Mukul Roy

তৃণমূলের প্রয়োজনে কি এখন ‘অমিত ভাই’র কাছে মুকুল?

রাজ্য

সোমবার অভিষেক ব্যানার্জি সুপ্রিম কোর্ট থেকে স্থগিতাদেশ পেয়েছেন। স্থগিতাদেশ আগামী ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত। আর সোমবার রাতেই মুকুল রায় একটি ফোন পেয়ে দিল্লি যাত্রা করেছেন। 
মঙ্গলবার রাতে দিল্লিতে মুকুল রায় সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘‘অমিত ভাইয়ের সাথে কথা হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় ঘুরছি। আমি বিজেপি-তে আছি। আমি তো বিজেপি’রই বিধায়ক।’’ কিন্তু ‘অমিত ভাই’র সঙ্গে কী বিষয়ে, কার বিষয়ে কথা হয়েছে মুকুল জানাননি। ছেলে শুভ্রাংশুর সঙ্গেও তাঁর কথা হয়েছে, বলে জানিয়েছেন মুকুল রায়। 
একসময় মমতা ব্যানার্জির সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ, তৃণমূল-বিজেপি’র নানা সময়ের বোঝাপড়া গড়ে তোলায় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি মুকুল রায়ের এখন দিল্লি যাওয়া নিয়ে তাই ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। তা কাটেনি মঙ্গলবারও। অনেকগুলি প্রশ্ন হাজির হয়েছে। সোমবার রাতে কৃষ্ণনগর উত্তরের বিধায়ক মুকুল রায় নয়াদিল্লি পৌঁছেছেন। বিজেপি’র প্রার্থী হিসাবে বিধায়ক হলেও বিধানসভা নির্বাচনের কিছুদিন পরেই তৃণমূলে ফিরে যান তিনি। যদিও বিধানসভায় তিনি বিজেপি’র বিধায়ক হিসাবেই চিহ্নিত। ইদানীং স্নায়ু রোগে ভুগছেন তিনি। 

সেই মুকুল রায় দিল্লি গেলেন কেন? সোমবার তাঁর কাছে একটি ফোন আসার পরই তিনি দিল্লি যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। দুই সঙ্গীকে নিয়ে বিমানবন্দরে পৌঁছান। রাতেই দিল্লি পৌঁছে যান। প্রশ্ন উঠেছে হঠাৎ তিনি দিল্লি গেলেন কার কথায়? বিজেপি’র কারও কথায়? নাকি তৃণমূলেরই কোনও অত্যন্ত প্রভাবশালীর কথায়? এমন কারও ফোন— যাঁর কথা মুকুল রায় ফেলতে পারেন না। এখন ছেলের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের তাগিদে ফেলতে চান না।
একসময় মমতা ব্যানার্জির সবচেয়ে কাছের মুকুল রায় কেন্দ্রীয় রেল, জাহাজ মন্ত্রী হয়ে ছিলেন। রাজ্যসভার সাংসদ ছিলেন। বিভিন্ন সময়ে তৃণমূল-বিজেপি’র বোঝাপড়া গড়ে তোলায় তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন। ফলে বিজেপি’র জাতীয় পর্যায়ের অনেক বড় নেতার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক। ২০১৭-তে বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার পর সেই যোগাযোগ আরও দৃঢ় হয়। বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর এই যোগাযোগ ব্যবহার করে তৃণমূলও এখন লাভবান হতে পারে বলেই তৃণমূলের অনেকে মনে করছেন। তেমনই এক বিধায়কের কথায়, ‘‘মুকুলদার মাথায় চিপ বসেছে। চলাফেরায় অসুবিধা হয়। কথাবার্তাও কিছুটা অসংলগ্ন। তবু তিনি এখনও অনেক কিছু  জানেন। অনেকের বিষয়ে জানেন। কাকে কোন কথা বললে কাজ হতে পারে, সেই ধারণা দিদির পরেই যার আছে সেটা মুকুলদা। দেখা যাক দিল্লিতে আসলে মুকুলদা কী করতে গেছে।’’


উল্লেখ্য, কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় গত ১৩ এপ্রিল ঘুষ নিয়ে নিয়োগের মামলায় অভিষেক ব্যানার্জিকে সিবিআই এবং ইডি জেরা করতে পারবে বলে নির্দেশ দিয়েছিলেন। এই নির্দেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে এসএলপি দায়ের করা হয়েছিল অভিষেকের পক্ষ থেকে। সোমবার কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশের উপর স্থগিতাদেশ দেয় সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচুড়, বিচারপতি জেবি পাদরিওলা এবং বিচারপতি পিএস নরসিমার বেঞ্চ। আগামী ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত এই স্থগিতাদেশ বহাল থাকবে। 
তারপর? যদি স্থগিতাদেশ না থাকে? 
অভিষেক, মমতা ব্যানার্জির এই আশঙ্কার সঙ্গে মুকুলের দিল্লি যাত্রার কোনও সম্পর্ক থাকতে পারে বলেই অনেকে মনে করছেন। বিজেপি নেতৃত্ব মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত এই নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। তৃণমূলের পক্ষ থেকে কোনও বড় নেতা প্রতিক্রিয়া দেননি। দিল্লিতে মুকুল রায়েরও কোনও মন্তব্য এদিন মেলেনি। যে মুকুল বিধানসভায় বিজেপি-তেই আছেন, তাঁর আবার বিজেপি’র উত্তরীয় গলায় নিয়ে ‘ফিরে এলাম’ বলার কোনও মানে হয় না। তাঁর কাছ থেকে দারুণ কিছু পাওয়ার আশাও নেই। 


নতুন করে সন্দেহ আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন মুকুলের ছেলে শুভ্রাংশু। গত বিধানসভা নির্বাচনে বীজপুরে বিজেপি’র প্রার্থী হিসাবে পরাজিত শুভ্রাংশু রায় এদিন বিকালে সাংবাদিক সম্মেলন করেন। তিনি বলেন,‘‘আমার ব্যক্তিগত মত, অভিষেককে কালিমালিপ্ত করতে কোনও একটি রাজনৈতিক দল খেলায় নেমেছে। কারণ এখন নিশানা অভিষেক। তিনিই দলটাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।’’ 
মমতা ব্যানার্জিকে নয়, অভিষেককে ‘কালিমালিপ্ত’ করতে মুকুল রায়কে দিল্লি নিয়ে যাওয়া? হঠাৎ এমন কেন মনে হলো তা সাংবাদিকদের শুভ্রাংশু জানাননি। 
শুভ্রাংশুর দাবি,‘‘আমি এয়ারপোর্ট এবং থানাকে চিঠি লিখেছি। তাদের জানিয়েছি যে, দু’জন আমাকে না জানিয়ে বাবাকে নিয়ে চলে গেছে। আমি থানার আইসি এবং এয়ারপোর্টের ম্যানেজারকে বলেছিলাম বাবাকে বিমান থেকে নামিয়ে আনতে। কিন্তু তা হয়নি।’’ রাতে একটি ভিডিও-তে দেখা যাচ্ছে বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন মুকুল রায়। বিশেষ অসংলগ্নতা নেই তাঁর কথায়। 
যেমন ভিডিও-য় দেখা যাচ্ছে নয়াদিল্লি বিমানবন্দরে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করছেন, দাদা, দিল্লির আসার কী কারণ আছে? মুকুল রায় উত্তর দিচ্ছেন, ‘‘এমনি এসেছি। দিল্লিতে কি আমি আসতে পারি না? আমি তো আগেও অনেকবার দিল্লি এসেছি। এবার একটু দেরি হয়ে গেল আসতে। আমি তো এখানকার এমএলএ। এখানকার এমপি। যতদিন প্রয়োজন, ততদিন থাকব। আমি এমনি কাজে এসেছি দিল্লিতে। কোনও বিশেষ কারণে আসিনি।’’ 
সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, আপনি কি ডাক্তার দেখাতে এসেছেন? মুকুল জবাব দেন, ‘‘না, ডাক্তার দেখাতে দিল্লিতে আসতে হবে কেন? আমি প্রয়োজনে এসেছি।’’
এই প্রয়োজনটি কী? 


যিনি এত কথা স্পষ্ট বলতে পারছেন, সেই মুকুল রায় এবার আচমকা দিল্লি যাওয়ার আগে ছেলেকে জানানোর কথা ভাবলেনই না? দু’জন তাকে নিয়ে চলে গেল? 
শুভ্রাংশুর অভিযোগের ভিত্তিতে এয়ারপোর্ট থানা বিজেপি’র দক্ষিণ দমদম অঞ্চলের এক নেতা পীযূষ কানোরিয়াকে থানায় তলব করে। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে।
 

Comments :0

Login to leave a comment