Malda Panchayet

আম, আদমি, ভাঙনের সঙ্কটে বিপর্যস্ত গ্রাম

রাজ্য জেলা

উৎপল মজুমদার: মালদহ         
 

মুখ্যমন্ত্রী আম পাঠান প্রধানমন্ত্রীকে। কিন্তু আমের খবর সরকার রাখে না।
মালদহের আম বিখ্যাত। মালদহের আম সঙ্কটে। প্রবল গরম। আর সামান্য বৃষ্টিতে চাষের খুব বেশি সুবিধা হয়নি। প্রখর তাপ ও জলের অভাবেই প্রচুর আম ঝরে পড়েছে। উৎপাদকদের মাথায় হাত আমের দাম না পাওয়ায়। পাকা লক্ষ্মণভোগ আম ৫ থেকে ৭ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে জেলার বাজারে। অন্য আমের দামও গতবারের তুলনায় অনেক কম।
আমের উৎপাদকরাই শুধু সঙ্কটে নন। সঙ্কটে রুকসানা খাতুনরাও। ওডিশার বালেশ্বরে আপ করমণ্ডল এক্সপ্রেসে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে মালদহ জেলার ধানগাড়া পঞ্চায়েতের বালুয়াঘাট পূর্বপাড়ার বাসিন্দা বছর ২৩-র মাশরেকুলের। চেন্নাইয়ে কাজের জন্য যাচ্ছিলেন তিনি। দুর্ঘটনার খবর জানাজানি হতেই পরিবারের লোকেদের উৎকণ্ঠা শুরু হয়। পরে মাশরেকুলের মৃত্যুর খবর আসে। বাড়িতে রয়েছেন বাবা, মা, স্ত্রী এবং বছর ৬-য়ের ছেলে ও ১ বছরের মেয়ে। পরিবারের একমাত্র রোজগেরে ছিলেন মাশরেকুল। মাশরেকুল দিনমজুরির কাজ করতেন। কিন্তু যা উপার্জন হতো তা দিয়ে সঠিকভাবে চলত না সংসার। সংসার চালানোর জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন চেন্নাইয়ে কাজ করবেন। 
একদিকে বিহার, আর একদিকে বাংলাদেশ। ভাঙন এই জেলার বড় সঙ্কট। 
নদী ভাঙনে গ্রামগুলি যখন মাথা গোঁজার দুশ্চিন্তায় বিধ্বস্ত, তখন তাঁদের সংসার চালানোর মতো উপার্জনের জন্য নির্ভর করতে হয় ভিন রাজ্যের উপর। 
গত ৪ মে জেলায় ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। তারই মধ্যে মালদহের বিনোদপুরে সাতটারি বাজারে অভিষেক ব্যানার্জির কনভয় আটকে বিক্ষোভ দেখালেন গ্রামবাসীরা। তাঁদের অভিযোগ, তৃণমূলের প্রধান, উপপ্রধান, ব্লক সভাপতি মিলে দেদার টাকা লুট করেছে। রেগার কাজ নেই। বাড়ি হয়নি আবাস যোজনায়। পঞ্চায়েত কিছুতেই নজর দেয় না। 
দুর্নীতি আছে। আর কাছে পরিযায়ীদের যন্ত্রণা। 
জেলায় শ্রমজীবী মানুষের একটা বড় অংশই পরিযায়ী শ্রমিক। জেলায় কাজ না পেয়ে বাইরের রাজ্যে কাজে যেতে বাধ্য হচ্ছে। কোভিডের সময় পরিযায়ী শ্রমিকরা ঘরে ফিরে আসতে বাধ্য হন। ফিরতে গিয়ে ২২জন পরিযায়ী মারা যাওয়ায় ওই পরিবার চরম সঙ্কটে পড়ে। জেলা শাসক সহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে আবেদন করা হলেও কেউ নড়েচড়ে বসেনি। 
পরিযায়ী শ্রমিক ইউনিয়নের জেলা সম্পাদক কামাল সেখ জানালেন, ‘‘জেলার প্রায় সব ব্লক থেকেই পরিযায়ী শ্রমিক বাইরে কাজে যান। তবে মানিকচক, কালিয়াচক ১, ২ ও ৩ ব্লক ছাড়াও ইংরেজবাজার, রতুয়া ১, ২, চাঁচল ১, ২ এবং হরিশচন্দ্রপুর ১, ২ব্লক থেকে ব্যাপক সংখ্যায় পরিযায়ী শ্রমিক ভিন রাজ্যে যাচ্ছেন গ্রামে কাজ না পেয়ে। যাঁরা কাজে যাচ্ছেন তাঁরা নানা সমস্যায় পড়ছেন। এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হচ্ছে। পরিবার সমস্যার মুখে পড়ছে। অথচ কোনও হেলদোল নেই রাজ্য সরকার বা পঞ্চায়েতের। সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন। মানুষ ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে লুটেরাদের হাত থেকে পঞ্চায়েত উদ্ধার করে জনগণের পঞ্চায়েত গড়ে তোলার জন্য।’’ 
২০১৮ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৎকালীন পরিবহণ মন্ত্রী আজকের বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী মালদহে পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূল কর্মীদের আহ্বান জানিয়ে বলেছিলেন বিরোধী শূন্য পঞ্চায়েত গঠন করতে। সেই লক্ষ্যে প্রশাসনের সহায়তায় ভোটকেন্দ্র ও গণনা কেন্দ্রে হাঙ্গামা করেছিল তৃণমূল। 
এবার বাঁচার জন্যই রুখবে মালদহের গ্রাম।

 

Comments :0

Login to leave a comment