Protest Baruipur

বারুইপুরে গ্রেপ্তার নেতৃবৃন্দকে ছাড়তে বাধ্য হল পুলিশ

রাজ্য জেলা

মঙ্গলবার বারুইপুরে আইন অমান্য কর্মসুচি।

অনিল কুন্ডু - বারুইপুর

বিক্ষোভ, আইন অমান্যে উত্তাল হল বারুইপুর। মহকুমা শাসকের দপ্তর অভিযানে পুলিশের বাধা পেরিয়ে আইন ভাঙ্গলেন আন্দোলনকারীরা। শ্রমিক, কৃষক, ক্ষেতমজুর, ছাত্র, যুব, মহিলাসহ কয়েক হাজার মানুষের মিছিলের গতিপথমহকুমা শাসকের দপ্তরের কাছে পুলিশ আটকালে পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক ধ্বস্তাধ্বস্তি হয়। আন্দোলনকারীদের চাপে বিশাল পুলিশ বাহিনী পিছু হটে। তারপর একের পর এক ব্যারিকেড ভেঙ্গেছে। প্রায় নেতৃত্বসহ ২৫০ জন আন্দোলনকারীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। অবরুদ্ধ হয় বারুইপুর রোড। বিক্ষোভ, আন্দোলনকারীদের চাপে অবশেষে তাঁদের নি:শর্ত মুক্তি দিতে বাধ্য হয় পুলিশ। 


কোচবিহার জেলা শাসকের দপ্তরের সামনে আন্দোলনকারীরা।

বামপন্থী শ্রমিক, কৃষক, ক্ষেতমজুর সংগঠনসমূহ দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার আহ্বানে মঙ্গলবার বারুইপুর মহকুমা শাসকের দপ্তর অভিযান ও আইন অমান্য কর্মসুচি হয়। এই কর্মসুচিকে কেন্দ্র করে বারুইপুর রেল ময়দান থেকে মিছিল শুরু হয়। বারুইপুর থানার সামনে থেকে রেলগেট হয়ে দৃপ্ত সুবিশাল মিছিল বারুইপুর মহকুমা শাসকের দপ্তরের কাছে গেলে ব্যারিকেড করে পুলিশ। পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক ধ্বস্তাধ্বস্তি হয়। মানুষের চাপে ওই ব্যারিকেড ভাঙে। দ্বিতীয় ব্যারিকেডও ভাঙা হয়। বারুইপুরের এসডিপিও আন্দোলনকারীদের সকলের গ্রেপ্তারের ঘোষণা করেন। ইতিমধ্যে  ৪টি প্রিজন ভ্যান ও ২টি বাসে নেতৃত্ব সহ আন্দোলনকারীদের পুলিশ গ্রেপ্তার করে। ধৃতদের সকলের নি:শর্ত মুক্তির দাবিতে মহকুমা শাসকের দপ্তরের সামনে শুরু হয় আন্দোলনকারীদের পথ অবরোধ, বিক্ষোভ। আইন ভঙ্গ করার জন্যসিআইটিইউ নেতা রতন বাগচী, পশ্চিমবঙ্গ ক্ষেতমজুর ইউনিয়নের রাজ্য সভাপতি তুষার ঘোষ,দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা কৃষক সমিতির সম্পাদক অলোক ভট্টাচার্য, কৃষক নেতা সুভাষ নস্কর, সুফল পাল, অশোক ভট্টাচার্য, সিআইটিইউ জেলা সভাপতি দীপঙ্কর শীল,সম্পাদক দেবাশিস দে, রাম দাশ, প্রভাত চৌধুরী, মিত্যেন্দু ভূঁইঞা, ক্ষেতমজুর ইউনিয়নের জেলা সভাপতি দীপক দাশ, সম্পাদক উৎপল মন্ডলসহ প্রমুখ নেতৃত্বকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেগাড়িতে তোলে। উত্তাল আন্দোলন, পথ অবরোধ, বিক্ষোভের জেরে পরে পুলিশ ধৃতদের সকলকে নি:শর্ত মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। 


উত্তর ২৪ পরগনা জেলার আইন অমান্য কর্মসূচি।

এদিন বেলা ৩টা নাগাদ নিমতৌড়ি থেকে মিছিল শুরু হয়। মিছিলে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত  থেকে কয়েক হাজার শ্রমিক, কৃষক, মহিলা,  ছাত্র, যুব, কর্মচারীরা এই কর্মসূচিতে যোগ দেন। মিছিলে নেতৃত্ব দেন  কৃষক কাউন্সিল নেতা নিরঞ্জন সিহি, হিমাংশু দাস, ইব্রাহিম আলি, সুব্রত পন্ডা, সত্যরঞ্জন দাস, মহাদেব মাইতি, কাঞ্চন মুখার্জি, আশীষ প্রামাণিক, বিশ্বরঞ্জন দিন্ডা, গৌতম পন্ডা, নভেন্দু ঘড়া, মন্টু দাসমহাপাত্র, অশ্বিনী সিনহা সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। শুরুতে নিমতৌড়ি মোড়ে সভায় বক্তব্য রাখেন নেতৃবৃন্দ। 


নিমতৌড়িতে পূর্ব মেদিনীপুর জেলাশাসক দপ্তর অভিমুখে মিছিল।

মিছিল নিমতৌড়ি মোড় থেকে জাতীয় সড়ক হয়ে জেলা শাসকের অফিসের দিকে যেতে চেষ্টা করে। প্রবেশ পথ ব্যারিকেড দিয়ে আটকে বিশাল পুলিশ বাহিনী পথ আটকে রাখে। মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা দুটি ব্যারিকেড সরিয়ে এগোতে চেষ্টা করলে পুলিশের সাথে ধ্বস্তাধ্বস্তিতে কয়েকজন নেতা ও কর্মী আঘাত পান। সেখানেই অবস্থান সভা চলে। মিছিল ও সভা থেকে বিভিন্ন দাবিতে সোচ্চার হওয়ার পাশাপাশি  খেতমজুর ইউনিয়নের রাজ্য সম্পাদক তথা প্রাক্তন বিধায়ক নিরাপদ সর্দারকে পুলিশের মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তারে ধিক্কার জানানোর পাশাপাশি অবিলম্বে তাকে নিঃশর্তে মুক্তির দাবি জানানো হয়।


পূর্ব বর্ধমানে আইন অমান্য কর্মসূচি।

মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার খেতমজুর আন্দোলনের নেতা সন্দেশখালির প্রাক্তন বিধায়ক নিরাপদ সর্দার সহ অন্যান্য নেতৃত্বের নিঃশর্ত মুক্তি, সন্দেশখালির তোলাবাজ শেখ শাহজাহান, শিবু হাজরা, উত্তম সর্দারদের অত্যাচার বন্ধ ও তাদের গ্রেপ্তারের দাবির পাশাপাশি বেকারদের কাজ, শ্রম কোড, স্মার্ট মিটার সহ বিদ্যুৎ বিল বাতিল, কৃষি পণ্যের ন্যায্য দাম, রেগার বকেয়া মজুরি পরিশোধ, অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি রোধ এবং সর্বোপরি দেশের সংবিধান, ধর্মনিরপেক্ষতা, সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সহ জীবন-জীবিকা রক্ষার দাবিতে ও সমস্ত রকম দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে বিভিন্ন দাবিকে সামনে রেখে মঙ্গলবার  আইন অমান্য কর্মসূচি পালিত হয় উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব বর্ধমান, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, ধূপগুড়ি, মালবাজার, শিলিগুড়ি, মুর্শিদাবাদ, বীরভূম, পুরুলিয়া, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা সহ গোটা রাজ্যজুড়ে। এদিন পুলিশ আন্দোলনকারীদের আটকানোর চেষ্টা করে। পুলিশের ব্যারিকেট ভেঙে এগিয়ে যান আন্দোলনকারীরা। আন্দোলনের  চাপে পুলিশ বাহিনী পিছু হটে। রাজ্যের সব জেলায় আইন অমান্য এবং বিক্ষোভের ডাক দিয়েছিল সিআইটিইউ, সারা ভারত কৃষক সভা, সারা ভারত খেতমজুর ইউনিয়নের মতো শ্রমিক-কৃষক-খেতমজুরদের একগুচ্ছ সংগঠন। এর মাঝেই সন্দেশখালির বিক্ষোভ তীব্র হয়। পুলিশ অপরাধীদের না ধরে গত রবিবার গ্রেপ্তার করে সারা ভারত খেতমজুর ইউনিয়নের রাজ্য সম্পাদক নিরাপদ সর্দারকে। এদিন বিভিন্ন জেলার ভিবিন্ন স্থানে বিক্ষোভে নিরাপদ সর্দারের মুক্তির দাবিও জোরালো হয়েছে। স্লোগান উঠেছে, সন্দেশখালির মানুষের উপর অত্যাচার চালানো তৃণমূল নেতাদের গ্রেপ্তার করো।

শিলিগুড়িতে আইন অমান্য ও জেল ভরো কর্মসূচি।
 

Comments :0

Login to leave a comment