রাজ্যের মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের বিপুল সম্পত্তির খোঁজ এবার মিলল দীঘায়। রেশন দুর্নীতির দায়ে মন্ত্রী গ্রেপ্তার হয়েছেন আগেই। সূত্রের খবর, ইডির হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন দীঘার একটি বিলাসবহুল হোটেলের তিন কর্মীও। হোটেল কর্মীদের গ্রেপ্তারের পরেই দীঘা জুড়ে নতুন করে চর্চা শুরু হয়।
দিঘার হোটেল ব্যবসায়ী সংগঠনের একাংশ বলছেন, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের চারটি হোটেল এই দীঘাতে রয়েছে। এই হোটেলগুলি দেখভাল করে মন্ত্রী ঘনিষ্ঠ তিনজনের নামের প্রথম অক্ষর নিয়ে তৈরি একটি সংস্থা। যদিও ওই সংস্থার পক্ষ থেকে মন্ত্রীর যোগাযোগের অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। আসলে সত্যিটা কী?
এর আগে শান্তিনিকেতনে মন্ত্রীর বিলাসবহুল বাড়ির খোঁজ মিলেছিল।
কয়েক বছর আগে একটি পুরনো হোটেল কেনা হয় এই সংস্থার নামে। সেই হোটেলটিকে বিলাসবহুল করে তোলা হয়। যার রুম প্রতি ন্যূনতম ভাড়া দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা। আরও তিনটি নতুন হোটেল নির্মাণ হয়েছে। যাদের সর্বনিম্ন ভাড়া ৩০০০ টাকা। দীঘা হলিডে হোম সংলগ্ন একটি বিলাসবহুল হোটেল রয়েছে। ২০১৬-১৭ সাল নাগাদ এই হোটেলগুলি তৈরি হয় বলেই হোটেল মালিক সংগঠনের কর্মকর্তারা জানান। তাঁরা বলছেন, ‘‘২০১৫‘র গোড়া থেকে আমরা জেনে আসছি এই হোটেলগুলির সঙ্গে প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী যুক্ত রয়েছেন। যেগুলি প্রত্যেকটি নির্মিত হয়েছিল দীঘা শংকরপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের আগের এক্সিকিউটিভ অফিসারের মেয়াদকালেই। হলিডে হোম ঘাট সংলগ্ন এলাকা এবং ভিআইপি জোনে পরপর চারটি হোটেল রয়েছে। এদের মধ্যে একই নামে দুটি হোটেল আছে এই চারটির মধ্যে একটি কেনা হয়, বাকি তিনটি নতুন নির্মাণ করা হয়েছে।’’
'হোটেল আমার দিঘা', 'মেঘবালিকা', 'বিচ ভিউ' নামের এইসব হোটেলগুলি সঙ্গে আদতে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের যোগ রয়েছে কিনা তা জানতে পাশাপাশি কয়েকটি হোটেলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। তাঁদের প্রত্যেকেই জানান যে এতদিন ধরেই জেনে এসেছেন প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক এই হোটেলগুলির সঙ্গে যুক্ত। তবে একটি সংস্থা আছে তারাই হোটেলগুলি চালায়। মন্ত্রীও দীঘায় এলেই এই সব বিলাসবহুল হোটেলগুলিতেই উঠতেন। জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক গ্রেপ্তার হতে দীঘা জুড়েই গুঞ্জন শুরু হয়েছে। আবার অপপ্রচার বলেও ঘটনা আড়াল করার কাজও করছে এক পক্ষ। তাই কোনওমতেই কোন সংস্থা এই হোটেলগুলি চালায় তা প্রকাশ্যে আনতে রাজি নয় এই হোটেলগুলির ম্যানেজাররা। এমনকি হোটেল কর্মীদের গ্রেপ্তারের প্রসঙ্গও এড়িয়ে যাচ্ছেন তারা।
রবিবার এই হোটেলগুলির একটির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে কর্তৃপক্ষ জানায়, কে গ্রেপ্তার হয়েছে আমরা বলতে পারব না। এটা কার সঙ্গে যুক্ত আছে, কোন সংস্থা চালায় তাও আমরা জানি না।
তবে হোটেল মালিক ব্যবসায়ী সংগঠনের এক কর্তার কথায় প্রত্যক্ষভাবেই মন্ত্রীর যোগাযোগের অভিযোগ উঠে আসছে। ব্যবসায়ী সংগঠনের ওই কর্তা জানান, হোটেলের শুরু থেকেই আমরা জানি মন্ত্রী পরোক্ষভাবে এই হোটেলগুলির সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। এতদিন মন্ত্রীর নামেই হোটেলগুলি চলেছে। মন্ত্রী যদি যুক্ত না থাকেন তবে হোটেলের তিন কর্মীকে কেন গ্রেপ্তার করবে ইডি?
এই প্রশ্ন দীঘা জুড়েই রয়েছে। আরও চাঞ্চল্যকর একটি তথ্য জানা গেছে। এই হোটেলগুলির সঙ্গে একাধিক তৃণমূল নেতার যোগ রয়েছে। তার কারণ মাঝেমধ্যেই তৃণমূলের প্রথম সারির নেতারা এই হোটেলগুলিতে এসে থাকেন। এমনকি দীঘায় তৃণমূলের কোনও কর্মসূচি থাকলে তা এই হোটেলগুলির সামনেই করা হয়।
Comments :0