চিন্ময় কর: ডেবরা
বর্গা খাস জমির পাট্টা ও পাট্টা জমির রেকর্ড আদায়ের লড়াইতে ডেবরা ব্লকে ভূমি দপ্তরে অভিযান চলল বেলা ১১ টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত। চলল ঘেরাও বিক্ষোভ।
জনরোষের চাপে ব্লক ভূমি ও ভূমি রাজস্ব আধিকারিক বিক্ষোভ মঞ্চে হাজির হয়ে মাইক ধরে কৈফিয়ত দিতে বাধ্য হলেন।
মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দপ্তরেই সীমাহীন দুর্নীতি ও বাস্তুঘুঘুর বাসা ভাঙতে এদিন শামিল ছিলেন কৃষক খেতমজুর পাট্টাদার বর্গাদার সহ শ্রমজীবীরা। ডেবরা ব্লক ভূমি ও ভূমি দপ্তর অভিযানে লাল ঝান্ডার জনস্রোত আছড়ে পড়ে। দাবি একটাই- খাস বর্গা জমির পাট্টা দাও, পাট্টা জমির রেকর্ড দাও।
ডেবরা বাজারের হরিমতি হাইস্কুল ময়দান থেকে মহিলা শ্রমজীবী মানুষের নজরকাড়া অংশগ্রহণে হাজারো হাজারো মানুষের জনরোষের চেহারায় প্রায় ৪ কিমি পথে মিছিল সহকারে গিয়ে ভূমি দপ্তরের সামনে বেলা ১১ টা থেকে সন্ধ্যা ৭ টা পর্যন্ত ঘেরাও ধর্না সহ বিক্ষোভ সভা চলে।
জোরালো দাবি ওঠে, ভূমি দপ্তর ও জমি হাঙরদের মিলিত দুর্নীতিতে নকল দলিল তৈরি করে উচ্ছেদের শিকার পাট্টাদার ও বর্গাদারদের অবিলম্বে জমির অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। জমির রেকর্ড সহ প্রশাসনিক পদক্ষেপ নিতে হবে।
ডেবরা ব্লকের ১৪টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা থেকে শতশত পরিবার এই আন্দোলনে শামিল হয়। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত ঘেরাও বিক্ষোভ চলে। প্রয়োজনে রাতভর ঘেরাও চলবে, এমনই জেদের আভাস পেয়ে ভূমি আধিকারিক ধর্ণা মঞ্চে হাজির হতে বাধ্য হন। মাইকে তিনিই ঘোষণা করেন, ‘‘আপনাদের দাবিগুলি ন্যায্য। আমার দপ্তর দাবিগুলিতে সহমত পোষণ করে।’’
ভূমি আধিকারিক বলেন, ‘‘গত এক বছর আগে এমনই শীতে রাতভোর ঘেরাও সহ এমন ৬ হাজার পরিবারের কাগজপত্র আমরা জমা নিয়েছিলাম। এখনো পর্যন্ত প্রায় ২ হাজার পরিবারের পাট্টা বর্গা জমির রেকর্ড তৈরি করে এসডিএলআরও দপ্তরে অনুমোদনের জন্য জমা দেওয়া হয়েছে। সেই রেকর্ডের কাগজ পরিবারগুলির হাতে আমরা তুলে দেবে।’’
তিনি বলতে বাধ্য হন, ‘‘ভূমি দপ্তরে ৭০ ভাগ কর্মীর পদ শূন্য। আপনাদের এই সমস্যা মেটানোর জন্য তাই জেলা ও মহকুমা প্রশাসনকে কর্মী দেওয়ার আবেদন জানানো হয়েছে। আজও ফোনে এবং লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।’’
ডেবরার পরিস্থিতিতে স্পষ্ট যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি সরকারের ‘দুয়ারে সরকার’ প্রকল্প আসলে লোকদেখানো ভাঁওতা। মানুষকে বারে বারে লাইনে দাঁড় করিয়ে সমস্যা সমাধানের আবেদন পত্র গ্রহণ করলেও ৪ বছরে তার সমাধান হয়নি। এদিনও ডেবরা ব্লকের ১৪টি অঞ্চলের জন্য ১৪টি টেবিল পেতে ৪ হাজারের বেশি পরিবারের এমন বর্গা খাস জমির পাট্টা সহ পাট্টাদারদের রেকর্ড পাওয়ার জন্য নতুন করে নাম নথিভুক্ত করা হয় সব রকমের তথ্য দিয়ে।
ডেবরা ব্লক জুড়ে গত পনেরো দিন ধরে কৃষক-খেতমজুর-শ্রমিক সংগঠনসমূহের পক্ষ থেকে প্রচার করা হয়। পাট্টা বর্গা জমির রেকর্ড সহ তার অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে সকলকে হাজির থাকার আবেদন জানানো হয়। সেই আহ্বানে গ্রাম ভেঙে পরিবার নিয়ে মানুষ শামিল হেন।
বিক্ষোভ সভায় ডেবরা ব্লকের কৃষকনেতা প্রাণকৃষ্ণ মন্ডল বলেন, এই সাফল্য গত এক বছর ধরে আন্দোলনের ফল। কিন্তু এখনো বহু দূর যেতে হবে আমরা জানি। এ লড়াই থামবে না। দুই শাসকদলেই পুরানো জোতদার-জমিদারদের বংশধররা আছে। তারাই এখন জমি হাঙর।
বক্তব্য রাখেন সারা ভারত কৃষক সভা, সারা ভারত খেতমজুর ইউনিয়ন ও সিআইটিইউ’র জেলা সম্পাদক যথাক্রমে মেঘনাদ ভূঁইয়া, চিত্ত পাল ও গোপাল প্রামানিক সহ বর্ষীয়ান কৃষকনেতা তরুণ রায়, সুভাষ দে এবং সুকুমার আচার্য। সভায় বক্তব্য রাখেন যুব সংগঠনের জেলা সম্পাদক সুমিত অধিকারী।
সভা পরিচালনা করেন তিন সংগঠনের পক্ষে রবীন দত্ত, ডালিয়া ভট্টাচার্য অশ্বিনী পাত্রকে গঠিত সভাপতি মন্ডলী।
Comments :0