Editorial

ধর্ষক যখন গেরুয়া

সম্পাদকীয় বিভাগ

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নির্বাচন কেন্দ্র বারাণসীর তিন ধর্ষক বিজেপি কর্মীকে অনেক চেষ্টা করেও আর আড়াল করে রাখতে পারল না যোগী আদিত্যনাথের সরকার। মূলত বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের লাগাতার প্রবল বিক্ষোভ এবং বিরোধী দলগুলির চাঁচাছোলা সমালোচনার জেরে যোগীর পুলিশ বাধ্য হয়েছে প্রায় দু’মাস আড়াল করার পর তিন বিজেপি কর্মীকে গ্রেপ্তার করতে। উত্তর প্রদেশে সঙ্ঘ পরিবারের রাম রাজত্বে ৫৬ ইঞ্চি ছাতির বিশ্বগুরুর নির্বাচনী ক্ষেত্রে খোদ আইআইটি-বিএইচইউ’র ক্যাম্পাসের মধ্যে আইআইটি ছাত্রীকে ধর্ষণে অভিযুক্ত হবার পরও যোগীর পুলিশের সৌজন্যে বহাল তবিয়তে থাকা যায়। পুলিশ সব রকমের চেষ্টা চালিয়েছে যাতে তিন হিন্দুত্ববাদী ধর্ষককে বাঁচানো যায়, গ্রেপ্তার না করা যায়, আইনের লঘুতম ধারা প্রয়োগ করা যায়। অবশ্য অভিযুক্তরা যদি হিন্দুত্ববাদী না হয়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বা বিরোধী দলের কর্মী হতো তাহলে তাদের জেলে পুরতে ২৪ ঘণ্টাও সময় নিত না। এমন ধারায় কেস সাজাতো যাতে জীবনভোর জেলেই কাটাতে হয়। কিন্তু অভিযুক্তরা যেহেতু বিজেপি’র কর্মী তাই ধর্ষণ করলেও সাতখুন মাপ।
তাছাড়া তারা যে সে কর্মী নন। দলের শক্তিশালী সোশাল মিডিয়ার বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত। বারাণসীর আইটি সেলের সঙ্গে যুক্ত থেকে তারা মোদীর প্রচারের দায়িত্ব পালন করতেন। দলে তাদের গুরুত্ব ও প্রভাব স্পষ্ট হয়ে যায় সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে খোদ প্রধানমন্ত্রী মোদী, উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী এবং দলের জাতীয় সভাপতি নাড্ডা সহ শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠ ছবি। প্রধানমন্ত্রীসহ শাসক দলের শীর্ষ নেতাদের ঘনিষ্ঠ হবার সুবাদেই তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরে ঢুকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে ধর্ষণ করার দুঃসাহস দেখাতে পারে। মোদীর বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও স্লোগানের এটাই সম্ভবত আদর্শ পরিণতি।
ঘটনা ঘটেছে গত ১ নভেম্বর। থানায় অভিযোগ করা হয় পরদিনই। কিন্তু পুলিশ প্রত্যাশিতভাবেই অভিযুক্ত শাসক কর্মীদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিতে উৎসাহ দেখায়নি। ম্যা‍‌জিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে ছাত্রীর জবানবন্দি নেওয়া হয় সাতদিন পর। ব্যস ঐ পর্যন্তই। তারপর থেকে অদৃশ্য সুতোর টানে পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা ও নিস্পৃহতা বাড়তেই থাকে। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হয় তুমুল ছাত্র বিক্ষোভ। অপরাধীকে ধরা ও কঠোর সাজার দাবিতে বিক্ষোভ চলে লাগাতার। সমাজবাদী নেতা অখিলেশ যাদব, কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী যোগী সরকারের বিরুদ্ধে আক্রমণ করেন। লক্ষ্যণীয় যোগী সরকার ও শাসক বিজেপি যখন অযিুক্তদের আড়াল করতে মরিয়া তখন কংগ্রেসের জেলা সভাপতি পর্দা ফাঁস করে অ‍‌‍‌ভিযোগ করেন ঘটনার সঙ্গে বিজেপি যুক্ত। ক্ষুব্ধ শাসক সঙ্গে সঙ্গে কংগ্রেস নেতার বিরুদ্ধে থানায় এফআইআর করে। ধর্ষকদের ধরার পুলিশদের চেষ্টা নেই তারা তৎপর হয়ে ওঠে সমালোচকদের বিরুদ্ধে। অযোধ্যায় রামমন্দির উদ্বোধনকে ঘিরে ধর্মোন্মাদনা তৈরির আবহে ধর্ষক বিজেপি-কে সামনে আসতে দিতে চায়নি যোগীর সরকার। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। প্রতিবাদের চাপ এতটাই যে গ্রেপ্তার না করে আর উপায় ছিল না।
 

Comments :0

Login to leave a comment