Editorial

মূল্যবৃদ্ধি তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে মোদীকে

সম্পাদকীয় বিভাগ

ধর্ম আর জাতপাতের গোলোক ধাঁধায় মানুষকে নজরবন্দি করে ভোটের ফসল তুলতে মোদী-শাহ মগ্ন তখন জাতীয় পরিসংখ্যান সংস্থা তাদের রিপোর্ট প্রকাশ করে জানিয়ে দিয়েছে অক্টোবর মাসে মূল্যবৃদ্ধির হার গত ১৪ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ হয়ে গেছে। অর্থাৎ বছর আগস্ট মাসে যে হার ছিল ৬-৮ শতাংশ এবছর অক্টোবরে সেটা হয়েছে ৬.২ শতাংশ। মোদী জমানায় উচ্চ হারে মূল্যবৃদ্ধি স্থায়ী ব্যবস্থা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আজকের ভারতে এটাই নির্মম বাস্তবতা যে উচ্চ মূল্যবৃদ্ধি থেকে দেশের জনগণের রেহাই নেই। মোদী দায়িত্ব নিয়ে অতি দক্ষতার সঙ্গে সাধারণ মানুষের প্রতিটি প্রয়োজনীয় জিনিস পত্রের দাম উল্কাগতিতে বাড়িয়ে তাদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। আর এই নির্মম বাস্তবতাকে আড়াল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে ধর্মের নামে ঘৃণা-বিদ্বেষ ছড়ানোর এবং জাত বর্ণের বিভাজনের ষড়যন্ত্রে।
২০১৪ সালে মোদী যখন ক্ষমতায় আসেন তখন আলুর দাম ছিল প্রতি কেজি ৮ টাকা। এখন ৩২ টাকা। চাল ছিল ১৪ টাকা, এখন ৫০ টাকা। দুধ ১৪ টাকা থেকে ৬০ টাকা। রান্নার গ্যাস ৪০০ টাকা থেকে ৯৫০ টাকা। পেট্রোল ৬৮ টাকা থেকে ১০৪ টাকা। এভাবে প্রতিটি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বেড়েছে দ্বিগুণ, তিনগুণ, চারগুণ। পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করে সাধারণ মানুষকে সুরাহা দেবার কোনও কার্যকরী পদক্ষেপ সরকার নেয়নি। যেটুকু করেছে সেটা প্রসাধনী মলমের চমক ছাড়া আর কিছুই নয়। আসলে যে শিল্প-বাণিজ্য গোষ্ঠীর স্বার্থের কথা ভেবে মোদী সরকারের নীতি আবর্তিত হয় তাদের মুনাফার ক্ষতি করে জিনিস পত্রের দাম কমাতে উদ্যোগী হয়নি সরকার। সব সময় প্রতিশ্রুতি আর আশার ছলনায় মানুষকে ভুলিয়ে রাখার চেষ্টা করেছে।
মনে রাখতে হবে মূল্যবৃদ্ধির এই প্রবণতায় সর্বাধিক হারে বাড়ে খাদ্যপণ্যের দাম। সাধারণ মানুষের মোট ব্যয় সামর্থ্যের বেশির ভাগই ব্যয় হয় খাদ্যের পেছনে। ফলে মূল্যবৃদ্ধির সবচেয়ে বড় শিকার সাধারণ মানুষ। তেমনি শিক্ষা ক্ষেত্রে ব্যয়, চিকিৎসা ব্যয়ও প্রতিনিয়ত বাড়ছে উচ্চ হারে। ফলে একদিকে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য যেমন মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে তেমনি খাদ্যের পেছনে ব্যয় করার পর অন্য কিছু কেনার মতো অর্থ আর তাদের থাকছে না। মূল্যবৃদ্ধি আঘাত মানুষ তখনই সহ্য করতে পারে যখন বেকারি কমে, কর্মসংস্থান বাড়ে এবং মানুষের আয় ও মজুরি বাড়ে। মোদী জমানায় সেটাও পুরোপুরি বন্ধ। নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি বদলে কাজ নষ্ট হচ্ছে, আয় বৃদ্ধির বদলে কমে যাচ্ছে।
চড়া মূল্যবৃদ্ধির মধ্যে শিল্পে উৎপাদন বৃদ্ধিও তলানিতে। শিল্পে নতুন বিনিয়োগ নেই। বাজারে পণ্যের চাহিদা নেই। অর্থনীতির বৃদ্ধির হারও প্রবল চাপে। সরকারের যাবতীয় পূর্বাভাসকে মিথ্যা প্রমাণ করে দুর্বলতা প্রকট হচ্ছে। মোদীর কর্পোরেট বন্ধু চাতক পাখির মতো উদগ্রীব হয়ে আছে সুদের হার কমার আশায়। কিন্তু মূল্যবৃদ্ধির হার সহনশীলতার মধ্যে না এলে সুদের হার কমানোর উপায় নেই রিজার্ভ ব্যাঙ্কের। ফলে গত ২০ মাস ধরে সুদের হার এক জায়গায় আটকে আছে। গত আগস্ট পর্যন্ত মূল্যবৃদ্ধির হার একটু একটু করে কমছিল। কর্পোরেট মহল আশায় বুক বেঁধে ছিল আগামী বছর থেকে সুদের হার কমবে বলে। কিন্তু এখন হাওয়া যে দিকে গড়াচ্ছে তাতে সুদের হার কমার আশু সম্ভাবনা নেই। যদি জোর করে সুদের হার কমানোর চেষ্টা হয় তাহলে গোদের উপর বিষ ফোঁড়ার মতো মূল্যবৃদ্ধির হার আরও বেড়ে‍‌ যেতে পারে। তাই মহা সঙ্কটে আছেন মোদী-শাহরা। এই অবস্থা ধর্মের নামে জাতের নামে বিভাজনই তাদের একমাত্র আশ্রয়।
 

Comments :0

Login to leave a comment