালে লেখা দেখে বোঝা যাবে ওটা একটা স্কুল। কিন্তু সেখানে পড়াশোনা করার জন্য কোন পড়ুয়া আসে না। শিক্ষকও আসেন না পড়াশোনা করানোর জন্য। অবশ্য বেলা ডুবতে না ডুবতেই সেখানে অন্য রকমের পড়ুয়ারা আসেন। সেখানে অবশ্য শিক্ষকের দরকার হয় না। পড়ুয়ারা আসেন মদ খেতে। হাতে মদের বোতল, জলের বোতল, গ্লাস নিয়ে চলে যান বিভিন্ন ক্লাস ঘরে। বসে যায় মদের আসর। বিদ্যালয়ের প্রত্যেকটা ঘরেই পাওয়া যাবে বিভিন্ন মদের বোতল আর মদের গ্লাস। বিভিন্ন এলাকা থেকে মদের নেশায় ছুটে আসে যুবকরা। বছরের পর বছর এভাবেই চলছে। সাত বছরে বিদ্যালয় চালু না হলেও মদের বার চালু হয়ে গেছে। অথচ গ্রামের মেয়েদের কয়েক কিলোমিটার পথ পেরিয়ে অন্যত্র স্কুলে যেতে হয়। পুরুলিয়ার জয়পুর ব্লকের ডিমডিহা গার্লস জুনিয়র হাই স্কুল কোনোদিন চালুই হলো না। অথচ এলাকার মেয়েদের পড়াশোনা করানোর জন্যই স্বেচ্ছায় মানুষ জমি দান করেছিলেন। আজ তাদের প্রত্যেকের গলায় হতাশা ও আক্ষেপ। মেয়েদের শিক্ষার জন্য স্কুল। সেই জন্য ২০১৩ সালে গ্রামের ৩ জন সহৃদয় ব্যক্তির কাছ থেকে ৫০ ডেসিমিল জমি নেওয়া হয়েছিল। সেই জমিতে ১৬ লক্ষ টাকা দিয়ে ২০১৬-১৭ সালে স্কুল ভবন নির্মাণ করা হয়। নাম দেওয়া হয় ডিমডিহা গার্লস জুনিয়ার হাইস্কুল। তারপরে ২০২১-২২সালে আরো ৫লক্ষ টাকা ব্যয় করে ডিপ টিউবেল খনন করা হয়। উদ্যোগে সাধুবাদ জানিয়েছিলেন অনেকেই। স্কুলের রাস্তা ছিল না। সেই রাস্তার জন্য জমি দান করেছিলেন গ্রামের মানুষই। অথচ সেই স্কূল আজ পর্যন্ত চালুই হয়নি। গ্রামবাসী নিরঞ্জন মাহাতো জানিয়েছেন, ‘‘এক জন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক এই স্কুলের জন্য নিয়োগ হলেও তিনি কোনোদিন এই স্কূলে পা দেননি। গ্রামের প্রাইমারি স্কুলে কয়েকদিনের জন্য চালু হয়েছিল তারপর বন্ধ হয়ে যায়। তার দাবি স্কুল ভবন চলে গেছে মদ্যপদের দখলে। দিনের বেলায় এলাকার গরু, ছাগলের আশ্রয়স্থল হয়ে যায়। আর সন্ধ্যা হলে এই স্কুল ভবন হয়ে যায় মদের বার। সন্ধ্যা ৭টার পর এই স্কূলে গ্রামের যুবকদের সাথে সাথে অন্যান্য জায়গার যুবকরা এসে মদ্যপান করে। পুলিশ প্রশাসন ও কিছুই দেখেনা।’’
বছরের পর বছর এই ভাবেই চলে আসছে জয়পুর থানার ডিমডিহা গ্রামের ডিমডিহা গার্লস জুনিয়ার হাইস্কুল ভবনে। জয়পুর থেকে পুন্দাগ যাওয়ার রাস্তায় পাশেই এই স্কুল। স্কুল বিল্ডিংয়ে গেলে বোঝাই যাবে না এটা একটা স্কুল না বার। ক্লাসরুম রয়েছে, রয়েছে ব্ল্যাকবোর্ড তারই নিচে রয়েছে মদের বোতল। গোটা স্কুল বিল্ডিংয়ে বইয়ের দেখা না গেলেও দেখা যাবে সারি সারি মদের বোতল। স্কুল ভবনের পেছনে মদের বোতলের লাইব্রেরী করে রেখেছে দুষ্কৃতীরা। গ্রামবাসীদের বক্তব্যে গ্রামে যাদের ওপর দায়িত্ব রয়েছে অপরাধ সংগঠিত হলে স্থানীয় থানায় জানানোর সেই সিভিক ভলান্টিয়ার্সরাও এই মদের আসরে অংশগ্রহণ করে। 
যারা মহৎ কাজের জন্য জমিদান দান করে ছিলেন তারা খানিকটা হতাশ। জমি দাতা কনিলাল মাহাতোর গলাতেও আক্ষেপের সুর। সরকারের ভূমিকাতেও চরম হতাশ তিনি। সরকার স্কুলটি চালু করুক এটাই তার প্রত্যাশা। স্কুলটি এখন যেভাবে রয়েছে সেটা দেখে ব্যথিত মনে বলে ওঠেন মাঝে মাঝে মনে হয় কিসের জন্য জমি দেওয়া হয়েছিল আর কি হয়ে গেল। জেলা শিক্ষাদপ্তরের কাছে এই স্কুল নিয়ে কোনো তথ্য নেই। জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক ( মাধ্যমিক ) মহুয়া বসাক জানিয়েছেন কয়েকদিন আগে তিনি দায়িত্ব নিয়েছেন। প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন খোঁজ নিয়ে দেখবেন।

Comments :0

Login to leave a comment