Maldah South LS

পরিযায়ী থেকে ভাঙন, কোণঠাসা শাসকের প্রার্থী

রাজ্য লোকসভা ২০২৪

শনিবার মালদহ দক্ষিণ কেন্দ্রের বামফ্রন্ট সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী ঈশা খানচৌধুরির সমর্থনে রোড-শো’তে প্রার্থী সহ সিপিআই(এম) নেতা রবীন দেব, অম্বর মিত্র প্রমুখ।

 প্রচারের একেবারে শেষ লগ্নে মালদহের দু’টি কেন্দ্রেই বিজেপি-তৃণমূলের অভিন্ন আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হয়ে উঠছে কেবলমাত্র বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেস।
দু’টি কেন্দ্রেই বিজেপি-তৃণমূল দাবি করছে, বামফ্রন্ট সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থীই তাঁদের কাছে মূল চ্যালেঞ্জ। পরিযায়ী শ্রমিক থেকে গঙ্গা ভাঙনের ইস্যু, কাজের আকাল থেকে জেলার নিজস্ব উন্নয়নের দাবি— সব ক্ষেত্রেই মানুষের প্রশ্নের মুখে শাসক তৃণমূল ও বিজেপি। ফলে শেষরক্ষা হিসেবে মেরুকরণের রাজনীতিতে দুই শাসকদলই এখন সরাসরি বাম-কংগ্রেসকে আক্রমণে ঝাঁঝ বাড়াচ্ছে। 
তৃতীয় দফা ভোটের প্রচার শেষ রবিবার। তার আগে শেষ শনিবার দাবদাহের মধ্যেও মালদহ জেলাজুড়ে নির্বাচনী প্রচারের উত্তাপ বাড়ালেন বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস কর্মীরা। মালদহ শহরে মালদহ দক্ষিণ কেন্দ্রের বামফ্রন্ট সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী ঈশা খান চৌধুরীর সমর্থনে রোড-শো’তে এদিন ছিল মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত ঢল। টাউন হলের সামনে থেকে নজরুল সরণি, রাজ হোটেল মোড়, রবীন্দ্র অ্যাভিনিউ হয়ে ফোয়ারা মোড় হয়ে পেয়াজী মোড়ে শেষ হয় রোড শো। পরে এখানে সভা হয়  সিপিআই(এম) নেতা একরাম হোসেনের সভাপতিত্বে। ঈশা খান ছাড়াও সভায় বক্তব্য রাখেন রবীন দেব, অম্বর মিত্র, পার্টিনেতা কৌশিক মিশ্র, সিপিআই নেতা বাবর সরকার, আরএসপি নেতা সর্বানন্দ পাণ্ডা, কংগ্রেসের আব্দুস সাত্তার, ভিপি সিং এবং মোত্তাকিন আলম প্রমুখ। 
সভায় সিপিআই(এম) নেতা রবীন দেব বলেন, বিজেপি-তৃণমূল বিরোধী ঐতিহ্যই বজায় রাখবে মালদহ দক্ষিণ কেন্দ্র। মানুষের অসন্তোষের মুখে দিশেহারা প্রধানমন্ত্রী জীবন-জীবিকার সঙ্কট আড়াল করতে চাইছেন। ধর্মীয় বিষাক্ত প্রচার চালিয়ে মানুষকে ভাগ করতে চাইছেন। এরাজ্যে তৃণমূল আকণ্ঠ দুর্নীতিতে ডুবে রয়েছে। শাস্তি থেকে বাঁচতে তারা আরএসএস-বিজেপি’র সঙ্গে গোপন বোঝাপড়া করে নিয়েছে। আটচল্লিশ ঘণ্টা পরে এই দুই দলের বিরুদ্ধেই রায় দিতে চলেছেন মালদহের মানুষ। মালদহ দক্ষিণ কেন্দ্রের প্রার্থী ঈশা খান বলেন, তৃণমূল আসলে কোন রাজনৈতিক দল নয়, একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। বিজেপি’র মতো বিপদকে ছেড়ে এরা কংগ্রেস এবং সিপিআই(এম)’কে আক্রমণেই ব্যস্ত। তৃণমূল আসলে বিজেপি’র হয়ে ভাড়া খাটছে। 
মালদহ উত্তর কেন্দ্রেও বামফ্রন্ট সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী মোস্তাক আলমের সমর্থনে রতুয়া-২নম্বর ব্লকে প্রচার মিছিল হয়। প্রায় পাঁচশো জন বাইক আরোহী রোড শো’তে অংশ নেন। এই কেন্দ্রেও বিজেপি’র সঙ্গেই সরাসরি লড়াইয়ে বামফ্রন্ট-কংগ্রেস। গতবার এখান থেকে বিজেপি’র হয়ে জিতেছিল এক দলবদলু। গত পাঁচ বছরের কাজের নিরিখে নয়, সেই বিভাজনের খেলাতেই বিজেপি এখানে ভোট বৈতরণী পেরোতে চাইছে। শাসক তৃণমূলের প্রার্থী আবার প্রাক্তন আইপিএস কর্তা। এই দুই দলের একজনের মুখেও বিড়ি শ্রমিকের মজুরি থেকে মালদহের পরিযায়ী সমস্যা, গঙ্গা ভাঙন নিয়ে কোনও কথা শোনা যাচ্ছে না। 
দুই লোকসভা কেন্দ্রেই মানুষের আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস বিড়ি বাঁধা। হাজার হাজার মানুষ যাঁদের বড় অংশই মহিলা, বিড়ি বাঁধার কাজে যুক্ত। এঁরা নানা সমস্যায় জর্জরিত। চুক্তি অনুযায়ী মজুরি পান না। বামফ্রন্ট সরকারের সময়ে যেসব সামাজিক প্রকল্প চালু ছিল সেগুলি এখন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আর বিড়ি মালিকদের বড় অংশই এখন এরাজ্যের শাসক তৃণমূলের নেতা। ফলে শ্রমিকদের ন্যায্য দাবিতে গুরুত্ব দেওয়া হয় না। অবহেলিত, বঞ্চিত থেকে যান অসহায় শ্রমিকরা। বিড়ি মালিকরা শাসক তৃণমূলের প্রার্থী তালিকাতেও আছে, পাশের জেলা মুর্শিদাবাদেই। 
বাংলাদেশের সঙ্গে সীমান্ত নিয়েও এলাকার মানুষের নিত্যদিনের বহু হয়রানি। এই বাসিন্দাদের দুর্দশা মোচনে কেন্দ্রের সরকার উদাসীন। এখানকার মানুষের দাবি উপেক্ষিতই থেকে গিয়েছে। ইংরেজবাজার, সুজাপুর ও বৈষ্ণবনগর নির্বাচন ক্ষেত্রের মধ্যে এসব এলাকা রয়েছে। কাঁটাতারের বেড়া, বিএসএফ’র অন্যায় অত্যাচার, চাষের সমস্যা ইত্যাদি কারণে এলাকার মানুষের জীবনযন্ত্রণা প্রতিদিন বেড়েই চলেছে।
 

Comments :0

Login to leave a comment