চূড়ান্ত মাত্রার পেশাদারিত্ব নিয়ে কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর জন্য সেনা জওয়ানদের নির্দেশ দিয়েছেন দেশের সেনা প্রধান মনোজ পান্ডে। চূড়ান্ত মাত্রার পেশাদারিত্বটা ঠিক কেমন সেটা জওয়ানরা নিশ্চয়ই জানেন বা বোঝেন। কিন্তু কাশ্মীরের সাধারণ মানুষ যেকোনও ধরনের অভিযানের কথা শুনলেই রীতিমতো আঁতকে ওঠেন। ঘর পোড়া গোরু তো তাই সিঁদুরে মেঘ দেখলেই তাদের ভীত-সন্ত্রস্ত হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। কাশ্মীর উপত্যকায় কখনই বিশেষ করে বিশেষ সাংবিধানিক অধিকার কেড়ে নেবার পর, সেনা অভিযান সুখকর হয় না। জঙ্গি দমনের নামে আসলে দমন-পীড়ন নেমে আসে নিরীহ সাধারণ অধিবাসীদের ওপরই। তাই তারা নতুন করে অত্যাচার প্রহর গুনছেন।
জম্মুর পুঞ্চ-রাজোরি অঞ্চলে সন্ত্রাসবাদী হামলায় মৃত্যু হয়েছে চার জওয়ানের। এই ঘটনায় জম্মু-কাশ্মীরে শান্তি-শৃঙ্খলা ও স্বাভাবিক জীবনযাত্রা প্রতিষ্ঠা করার যে দাবি মোদী-শাহ’রা বারবার করে আসছেন তা যে মিথ্যার বেসাতি তা ফের প্রমাণ হয়ে গেছে। এর দু’দিন বাদেই বারমুলায় খুন হয়ে গেলেন এক প্রাক্তন পুলিশ কর্তা। চার জওয়ান খুনের পরই তল্লাশির নামে ত্রাসের পরিবেশ সৃষ্টি করেছে সেনাবাহিনী। ঘটনাস্থলের চারদিকে বিস্তীর্ণ এলাকা থেকে স্থানীয় লোকজনদের তুলে আনা হয়েছে জিজ্ঞাসাবাদের নাম করে। তারপরই ধরে আনাদের তিন জনের মৃতদেহ পাওয়া যায় সেনা হত্যার কাছাকাছি জায়গায়। ধৃতদের দশ জনের চিকিৎসা চলছে হাসপাতালে। অবস্থা গুরুতর। বাকি কয়েক জনের খোঁজ নেই। যাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে আনা হয়েছে তাদের তিন জনের মৃত্যু হলো কীভাবে? গুরুতর জখম অবস্থায় হাসপাতালেই বা তাদের ভর্তি করাতে হলো কেন? পরিবার এবং স্থানীয় অধিবাসীদের অভিযোগ সেনা ছাউনিতে আটকে বেপরোয়া মারধর ও অত্যাচার করে তাদের মেরে ফেলা হয়েছে। যারা মরে যায়নি তাদের হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। গ্রামবাসীরা মনে করেন প্রশাসন এবং নিরাপত্তাবাহিনী কাশ্মীরের সব মানুষকে সন্দেহের চোখে দেখে। তাই কাউকেই সন্ত্রাসবাদী সন্দেহে নির্যাতন চালাতে তারা দ্বিধা করে না। কোনও একটা-দুটো জায়গা থেকে তুলে আনা হয়নি। আশপাশের সব জায়গা থেকেই দু’-একজন করে তুলে আনা হয়েছে। তাদের উপর নির্মম অত্যাচারের ভিডিও ছড়িয়েছে সংবাদমাধ্যমে। সেনা হেপাজতে থাকা মানুষের ছবি বাইরের কারও পক্ষে তোলা সম্ভব নয়। তবে কি সেনাবাহিনীর তরফেই ছবি তুলে বাইরে ছড়ানো হয়েছে ত্রাস সৃষ্টি করার জন্য। জঙ্গি দমন করতে এইভাবে নিরীহ মানুষকে মেরে গোটা উপত্যকাকে কি বার্তা দেওয়া হচ্ছে।
অমিত শাহ’রা স্বাভাবিক কাশ্মীরে যথারীতি ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়েছে, এই অমানবিক বর্বরতার প্রতিবাদে যাতে মানুষ মুখর হতে না পারে তাই বিরোধী নেতাদের গৃহবন্দি করা হয়েছে। মোদী-শাহ’রা কি তাহলে বন্দুকে নলের মুখে গোটা কাশ্মীরকে দাঁড় করিয়ে শ্মশানের শান্তি প্রতিষ্ঠার কথা বলছেন? আর সেনা প্রধান যে চূড়ান্ত পেশাদারিত্বের কথা বলছেন সেটা কি এইভাবে নিরীহ মানুষ ধরে এনে নির্যাতন করা?
মোদী-শাহ’রা যতই সাফল্য দাবি করুন। কাশ্মীরে শান্তি বা স্বস্তি কিছুই নেই। কাটছে সন্ত্রস্ত জীবন। প্রতি মুহূর্তে অত্যাচারের প্রহর গুনতে হয়।একজন সন্ত্রাসবাদীকে ধরতে গিয়ে হাজার হাজার নিরীহ মানুষের জীবন দুর্বিষহ করা হচ্ছে। মানুষের ন্যূনতম অধিকার বলতে কিছুই নেই। বন্দিশালায় কাটছে যন্ত্রণাদগ্ধ অনিশ্চিত জীবন।
EDITORIAL KASHMIR
এ কেমন শান্তি?
×
Comments :0