লোকসভা নির্বাচনের গণনা প্রক্রিয়াকে সুষ্ঠু ও অবাধ রাখার দাবি জানিয়ে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনকে খোলা চিঠি দিল সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা। সাত দফায় নির্বাচন শেষে এখন অপেক্ষা গণনার। মঙ্গলবার গণনা হবে। তারই আগে কমিশনকে চিঠি দিলেন কৃষকরা।
আন্দোলনের পথে হেঁটে বিজেপি সরকারের আনা তিনটি কৃষি বিলকে প্রত্যাহারে বাধ্য করিয়েছিলেন কৃষক সংগঠনগুলির যৌথমঞ্চ সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা। সোমবার সেই সংগঠনের তরফে খোলা চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘‘গোটা দেশের কৃষকদের মনে হয়েছে, নির্বাচনের গণনা প্রক্রিয়ায় কারচুপি হতে পারে। জনগণের রায়কে উলটে দিয়ে, ক্ষমতাসীন শক্তিকে ক্ষমতায় টিকে থাকার সুযোগ করে দেওয়ার চেষ্টা হতে পারে। এই চিঠির মাধ্যমে সেই আশঙ্কার কথা আপনাদের সামনে তুলে ধরছি আমরা।’’
চিঠিতে সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা লিখেছে, ‘‘এই প্রথমবার লোকসভা নির্বাচনে কৃষকরা সরাসরি বিজেপির নির্বাচনী প্রচারের বিরোধীতা করেছিল। কৃষকরা মনে করেছেন, সমস্ত ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য চালু করা, কৃষি ঋণ মকুব করার মত লিখিত প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে বিজেপি। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে তার বিরোধীতা করেছে কৃষকরা।
সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা লিখছে, ‘‘কৃষক আন্দোলনের চাপে একদিকে যেমন কৃষক ও গরীব মানুষের রুজি রুটির সুরক্ষা সুনিশ্চিত করা গিয়েছে, একইসঙ্গে সাংবিধানের গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ ও যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে রক্ষার বিষয়ে জনমত গঠন সম্ভব হয়েছে। এক কথায় নির্বাচনী লড়াইয়ে বিজেপি ও সাধারণ মানুষ মুখোমুখি হয়েছে।’’
কেন্দ্রীয় কৃষি আইন বিরোধী কৃষক আন্দোলনের উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘‘ ১৩ মাস ধরে চলা ঐতিহাসিক কৃষক আন্দোলনে সাড়ে সাতশো’র বেশি কৃষক প্রাণ হারান। শ্রমিক সংগঠন সহ সমাজের বিভিন্ন অংশ এই আন্দোলনের পাশে এসে দাঁড়ায়।’’
কৃষক সংগঠনগুলি একযোগে বলছে, ‘‘ আন্দোলনকে দুর্বল করে বিজেপি একাধিকবার কৃষকদের দেশদ্রোহী, বিদেশি উগ্রপন্থার মদতপ্রাপ্ত শক্তি, খালিস্তানী বলে দাগানোর চেষ্টা করেছে। নির্বাচনের প্রচার চলাকালীন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব নির্বাচনী আচরণ বিধি লঙ্ঘন করে দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতি ঘৃণা তৈরির চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছে। ইচ্ছাকৃত ভাবে কদর্য ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে সামাজিক স্থিতিকে নষ্ট করার জন্য। সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শের উপর আঘাত হানা হয়েছে।’’
চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘‘সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের কাছে আবেদন জানিয়েছিল, কোনও ব্যক্তি আচরণ বিধি ভাঙলে ছয় বছর অবধি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করা থেকে ও প্রচার করার ক্ষেত্রে তাকে নিষিদ্ধ করা হোক। নরেন্দ্র মোদী আইন ভাঙলে তার উপরেও এই নীতি কার্যকরী হোক। কিন্তু সেই আবেদনে সাড়া দেওয়া দূরে থাক, কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন আইন ভঙ্গে কোনও কড়া ব্যবস্থা নেয়নি। সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের ব্যর্থতা বিজেপির বিভেদমূলক আদর্শকে সুযোগ করে দিয়েছে সমর্থন আদায় করতে।’’
কৃষক সংগঠনগুলি মনে করছে, ‘‘নরেন্দ্র মোদীর ঘৃণা ভাষণে লাগাম পরাতে ব্যর্থ নির্বাচন কমিশনের সদিচ্ছা ও কার্যকারিতা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। তাঁরা মনে করছেন, গোটা নির্বাচনী ব্যবস্থার নিরপেক্ষতা হারিয়ে গিয়েছে, এবং ক্ষমতাসীন দলকে ক্ষমতায় রেখে দেওয়ার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। গণনায় কারচুপির আশঙ্কা সেই মনোভাবের ফসল।’’
অবাধ ও সুষ্ঠু গণনা প্রক্রিয়া নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে কৃষকরা বলছেন, ‘‘ নিয়ম মেনে গণনা প্রক্রিয়া চালাতে হবে কমিশনকে। নিয়মিত ব্যবধানে নির্বাচনী ফলাফল সবিস্তারে সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরতে হবে। নিয়ম মেনে গোটাটা পরিচালনা করতে হবে, যাতে সামান্যতম সন্দেহের অবকাশ না থাকে। আমরা চাই না দেশের কৃষক এবং সাধারণ মানুষ মনে করুন, দেশের একটিও লোকসভা কেন্দ্রে কারচুপির মাধ্যমে জনমতকে উলটে দেওয়া হয়েছে।’’
Comments :0