EDITORIAL

পুনর্মুষিক ভবঃ

সম্পাদকীয় বিভাগ

প্রধানমন্ত্রী হবার স্বপ্ন দেখছিলেন মমতা ব্যানার্জি। আর সেই স্বপ্নকে ঘিরে তৃণমূলে উন্মাদনার বানও ডেকেছিল। গত বিধানসভা নির্বাচনে নির্বাচনী প্রচারে এটা হয়ে উঠেছিল অন্যতম প্রধান ইস্যু। তৃণমূলের সিকি, আধুলি থেকে শুরু করে সব নেতারাই নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে মমতা ব্যানার্জিকে প্রধানমন্ত্রী করার জন্য তৃণমূলকে বেশি ভোটে ও বেশি আসনে জয়ী করার ডাক দিয়েছিলেন। রাজ্যের ভোটে কেউ প্রধানমন্ত্রী হয় না ঠিক, কিন্তু তৃণমূল এই বার্তা দিতে চেয়েছিল দেশকে নেতৃত্ব দেবার পক্ষে মমতা ব্যানার্জির দক্ষতা, যোগ্যতা ও জনপ্রিয়তা আছে। ভোটে বিরাট সাফল্য এলে সর্বভারতীয় বিরোধী রাজনীতিতে নেতৃত্ব দেবার ক্ষেত্রে মমতা ব্যানার্জি অনেকটা এগিয়ে থাকবেন। তৃণমূলের অভ্যন্তরেও বোঝাপড়া হয়ে‍‌ গিয়েছিল ভাই‍‌পোকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী করে মমতা ব্যানার্জি ঝাঁপিয়ে পড়বেন জাতীয় রাজনীতিতে প্রধানমন্ত্রী হবার লক্ষ্যকে সামনে রেখে।


এই বোঝাপড়া থেকেই অন্যরাজ্যে দলের প্রসার ঘটানোর কাজে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। ভাইপোর নেতৃত্বে দলীয় সাংসদদের ভাগ করে দায়িত্ব দেওয়া হয় বিভিন্ন রাজ্যে দল গড়ার। দায়িত্বপ্রাপ্তরা টাকার বস্তা নিয়ে হাজির হয়ে যান চিহ্নিত রাজ্যে। কোনও রা‍‌জ্যে কোনও রাজনৈতিক দলের পক্ষে চট জলদি জনভিত্তি তৈরি করা সম্ভব নয়। তার জন্য আন্দোলন সংগ্রামের ধারাবাহিকতা প্রয়োজন। তৃণমূল সেটা জানে বলে ভিন্ন কৌশল নেয়। তারা শর্টকাটে দল তৈরি এবং ভোটে জেতার পন্থা হিসাবে নগদ মূল্যে অন্য দলের সাংসদ-বিধায়ক ও নেতাদের কেনার ব্যবস্থা করে। ফলে রাতারাতি দল তৈরি হয়ে যায় এবং সংবাদমাধ্যমে জোর প্রচার মেলে। এই কৌশলে তারা ঝাড়খণ্ড, গোয়া, আসাম, ত্রিপুরা, মণিপুর, অরুণাচল, মেঘালয় এমনকি উত্তর প্রদেশে তৃণমূলের প্রসার ঘটানোর চেষ্টা করে। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে কোনও রাজ্য থেকেই তেমন সাড়া মেলেনি। শুরুতে হইচইয়ের ফলে কিছু সাফল্য আসায় ছয় রাজ্যে ৬ শতাংশ ভোট মেলায় ২০১৬ সালে জাতীয় দলের মর্যাদা পায় তৃণমূল। কিন্তু তারপর থেকে সব ভোঁ-ভাঁ হতে শুরু করে। তিন বছর পর ২০১৯ সালে লোকসভা ভোটের ফলাফল সঙ্কটে ফেলে তৃণমূলকে।

 হিসাব মতো তখনই জাতীয় দলের তকমা চলে যাবার কথা। এই মর্মে নির্বাচন কমিশনের চিঠি পেয়ে নতুন করে মরিয়া হয়ে ওঠে তকমা রক্ষায়। ত্রিপুরা, মেঘালয়, গোয়ায় বেপরোয়া হয়ে ওঠে রাজ্য দলের মর্যাদা অর্জনে কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। একে একে সব প্রত্যাশার আলোই নিভতে শুরু করে। এখন কোনোরকমে মাত্র তিন রাজ্যে তৃণমূল রাজ্য দল হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। জাতীয় দল হবার কোনও শর্তই তারা পূরণ করতে পারেনি। ফলে জাতীয় দলে স্বীকৃতি হারিয়ে তৃণমূল এখন রাজ্য দল। তৃণমৃলের সঙ্গে জাতীয় দলের তকমা হারিয়েছে এনসিপি এবং সিপিআই-ও। রাজ্য দল থেকে জাতীয় দলে উন্নীত হয়েছে একমাত্র দল আপ। বর্তমানে জাতীয় দলের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬টি। তার মধ্যে সিপিআই(এম) একমাত্র বামপন্থী দল। প্রধানমন্ত্রী হবার স্বপ্নে বিভোর মমতা টেরই পেলেন না কোন ফাঁকে তাঁর সাধের তৃণমূল জাতীয় দল থেকে রাজ্য দল হয়ে গেছে।
 

Comments :0

Login to leave a comment