EDITORIAL

শাহ কথা

জাতীয় সম্পাদকীয় বিভাগ


দেশে যেখানে যা কিছু সমস্যা তারজন্য যতদোষ নন্দ ঘোষের মতো জওহরলাল নেহরুকে গাল পাড়া আরএসএস-বিজে‍‌পি’র অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গেছে। এমনকি মোদী জমানায় গত সাড়ে নয় বছরেও যাবতীয় ব্যর্থতার দায় নেহরুর ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে হাত ঝেড়ে ফেলতে ব্যস্ত। সংসদে জম্মু-কাশ্মীর সংক্রান্ত দুটি সং‍‌শোধনী বিল পেশ করতে গিয়েও সেই ধান ভাঙতে শিবের গাজন গেয়ে বসলেন অমিত শাহ। বললেন কাশ্মীরের যাবতীয় সমস্যার মূলে নাকি নেহরু’র ভুল। তা গত সাড়ে নয় বছরে মোদী শাহরা কোন ঠিক কাজটা করেছেন? স্পষ্ট করে কিছু জানাতে পারেননি। সাফল্য দাবি অনেক করেছেন বটে কিন্তু সংশ্লিষ্ট অনেক প্রশ্নের উত্তর বা ব্যাখ্যা দিতে পারেননি।
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে জিতে দ্বিতীয় বারের জন্য ক্ষমতায় এসেই সংবিধানের ৩৭০ এবং  ৩৫ (ক) ধারা বাতিল করে কাশ্মীরের মানু‍‌ষের জন্য ঐতিহাসিক বাস্তবতার কারণে সংরক্ষিত বিশেষ অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছিল এর ফলে নাকি কাশ্মীর থেকে সন্ত্রাসবাদ নির্মূল হয়ে যাবে। ‘ভূ-স্বর্গ’ হয়ে উঠবে চির শান্তির এলাকা। পরবর্তীকালে ধারাবাহিকভাবে ভাঙা রেকর্ড বাজানো হয় সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ কমে গেছে। সর্বশেষ বলা হলো আগামী বছর লোকসভা নির্বাচনে মোদী জয়ী হলে নাকি কাশ্মীর থেকে সন্ত্রাসবাদ চিরতরে নির্মূল হয়ে যাবে। অর্থাৎ মোদী-শাহদের ভাষ্য অনুযায়ী কাশ্মীরের  ‘ভা‍‌লো’ সরাসরি জড়িয়ে আছে বিজেপি’র জয়ের উপর। আরও স্পষ্ট করে বললে ভোটে জেতার মূল রসদ যে মেরুকরণ তার অন্যতম প্রধান উৎস কাশ্মীরে স্বৈরাচারী শাসন। কাশ্মীরের জনগণের মৌলিক অধিকারগুলিই কার্যত কেড়ে নেওয়া হয়েছে। তাদের ন্যূনতম গণতান্ত্রিক অধিকার, মানবাধিকার, মত প্রকশের অধিকার, সমালোচনা বা বিরোধিতার অধিকার, এমনকি স্বাধীনভাবে চলাফেরার অধিকারও কেড়ে নেওয়া হয়েছে। কার্যত সেনা শাসনে গৃহবন্দি জীবন কাটছে তাদের গত পাঁচ বছর ধরে।
স্বাধীন-মুক্ত মানুষকে শাসকের পদতলে নতজানু করতে পূর্ণাঙ্গ রাজ্যকে ভেঙে কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল করা হয়েছে। নির্বাচিত রাজ্য সরকারকে পাঠিয়ে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় শাসন। কাশ্মীরের  সমস্ত আইন বিধি বাতিল করে চলছে দিল্লির হুকুমে। মানুষের ক্ষোভ-বিক্ষোভ দম‍‌নে যাবতীয় কুখ্যাত  ও দানবীয় আইনগুলি সর্বাধিক প্রয়োগ হচ্ছে কাশ্মীরের মানুষের উপর। ছাত্র, শিক্ষক, সমাজকর্মী, রাজনৈতিক নেতা, মানবাধিকার কর্মী, সাংবাদিক— কারও রেহাই নেই। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ব্যবহারের আইন ইউএপিএ প্রয়োগ করে সমস্ত বিক্ষুব্ধ প্রতিবাদীকে বছরের পর বছর জেলে আটকে রাখা হচ্ছে।  সন্ত্রাসবাদ দমনের নামে নির্বিচারে অভিযান-তল্লাশি চালিয়ে সাধারণ নিরীহ মানুষের উপর প্রতিদিন অত্যাচার-নিপীড়ন চলছে। গোটা উপত্যকা জুড়ে প্রবল ভীতি ও সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করে রেখেছে সরকারই।
লক্ষণীয়, বার বার বলা হচ্ছে কাশ্মীরে নাকি ফিরেছে, স্বাভাবিক জীবনযাত্রায়‌ ফিরেছে। অথচ সেখানে নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সরকার গঠনের ব্যবস্থা করছে না। জোর করে কেন্দ্রীয় শাসন চালু রেখেছে। নির্বাচনে  জেতা সম্ভব নয় বলে নানা কৌশলে ক্ষমতা দখলের ফন্দি ফিকির খুঁজছে। আসন পুনর্বিনাসের নামে কম জনসংখ্যার জম্মুতে ৬টি আসন বাড়ানো হয়েছে। অথচ বেশি জনসংখ্যার কাশ্মীরে বাড়ানো হয়েছে  মাত্র একটি। কারণ জম্মুতে জয়ের সম্ভাবনা বেশি। তেমনি গভর্নর মনোনীত সদস্য বাড়িয়ে ৫ করা হয়েছে। আদতে সেখানে বিজেপি’র লোককেই পাঠানো হবে। ভোটে না জিতলেও মনোনীত সদস্যের জোরে ক্ষমতা দখলের এ এক কুৎসিত প্রয়াস ছাড়া আর কিছুই নয়।
 

Comments :0

Login to leave a comment