PAKISTAN REACTION

চন্দ্রযানের সাফল্যকে কুর্নিশ পাকিস্তানের

জাতীয় আন্তর্জাতিক

CHANDRAYAN-3 BENGALI NEWS PAKISTAN INDIAN POLITICS

বুধবার চাঁদের দক্ষিণ মেরুর মাটি ছুঁয়েছে প্রতিবেশি। সৃষ্টি করেছে অনন্য এক নজির। বৃহস্পতিবার থেকে সেই প্রতিবেশির জন্য সীমান্তের ওপার থেকে ভেসে এল শুভেচ্ছা বার্তা। একইসঙ্গে শোনা গেল স্পষ্ট আক্ষেপ, উগ্র ধর্মীয় এবং জাতীয়তাবাদী জিগিরের রাজনীতি আমাদের পথে বসিয়ে ছেড়েছে। 

বুধবার থেকেই পাকিস্তানের প্রথম সারির সমস্ত সংবাদমাধ্যমে জায়গা করে নিয়েছিল চন্দ্রযান-৩। পাকিস্তানের বহু মানুষও নজর রেখেছিলেন চন্দ্রযানের লাইভ ল্যান্ডিংয়ের দিকে। আর চাঁদের মাটি ছোঁয়ার মুহূর্ত থেকে প্রতিবেশিকে শুভেচ্ছা বার্তায় ভরিয়ে দিতে কুন্ঠা বোধ করেনি পাকিস্তানের সংবাদ মাধ্যম। পাকিস্তানের জিও নিউজ, দি ডন, দি বিজনেস রেকর্ডার, দুনিয়া নিউজ সহ সে দেশের সমস্ত প্রথম সারির দৈনিক সংবাদপত্র এবং বৈদ্যুতিন মাধ্যমের শীর্ষে থেকেছে চন্দ্রযান-৩’র সাফল্য।  

ইমরান খান সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার দপ্তরের মন্ত্রী ছিলেন ফওয়াদ খান। ভারতীয় বিজ্ঞানীদের কৃতিত্বকে সাদর অভ্যর্থনা জানিয়ে তিনি এক্সে( পূর্বতন টুইটার) লেখেন, ‘‘ইসরোর জন্য চিরস্মরণীয় একটি মুহূর্ত। এই দিনটি দেখার জন্য আমরা সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলাম। আমরা সবাই দেখতে পাচ্ছি ইসরো চেয়ারম্যান সোমনাথের নেতৃত্বে তরুণ বিজ্ঞানীরা উচ্ছ্বাসে ভাসছেন। নতুন প্রজন্মের দেখা স্বপ্নই একমাত্র দুনিয়া বদলাতে পারে। ভারতের মানুষকে আমাদের তরফে শুভেচ্ছা।’’

একই ছবি ধরা পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়াতেও। ‘ওপারের’ নেটিজেনরা কুর্ণিশ করেছেন ইসরোর বিজ্ঞানীদের কৃতিত্বকে। 

এই নেটিজেনদের সিংহভাগ যুব সম্প্রদায়ের। কিছু কমেন্টে ভারত বিদ্বেষের সুর থাকলেও তাঁকে থামিয়ে দিয়েছে সেদেশেরই যুক্তিবাদী কোনও কন্ঠস্বর। 

পাকিস্তানের একের পর এক সোশ্যাল মিডিয়া চ্যানেল এবং পেজেও উঠে এসেছে একই ছবি। ভারতকে কুর্ণিশ জানানোর পাশাপাশি সেখানে ঝড়ে পড়েছে আক্ষেপ। পাকিস্তানের যুব সম্প্রদায় প্রকাশ্যেই জানিয়েছে তাঁদের স্বপ্নভঙ্গের হতাশা। তাঁদের বক্তব্য, তাঁদের দেশের সরকার ‘ধর্ম’কে রক্ষা করতে যতটা তৎপর, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান প্রভৃতি ইস্যুতে তার ছিঁটেফোটা দেখা যায়না। তাই প্রতিবেশি দেশ যখন প্রযুক্তির বিকাশে এগিয়ে যাচ্ছে, তখনও ধর্মের নামে, উগ্র জাতীয়তাবাদের নামে রাজনীতি করে চলেছে ক্ষমতাসীন শাসকরা। 

পাকিস্তানের যুব সমাজের অনেকের আক্ষেপ, রাজনীতির ‘রুটি সেঁকার’ জন্য পাকিস্তান সেনাকে ব্যবহার করা হয়। ভারতের জুজু দেখিয়ে ভোট বৈতরণী পার করেন নেতারা। তার বদলে পাক সেনার বরাদ্দ প্রতি বছর বৃদ্ধি পায়। উল্টোদিকে সাধারণ মানুষকে সোনার দরে গম কিনতে হয়। দেশ দেউলিয়া হওয়ার দোড়গোড়ায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। 

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একটা অংশ বলছেন, স্বাধীনতার পরে কয়েক দশক পাকিস্তানের সঙ্গে প্রায় সমস্ত বিষয়ে প্রতিযোগিতা চলত ভারতের। কিন্তু আশির দশক থেকে ধর্মান্ধতা গ্রাস করে পাকিস্তানের রাজনীতিকে। ‘পলিটিক্যাল ইসলাম’ হয়ে দাঁড়ায় রাজনীতির প্রধান ইস্যু। এর প্রভাব পাকিস্তানের অর্থনীতিতেও পড়েছে। ক্রমেই নীচের দিকে নেমেছে আর্থ সামাজিক বিকাশের গ্রাফ। বর্তমানে সেই রাজনীতি এবং সমাজ ব্যবস্থা যুব সমাজকে দিশা দেখাতে ব্যর্থ। সেই ক্ষোভের আঁচ মিলেছে চন্দ্রযান সংক্রান্ত পোস্টগুলিতে। 

যদিও বিশেষজ্ঞরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, পাকিস্তানের ফেলে আসা জুতোয় পা গলাতে চাইছে ভারত। উগ্র জাতীয়তাবাদ এবং ধর্মের সঙ্গে রাজনীতির মিশ্রণ দেশের রাজনীতিকে গ্রাস করলে কী হতে পারে তার প্রমাণ বর্তমান পাকিস্তান। অপরদিকে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেশ গঠন করতে চাইলে, সেই মত বহুত্ববাদী পরিকল্পনা নিলে কী হতে পারে তার প্রমাণ ইসরো’র মত সংস্থা, তার সাফল্য। বর্তমানে হিন্দু রাষ্ট্রের আওয়াজ তুলছে আরএসএস-বিজেপি। সেই জিগির প্রত্যাখ্যান না করলে কয়েক দশক বাদে প্রতিবেশির অবস্থা হতে পারে ভারতেরও। 

Comments :0

Login to leave a comment