pathashree paschim Medinipur

ভাঙা রাস্তা ভাঙাই, চালু রাস্তায় টাকা বরাদ্দ!

জেলা

pathashree paschim Medinipur

চিন্ময় কর

ঘটা করে রাজ্য জুড়ে পথশ্রী প্রকল্পের উদ্বোধন। অন্তরালে পঞ্চায়েত ভোটের আগে দলীয় তহবিল ভরানোর লক্ষ্য। 
 

একই রাস্তাকে একাধিক প্রকল্প দেখিয়ে সেই রাস্তার দৈর্ঘ্য দুই থেকে তিন গুন বাড়িয়ে বরাদ্দ টাকা লুটের পরিকল্পনা। আবার কোথাও চালু রাস্তাকে পুনরায় রাস্তা নির্মাণের পথশ্রী প্রকল্পের সাইনবোর্ড বসানো হয়েছে। সেই সাইনবোর্ডে উল্লেখ করা হয়েছে কাজ শুরু ২৮ মার্চ। কিন্তু এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত রাস্তা তৈরির কোনও কাজই চোখে পড়েনি। তাহলে ঘটা করে পুরানো রাস্তা ওপর ফের নতুন রাস্তা নির্মাণের সাইনবোর্ড লাগানোর নামই কি পথশ্রী? এমন দৃশ্য দাসপুর ২নম্বর ব্লকের একাধিক গ্রামপঞ্চায়েত এলাকার একাধিক মৌজায়। 
এমন ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে বিডিও দপ্তরে অভিযোগ দায়ের করেছেন দাসপুর পঞ্চায়েত সমিতির সিপিআই(এম)’র নির্বাচিত সদস্য লক্ষীকান্ত ভৌমিক। গত ২৮মার্চ একাধিক জায়গায় পথশ্রী প্রকল্পের নাম করে এমন সাইনবোর্ড বসানো হয়, কলকাতা থেকে মুখ্যমন্ত্রীর উদ্বোধনের পরে। সিপিআই(এম) পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কমিটির সদস্য রনজিত পাল বলেন, এমন সাইনবোর্ড বসানো নজরে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিডিও-কে ছবি সমেত জানতে চাওয়া হলে তিনিও কোনও উত্তর দিতে পারেননি।

দেখা যায় পঞ্চায়েত সমিতি রাস্তা নির্মাণের জন্য যে ব্যায় বরাদ্দ করেছেন, সেই রাস্তা আবারো পথশ্রী প্রকল্পে পৃথক ব্যায় বরাদ্দ সাইনবোর্ড লাগিয়েছে। এমন ঘটনায় কোটি কোটি টাকাস দুর্নীতির গন্ধ। দাসপুর -২ ব্লকে ১৪ টি অঞ্চলে গত ২৮মার্চ পথশ্রী প্রকল্পের যে সব জায়গায় বোর্ড বসেছে তাতে দেখা যাচ্ছে কোথাও চালু ঢালাই রাস্তাকে আবারো নির্মাণ করার বিজ্ঞপ্তি। অথচ দীর্ঘ দশ বছর  ব্লক এলাকার একাধিক রাস্তার অবস্থা ভয়াবহ, সামান্য বৃষ্টিতে জল কাদাতে হাঁটা যায় না। এই গ্রীষ্মেও সামান্য বৃষ্টিতেও জল-কাদা রাস্তায় সাধারণ মানুষকে দুর্বিষহ যন্ত্রনার মধ্যে পড়তে হয়।

জোতঘনশ্যাম ও দুধকোমরা দুইটি পঞ্চায়েতের সংযোগকারী গুরুত্তপূর্ণ রাস্তা। এই রাস্তার দু’দিকে দু’টি পথশ্রী প্রকল্পের সাইন বোর্ড বসানো হয়েছে। রাস্তার মোট পরিমাণ ৭৩০ মিটার। কিন্তু এই পথশ্রী প্রকল্পে দু’টি বোর্ডের একটিতে ৮০০ মিটার আর অপরটিতে ৬০০ মিটার দেখিয়ে মোট ১৪০০ মিটার রাস্তা নির্মাণের বরাদ্দ দেখানো হয়েছে। প্রায় দ্বিগুন  দৈর্ঘ্য বাড়িয়ে ভূয়ো প্রকল্পের মাধ্যমে ২৫ লক্ষ  টাকা লুটের পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে অভিযোগ। 
দুধকোমরা অঞ্চলের কুলটিকরি মৌজায় ছাতিক পাড়া,মাজি পাড়ার রাস্তা, কুলটিকরী আশ্রম মোড়  থেকে মাগুরিয়া উত্তর পাড়ার মাজি পাড়া রাস্তা সম্পূর্ণ মাটির থাকলেও সেই রাস্তা ঢালাইয়ের ভূয়ো হিসাব দিয়ে টাকা লুট করা হয়। এমন দুর্নীতির প্রতিবাদে জোট বাঁধে এলাকার মানুষজন। জনরোষ হওয়ায় গত তিন বছর আগে নতুন বরাদ্দতে সেই রাস্তা ঢালাই করা হয়। এখন সেই রাস্তাকেও পুনরায় নির্মাণ হবে এমন পথশ্রী প্রকল্পের সাইনবোর্ড বসানো হয়। তাতে লেখা হয়েছে কাজ শুরু ২৮-৩ ২০২৩। কিন্তু এখনও পর্যন্ত ঢালাইয়ের কোনও উপকরণ এলাকায় আসেনি। আর চালু রাস্তা কি করে আবার নতুন ভাবে তৈরি হতে পারো এবং তার জন্য অর্থও বরাদ্দ হয় এবং তাও আবার মুখ্যমন্ত্রীর হাত ধরে! আবার বেনাই গ্রাম পঞ্চায়েতের তেঁতুলতোলা থেকে চন্দ্রেস্বর পুল পর্যন্ত রাস্তার পরিমাপ ২.৯ কিমি। যদিও খাতায় কলমে তা দেখা হয় সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার। আর তা দেখিয়ে ২.৭৪ কোটি  টাকা বরাদ্দ বাড়িয়ে সরকারি টাকা লুটের নির্বিকার আয়োজন!

সরকারি প্রকল্পকে ব্যবহার করো এ’যেন অবাধ লুটের চারণভূমি। 
এমন স্কিম কে বানালো, কে অনুমোদন দিল কিছুই বলতে পারছেন না বিডিও। তাহলে কি তৃণমূল নেতাদের ফর্দ মতো কোনও কিছু যাচাই না করে এমন স্কিম মুখ্যমন্ত্রীর হাত দিয়ে উদ্বোধন করানো আসলে পঞ্চায়েত ভোটের আগে পরিকল্পিত কোন কৌশল?

Comments :0

Login to leave a comment