EDITORIAL

মানুষের থেকে গোরু দামি

জাতীয়

গোমাতার সন্তানদের রাজত্বে মানুষের থেকে গোরুর মান-মর্যাদা ও মূল্য বেশি হবে তাতে আশ্চর্য হবার কিছু নেই। হিন্দুত্ববাদী গোসন্তানদের গোমাতার প্রতি প্রবল ভালোবাসা ও দায়িত্ববোধের কারণে সরকারি প্রকল্পে মানুষের থেকেও অনেক বেশি গুরুত্ব পায় গোরু। ধরা যাক উত্তর প্রদে‍‌শে গেরুয়া সন্্যা  সী যোগী সরকারের কথা। বিজেপি শাসিত অন্য রাজ্যগুলিতে গোরু কম আছে বা গোরু প্রতি কম এমনটা বলা যাবে না। তবে সর্বত্র তো সাধু সন্ন্যাসীদের মুখ্যমন্ত্রী করা হয়নি। তাই উত্তর প্রদে‍‌শে গোরুর প্রতি সরকারের বাড়তি নজর থাকবেই। অন্য বিজেপি শাসিত রাজ্যের মতো যোগীর রাজ্যে গোহত্যা নিষিদ্ধ। ফলে বয়স্ক, অক্ষম, দুর্বল, অসুস্থ, অপ্রয়োজনীয় ও অকাজের গোরুর সংখ্যা দেশের মধ্যে সর্বাধিক উত্তর প্রদেশে। আগে চাষের কাজে ব্যবহারের অনুপযোগী এবং দুধ দেওয়া বন্ধ করা গোরুদের মাংসের প্রয়োজনে ব্যবহার করা হতো। এই ধরনের গোরু থেকে কোনও রোজগার না হওয়ায় কৃষকের বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক একটি গোরুর ভরণপোষণ করতে গিয়ে ঢাকের দায়ে মনসা বিক্রির অবস্থা। তাই নিরুপায় হয়ে তারা এই ধরনের গোরুকে রাস্তায় ছেড়ে দিয়ে বোঝা হালকা করার চেষ্টা করেন। এই গোটা রাজ্যজুড়ে ছ‍‌ড়িয়ে আছে লক্ষ লক্ষ বেওয়ারিশ গোরু। কোনও গোমাতার সন্তান তাদের গোমাতার দায়িত্ব নিতে নারাজ। আবার এই গোরুর পাল পঙ্গপালের মতো খেয়ে-মাড়িয়ে চাষবাসের সর্বনাশ করে চলেছে প্রতিদিন। বাধ্য হয়ে কৃষকদের প্রতিদিন খেত পাহারা দিতে হয় বেওয়ারিশ গোমাতাদের তাড়ানোর জন্য। আবার এই গোমাতারাই প্রতিদিন জাতীয় সড়ক ও রাজ্য সড়কের দখল নিয়ে যান চলাচল বিপর্যস্ত করে দেয়। ক্ষিপ্ত গোরুদের আক্রমণে প্রতিদিন হতাহত মানুষের সংখ্যাও নেহাত কম নয়।
এই অবস্থায় ত্যাজ্য গোমাতাদের দায়িত্ব নিতে হয়েছে যোগী আদিত্য নাথের সরকারকে। রাজ্যের গরিব আশ্রয়হীন অসহায় মানুষদের জন্য বিভিন্ন প্রকল্পের বরাদ্দ কাটছাঁট করে ত্যাজ্য গোরুদের জন্য বাসস্থান নির্মাণ, তাদের দেখভালের জন্য কর্মী নিয়োগ এবং তাদের ভরণপোষণের জন্য বিপুল অর্থ বরাদ্দ হয়। জনগণের দেওয়া করের টাকায় গোটা রাজ্যে তৈরি করা হয়েছে ৬৮৮৯টি গো আবাসন বা গোশালা। সেখানে বসবাস করছে ১৩ লক্ষ ৭০ হাজার গোরু। তাদের দেখভাল ও খাওয়ানো দাওয়ানোর জন্য নি‍‌য়োগ হয়েছে বিপুল সংখ্যক কর্মী। বর্তমানে তাদের দৈনিক ২১০ টাকা করে মজুরি দেওয়া হয়। কিছুদিন পর থেকে তাদের মাসে সাড়ে সাত হাজার টাকা করে বেতন দেওয়া হবে। সরকারের অনুমান এখনও নাকি দু’লক্ষাধিক ছাড়াগোরু রাজ্যজুড়ে প্রতিদিন তাণ্ডব চালিয়ে যাচ্ছে। এদের জন্য বাড়তি গোশালা নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো উত্তর প্রদেশে সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পে ষাটোর্ধ্বে বৃদ্ধ ও বিধবাদের মাসে এক হাজার টাকা দেওয়া হয়। গোরুদের খাবার জন্য দিনে ৩০ টাকা হিসাবে মাসে বরাদ্দ ৯০০ টাকা। সম্প্রতি গোরুদের জন্য বরাদ্দ বেড়ে ৫০ টাকা হিসাবে মাসে ১৫০০ টাকা করা হয়েছে। কিন্তু মানুষদের জন্য বরাদ্দ বাড়েনি। মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্য নাথের বিচারে হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির বাজারে মানুষের থেকে গোরুর ভূমিকা অনেক বেশি। তাই দুঃস্থ, অসহায় বৃদ্ধদের জন্য সরকারি আর্থিক সাহায্য বাড়ে না। বাড়ে গোরুর জন্য অর্থ বরাদ্দ। শুধু খাবারের জন্য অর্থ বাড়ে না, নতুন গোশালা নির্মাণ, কর্মী নিয়োগ, রক্ষণাবেক্ষণ ইত্যাদি খাতেও প্রতিনিয়ত বাড়ছে খরচ।

Comments :0

Login to leave a comment