FARMERS PROTEST

কৃষকদের দমনে ক্ষোভ, প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি সংযুক্ত কিষাণ মোর্চার

জাতীয়

FARMERS MOVEMENT CONGRESS CPIM BJP AAP INDIAN POLITICS BENGALI NEWS

২৩টি ফসলের সহায়ক মূল্যের সরকারি গ্যারেন্টি, কৃষি ঋণ মুকুব এবং ২০২০-২১ সালের কৃষক আন্দোলনের সময় কৃষকদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলা খারিজের দাবিতে পথে নেমেছেন দেশের অন্নদাতারা। সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা থেকে ভেঙে বের হওয়া সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা(অরাজনৈতিক) এবং কিষাণ মজদুর সংঘর্ষ কমিটির ডাকে দিল্লি অভিযানে সামিল হয়েছেন কৃষকরা।

কৃষকদের উপর অত্যাচার চালানোর অভিযোগে কেন্দ্রীয় সরকারকে চিঠি দিয়েছে সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা। চিঠিতে সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা অভিযোগ করেছে, কৃষকদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করতে চাইছে কেন্দ্র। একইসঙ্গে সমস্ত সমমনষ্ক সংগঠনকে ১৬ ফেব্রুয়ারি গ্রামীণ ভারত ধর্মঘটে সামিল হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা। 

কৃষক আন্দোলন আটকাতে দিল্লি এবং হরিয়ানা পুলিশের তরফে চরম আক্রমণাত্মক ভূমিকার বিরোধীতা করে এবং আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে বার্তা দিয়েছেন সিপিআই(এম)’র পলিটব্যুরো সদস্য বৃন্দা কারাত। ছত্তিশগড়ে ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রার মঞ্চ থেকে কৃষকদের পক্ষে আওয়াজ তুলেছেন কংগ্রেসের অন্যতম শীর্ষনেতা জয়রাম রমেশ। দিল্লি এবং পাঞ্জাবের আপ সরকারের তরফেও কৃষকদের পাশে থাকার বার্তা দেওয়া হয়েছে। 

ঝাড়খণ্ডে সিপিআই(এম)’র রাজ্য কমিটির বৈঠকে যোগ দিতে রাঁচি পৌঁছেছেন বৃন্দা কারাত। সেখান থেকে তিনি জানিয়েছেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদী সরকার শ্রমিক এবং কৃষকদের অধিকার কেড়ে নেওয়ার পাশাপাশি তাঁদের সঙ্গে বেইমানি করেছে। কেন্দ্র কেন এমএসপি বা ন্যূনতম সহায়তা মূল্যের নিশ্চয়তা আইন পাশ করাচ্ছে না কৃষকদের স্বার্থে?’’

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি কৃষিবিজ্ঞানী এমএস স্বামীনাথনকে ভারতরত্ন সম্মান দিয়েছে কেন্দ্র। কারাতের ক্ষোভ, ‘‘স্বামীনাথনকে সম্মান দিলেও তাঁর তৈরি করা ফর্মুলা দেশে চালু করছে না কেন্দ্রীয় সরকার। এটা দ্বিচারিতা ছাড়া কিছুই নয়। এই কারণেই নরেন্দ্র মোদীর আশ্বাসকে ভুয়ো এবং মিথ্যা বলছেন কৃষকরা।’’

প্রসঙ্গত, দেশের কৃষকদের দুর্দশা দূর করার জন্য একটি ফর্মুলা ঠিক করেন এমএস স্বামীনাথন। সেই ফর্মুলা অনুযায়ী, তিনি সুপারিশ করেন, কৃষকদের ফসলের উৎপাদন মূল্যের দেড়গুণ দাম পাওয়া উচিত। ২০২০ এবং ২০২৪’র কৃষক আন্দোলনের প্রধান দাবি হল স্বামীনাথন কমিশনের ঠিক করে দেওয়া ফর্মুলাকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে হবে। 

দিল্লি অভিযানের পাশাপাশি ১৬ ফেব্রুয়ারি দেশজুড়ে গ্রামীণ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন। এদিন সেই ধর্মঘটকে সমর্থন জানিয়েছেন বৃন্দা কারাত। 

সোমবার ছত্তিশগড়ের সরগুজা জেলার অম্বিকাপুরে ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রার সভা করে কংগ্রেস। তারপর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে জয়রাম রমেশ বলেছেন, ‘‘কয়েকদিন আগে কেন্দ্র কৃষকনেতা চরণ সিং এবং কৃষিবিজ্ঞানী এমএস স্বামীনাথনকে সম্মান জানিয়েছিল। কিন্তু তারপরে সপ্তাহ গড়াতে না গড়াতেই কৃষকদের উপর অত্যাচার নামিয়ে আনা হয়েছে।’’

জয়রাম রমেশ বলেছেন, ‘‘মোদী সরকার চাঁদাদাতাদের ১৪ লক্ষ কোটি টাকা ঋণ মুকুব করতে পারলেও, দেশের অন্নদাতাদের ১ লক্ষ কোটি টাকা ঋণ মুকুব করছে না। সরকার কৃষকদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ। এরথেকেই নরেন্দ্র মোদী সরকারের দৃষ্টিভঙ্গী স্পষ্ট হয়েছে।’’

এদিন জয়রাম রমেশের পাশাপাশি রাহুল গান্ধীও সরকারের কৃষক বিরোধী ভূমিকার তীব্র নিন্দা করেছেন। 

পাঞ্জাব থেকে হরিয়ানা হয়ে দিল্লির দিকে এগিয়েছেন কৃষকরা। কৃষক সংগঠনগুলির দাবি, নির্বাচনের আগে সরকারকে ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের নিশ্চয়তা দিতে হবে। সোমবার চন্ডীগড়ে কৃষক নেতৃত্বের সঙ্গে একপ্রস্থ আলোচনা হয় কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধিদের। কিন্তু সেখানে কোনও রফাসূত্র বেরোয়নি। এই মুহূর্তে দিল্লির উপকন্ঠে সিঙ্ঘু সীমান্তে পৌঁছে গিয়েছে কৃষকদের বিশাল বড় মিছিল। কৃষকদের আটকাতে রাবার বুলেট, টিয়ার গ্যাস এবং লাঠি চার্জ করে পুলিশ। পালটা প্রতিরোধ গড়ে নিজেদের অবস্থান ধরে রেখেছেন কৃষকরা। 

দিল্লির পাশাপাশি পাঞ্জাব হরিয়ানার শম্ভু সীমান্তেও দিল্লিগামী কৃষকদের স্রোত আটকেছে হরিয়ানা পুলিশ। কৃষকদের অভিযোগ, রাস্তায় লোহার পেরেকের চাদর, কংক্রিটের চাঙড় ফেলে কৃষকদের কনভয় আটকানোর চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ। 

রুশ ইউক্রেন যুদ্ধে ড্রোন থেকে গ্রেনেড সহ বিভিন্ন বিস্ফোরক ফেলতে দেখা গিয়েছে দুইপক্ষকে। একই কায়দায় ড্রোন থেকে কৃষকদের উপর টিয়ার গ্যাসের শেল ফেলতে দেখা গিয়েছে পুলিশকে। কালভার্টের উপর থেকে কৃষকদের শরীরের উপরের অংশ লক্ষ্য করে রাবার বুলেট ছুঁড়তেও দেখা গিয়েছে পুলিশকে। 

এই প্রসঙ্গে কিষাণ মজদুর সংঘর্ষ কমিটি, পাঞ্জাবের সাধারণ সম্পাদক সারওয়ান সিং পান্ধের সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘‘আমরা দেশের কৃষক। আমরা দেশের শত্রু নই। আমাদের সঙ্গে শত্রুর মত আচরণ করা বন্ধ করুন। আমরা এমএসপি গ্যারেন্টি আইন এবং স্বামীনাথন কমিশনের রিপোর্টের বাস্তবায়ন চাই। কেন্দ্রীয় সরকার তো নিজেই এই দাবি মেনে নিয়েছিল একটা সময়। তাহলে এখন বাস্তবায়িত করছে না কেন?’’

 

 

Comments :0

Login to leave a comment