গোটা নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল হবে না, যাঁদের বেআইনিভাবে নিয়োগ করা হয়েছে কেবলমাত্র তাঁদেরই বাছাই করা হবে। বৃহস্পতিবার এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় একথা বলল সুপ্রিম কোর্ট। এদিন শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না এবং বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের বেঞ্চে এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলার শুরুতেই প্রধান বিচারপতি বলেন, এই মামলার দুটি বিষয় আদালত শুনবে, গোটা নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল হবে না এবং বেআইনিভাবে যাঁদের চাকরি দেওয়া হয়েছে তাঁদের বাছাই করা হবে। এর বাইরে এই মামলার আর কিছু নেই। অন্য বিষয় আদালত শুনবে না।
তবে এদিনও শুনানি শেষ হয়নি। মামলার শুনানি ফের পিছিয়ে গেছে। আগামী বৃহস্পতিবার মামলাটি শুনানির জন্য রাখা হয়েছে। এদিন এসএসসি’র পক্ষে আইনজীবী তৃণমূলের সাংসদ কল্যাণ ব্যানার্জি আদালতকে আবার জানতে গিয়েছিলেন, সিবিআই ওএমআর শিট সংক্রান্ত যে তথ্য আদালতকে দিয়েছে তা এভিডেন্স অ্যাক্টের (৬৫বি) ধারায় বিবেচনা করা উচিত। প্রধান বিচারপতি জানিয়েছেন, এবিষয়ে আর কোনও শুনানি হবে না। এবিষয়ে যা শুনানি হয়েছে, তা কলকাতা হাইকোর্ট শুনেছে। তাই এই সব বিষয় আর শোনার প্রয়োজন নেই। এটি খুবই সাধারণ মামলা। এদিন যোগ্য প্রার্থীদের পক্ষে আদালতে সওয়াল করেছেন আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য। তাঁকে সহযোগিতা করেছেন আইনজীবী ফিরদৌস সামিম, সুদীপ্ত দাশগুপ্ত, গোপা বিশ্বাস।
প্রসঙ্গত, গত ২২ এপ্রিল শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষককের চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। ২০১৬ সালের স্টেট লেবেল সিলেকশন টেস্টের (এসএলএসটি) ২৫,৭৫৩ শিক্ষকের চাকরি বাতিল করেছিল আদালত। এই বাতিলের মধ্যে রয়েছে গ্রুপ-ডি, গ্রুপ-সি শ্রেণির শিক্ষাকর্মীরাও। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং মহম্মদ শব্বর রশিদির বিশেষ ডিভিসন বেঞ্চ এসএসসি’র শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় এই রায় দিয়েছিল। এই নির্দেশের বিরোধিতা করে রাজ্য সরকার, এসএসসি সহ প্রায় ১০ জন মামলাকারী মামলা দায়ের করেন সুপ্রিম কোর্টে। গত ২৯ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্ট প্রথম শুনানির পর কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ বহাল রেখে শুধু রাজ্য মন্ত্রীসভার ক্ষেত্রে সিবিআই তদন্তের নির্দেশের ওপর স্থগিতাদেশ দিয়েছিল।
গত ৭ মে এই নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সিবিআই তদন্ত বজায় রেখে কিছুদিনের জন্য সকলের চাকরি বহাল রেখেছিল সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালত বলেছিল সকল প্রার্থীকেই এই মর্মে মুচলেকা দিতে হবে যে চাকরিতে অযোগ্য প্রমাণ হলে বেতনের টাকা ফেরত দিতে হবে। কলকাতা হাইকোর্টের দেওয়া চাকরি বাতিলের নির্দেশের ওপর শর্তাধীন অন্তর্বর্তীকালীন স্থগিতাদেশ জারি করে শীর্ষ আদালত আরও বলেছিল, যোগ্য এবং অযোগ্যদের দ্রুত বাছাই করতে হবে। এই বাছাই পর্ব সারতে হবে ৭০ দিনের মধ্যে। সেদিন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় এই স্থগিতাদেশ দেবার আগেই মন্তব্য করেছেন, এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় পদ্ধতিগত জালিয়াতি হয়েছে। তবে ২৫,৭৫৩ জনের চাকরি বহাল রেখেছিল শীর্ষ আদালত তবে সবাই মুচলেকা দিয়ে চাকরি করবেন।
বিচারপতি চন্দ্রচূড় বলেছিলেন, এই চাকরি বাতিলের মামলায় নিঃশর্ত স্থগিতাদেশ দেওয়া যাবে না। অযোগ্য প্রার্থীদের ক্ষেত্রে যে সিবিআই তদন্ত চলছে তা চলবে। রাজ্য মন্ত্রীসভার বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্ত বহাল থাকলেও কোনও কড়া পদক্ষেপ নেওয়া যাবে না। সুপ্রিম কোর্টের সেই নির্দেশের ফলে যেমন যোগ্য প্রার্থীদের চাকরিও বহাল রয়েছে, তেমনই অযোগ্য প্রার্থীদের চাকরিও বহাল রয়েছে। তবে সুপ্রিম কোর্ট সেদিন শুনানির সময় একাধিকবার বলেছে যোগ্য এবং অযোগ্য প্রার্থীদের বাছাই করার জন্য এসএসসি’র হাতে কোনও নথি নেই। ফলে যোগ্য প্রার্থীদের চিহ্নিত করতে হবে। এর সঙ্গেই শীর্ষ আদালত মন্তব্য করেছিল নিয়োগকারী সংস্থাকে বুঝতে হবে সম্পূর্ণ প্যানেল বাতিল হওয়ার আগে অযোগ্য প্রার্থীদের বাছাই করতে হবে।
SSC recruitment process not scrapped, ineligible candidates must be identified: Supreme Court
এসএসসি গোটা নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল নয় অযোগ্যদের বাছাই করতে হবে : সুপ্রিম কোর্ট
×
Comments :0