আর কর কাণ্ডে মিথ্যার বেসাতি হল। আন্দোলন ভাঙতে হাসপাতালে ভাঙচুর কেন? মিথ্যা মামলায় জড়ানো হল যুবদের। মুখ্যমন্ত্রী মিথ্যাচারী। কেন সন্দীপ ঘোষ্কে সাস্তি দেওয়া যাবে না? কেন পুলিশের বিরুদ্ধে তদন্ত হবে না? উত্তর আমাদের চাই।
সোমবার মৌলালি যুবকেন্দ্রে এ কথা বলেছেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। এদিন কমিউনিস্ট নেতা, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এবং যুব আন্দোলনের প্রাক্তন নেতা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের স্মরণ সভায় একথা বলেন তিনি। ডিওয়াইএফআই পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটি সভার আয়োজন করে।
এদিনই সাজা হয়েছে আরজি কর কাণ্ডে কেবল সিভিক ভলান্টিয়ারের, অদূরে শিয়ালদহ আদালতে। সেলিম বলেন, দক্ষিণপন্থার উত্থান মানেই এই মিথ্যার বেসাতি।
তিনি প্রশ্ন তোলেন, একজন পুলিশ অফিসার অন্যের উর্দি পরে হাজির হয় কেন? কাকে বাঁচানোর জন্য। কেন ১৪ আগস্ট হামলা কেন। তার তদন্ত হলো না কেন? তখন তো সঞ্জয় জেলে। সত্য কেউ বললে এই কলকাতা পুলিশ ঢেকে দেয়। আর মিথ্যা বললে তার জন্য প্রচারের ব্যবস্থা করে। মিথ্যার বেসাতি চলছে। দক্ষিণপন্থার উত্থান মানেই তাই। আমাদের এর বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে।
তিনি বলেন, রায় মানেই বিচার নয়। আমাদের বিচার চাই। তার জন্য মানুষকে আরো সংগঠিত করতে হবে। যুব কর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা তা করবেন। তার মধ্যে দিয়েই বুদ্ধদার অমলিন স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানানো সম্ভব।
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে স্মরণ করে বলেন, প্রতিকূল সময়ে বিকল্প গড়ার যে লড়াই, এ রাজ্যে সেই সময় আবার উপস্থিত হয়েছে। রোজ মিথ্যা, দুর্নীতি। শিক্ষা, স্বাস্থ্যে, রোজগারে, কৃষিতে হামলা। পরিযায়ী হচ্ছে।
বুদ্ধদা চেয়েছিলেন রাজ্যকে গড়ে তুলতে। এখানকার মেধা বাইরে গিয়ে আউটসোর্সিং করবে না, বুদ্ধদা চেয়েছিলেন।
দক্ষিণপন্থা সম্পর্কে সচেতন করে সেলিম বলেন, বুদ্ধদা নতুন কিছু গড়তে চাইতেন।
বিশ্ব সাহিত্য, সিনেমা, শিক্ষা, সংস্কৃতির যে চেতনা তার, সেটা ধ্বংস করতে চায় আজকের দক্ষিণপন্থীরা। সে কারণেই মুক্তিকামীর লড়াইয়ে সংহতির আন্দোলনকে আক্রমণ করে। এখানে যেমন প্যালেস্তাইন নিয়ে বামপন্থীদের সরব কেন, এমন প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। সেলিম বলেন যে, আসলে দক্ষিণপন্থা মুক্তিকামী লড়াইয়ের শরিক না। সে কারণেই বিরোধিতা করে সংহতি আন্দোলনের। আজকে যারা দেশপ্রেমিক সাজছে, তারা ব্রিটিশদের সাহায্য করেছিল। আজকের দাঁড়িয়ে আবারও দক্ষিণপন্থার উত্থান হচ্ছে। তার মেকাবিলা করতে হবে।
এদিন বক্তব্য রাখেন যুব আন্দোলনের প্রাক্তন নেতা হান্নান মোল্লা, রবীন দেব, আভাস রায়চোধৌরী। ডিোয়াইএফআই রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী মুখার্জি ও সভাপতি ধ্রুবজ্যোতি সাহা পরিচালনা করেন সভা। দেখানো হয়েছে তথ্যচিত্র। বক্তৃতার মাঝে মাঝে হয়েছে গান, আবৃত্তি। বুদ্ধেব ভট্টাচর্যের স্ত্রী মীরা ভট্টাচার্য এবং রাজ্যে সংগঠিত যুব আন্দোলনের আরেক প্রতিষ্ঠাতা নেতা দীনেশ মজুমদারের কন্যা।
মহম্মদ সেলিম বলেন যে যুব ফেডারেশনের শপথ গ্রহণের সময় আজ। এ লড়াই বাঁচার লড়াই, এ লড়াই লড়তে হবে, এ লড়াই জিততে হবে। স্মরণ করে এমন কিছু কর্মসূচি নেওয়া উচিত যাতে এই প্রজন্ম পরের প্রজন্ম শিক্ষা নিতে পারে।
ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য শুধু নেতা ছিলেন না। ছিলেন শিক্ষক, বড় দাদা।
গত শতাব্দীর ষাট এবং সত্তরের ঝোড়ো সময়ে বিবরণ দেন সেলিম। তিনি বলেন যে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী সংগ্রাম, ভিয়েতনামের মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সংহতি, রাজ্যজুড়ে কৃষক আন্দোলন-শ্রমিক আন্দোলন, তখন বেকারি বাড়ছে, শিক্ষাঙ্গণে সন্ত্রাসের মোকাবিলা করতে হয়েছে। আরেকদিকে কমিউনিস্ট আন্দোলনে সংশোধন এবং সংকীর্ণতাবাদের মোকাবিলা করা, আবার আধা ফ্যাসিস্ট আক্রমণের মোকাবিলার পথে চলতে হয়েছে।
আজকের বাস্তবতা উল্লেখ করে সেলিম বলেন যে সাম্রাজ্যবাদকে যারা শত্রু মনে করেন না তাঁরা সর্বদা সংহতি আন্দোলনের বিপক্ষে থাকে। যারা স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশ নেয়নি তারা তার উত্তরাধিকারকে রক্ষায় আগ্রহী নয়। জাত-পাত-ধর্ম নির্বিশেষে এককাট্টা হয়ে লড়াইয়ের ঐতিহ্য বহন করতে চায় না। নরেন্দ্র মোদী ৩৭০ ধারা বাতিল করে বললেন ‘এটাই স্বাধীনতা’। রামমন্দিরের উদ্বোধন করে বললেন ‘এটাই স্বাধীনতা’। আসলে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী স্বাধীনতার উত্তরাধিকারকে অস্বীকার করে। বাংলাদেশেও একই সুর মৌলবাদের গলায়। মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক শক্তি হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার দিনকে বলল স্বাধীনতা। ১৯৭১-এ রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম, স্বাধীনতার ঐতিহ্যকে অস্বীকার করে ওপারের মৌলবাদীরাও। কেন করে? কারণ তাদের রক্তে স্বাধীনতার আন্দোলন নেই।
সেলিম রাজ্যে ২০১১’র প্রসঙ্গ টেনে মনে করিয়েছেন যে বামফ্রন্ট পরাজিত হওয়ার পর মমতা মুখ্যমন্ত্রী হলেন। অনেকে বলছিলেন ‘বাংলা মুক্ত হলো’। আসলে বাংলার মুক্তিসংগ্রামের ঐতিহ্যকে তারা অস্বীকার করে।
সেলিম বলেন যে বুদ্দদেব ভট্টাচার্য বলতেন সব মুক্তির আন্দোলন, বিশ্বে যে কোনও প্রান্তে, আমাদের আন্দোলন। তাই যারা ধ্বংসের পক্ষে তাদের গান, তাদের সংস্কৃতি আর সৃষ্টির পক্ষে বা মুক্তির পক্ষে যারা তাদের সংস্কৃতি এক হবে না।
সেলিম বলেন যে দক্ষিণপন্থা একদিকে বলবে বিশ্বায়িত ভুবন। আরেকদিকে কূপমণ্ডুক করবে, সংহতি আন্দোলনকে আক্রমণ করবে।
এ রাজ্যে আন্তর্জাতিক বইমেলা হচ্ছে সেখানে বাংলাদেশের কেউ থাকছে না। বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর জঘন্য আক্রমণ হচ্ছে। আমরা তার তীব্র নিন্দা করে চলেছি। কিন্তু এ সময়েই চেন্নাইয়ে বইমেলায় বাংলাদেশ থাকছে। এখনই, এদেশেই। বাংলাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছি, কোন কূপমণ্ডুকতার জায়গায় নিয়ে যাচ্ছি, এরপরও বলব বইমেলা আন্তর্জাতিক?
সেলিম বলেন, বিক্ষুব্ধ সময়ে বন্ধুর পথে বাস্তবোচিত বিকল্প গড়ে তোলার লড়াই এখন আবার চলছে। প্রতিদিন সত্যকে চাপা দেওয়া হচ্ছে। বর্তমান তো বটেই, অনাগত ভবিষ্যতেরও সব উন্নতির পথ রুদ্ধ করা হচ্ছে। তার জন্য স্বাস্থ্য, শিক্ষা, রোজগার, শ্রমিক, কৃষকের ওপর হামলা। বুদ্ধদা চেয়েছিলেন রাজ্যকে গড়ে তুলতে রাজ্যের মানুষের যুবদের মেধা ক্ষমতা আরও পরিমার্জিত করে প্রশিক্ষণের মধ্যে দিয়ে গড়ে তুলতে। চেয়েছিলেন এখানকার মেধা বেঙ্গালুরুতে যেতে বাধ্য হবে না। দক্ষিণপন্থার উত্থান মানে আমাদের যা কিছু গড়ে তোলা হয়েছিল তাকে ধ্বংস করা। তাই চলছে। তার বিরুদ্ধে লড়তে হবে।
Comments :0