শ্যামনগর ফিডার রোডে শ্রী অন্নপূর্ণা কটন মিল গত ১৪ আগস্ট থেকে উৎপাদন বন্ধ হয়ে আছে। মিল মালিক কারখানার গেটে কাজ বন্ধের নোটিশ ঝুলিয়ে দিয়েছে। এর ফলে কারখানায় প্রায় ৬০০ শ্রমিক কর্মহীন হয়ে কেউ অর্ধাহারে কেউ অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন। অবিলম্বে এই মিল খোলা ও শ্রমিকদের গ্রাচ্যুইটি, বোনাস সহ সমস্ত বকেয়া পাওনা টাকা মেটানোর দাবিতে সিআইটিইউ অনুমোদিত শ্রী অন্নপূর্ণা কটন মিল ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের উদ্যোগে মিলের গেটের সামনে এক অবস্থান বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়।
প্রায় ৭০ বছরের পুরনো একটি বস্ত্র শিল্প শ্যামনগরের শ্রী অন্নপূর্ণা কটন মিল। এই মিলে উৎপাদিত দ্রব্যের চাহিদা ভালো ছিল। ২০০০ সালে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। বামফ্রন্টের সেই সময়ে এই মিলের উৎপাদন চালু রাখার জন্য বামফ্রন্ট সরকার অর্থ দেয়। কেন্দ্রীয় সরকারের নীতির কারণে বাংলার বস্ত্র শিল্প সঙ্কটে পড়ে। রাজ্যে একটার পর একটা বস্ত্র শিল্প বন্ধ হয়ে যায়। একমাত্র শ্রী অন্নপূর্ণা কটন মিল খোলা ছিল। কিন্তু গত ১৪ আগস্ট মিল মালিক কারখানার উৎপাদিত দ্রব্যের চাহিদা বাজারে নেই এই অজুহাতে মিল গেটে কাজ বন্ধের নোটিশ ঝুলিয়ে দেয়। এই মিলের শ্রমিক কর্মচারীরা কর্মহীন হয়ে পড়েন। এই কারখানার প্রায় ত্রিশ একরের মত জমি আছে। এই কারখানা সমেত ১৪ একর জমিতে শিল্প পার্ক হবে বলে রাজ্যের শাসকদলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। কিন্তু এই কারখানা বাঁচিয়ে তার যে বিপুল পরিমাণ অব্যাবহৃত জমি আছে সেখানে শিল্প পার্ক করা উচিত বলে এই কারখানার শ্রমিক কর্মচারীরা জানান।
এদিনের এই অবস্থান বিক্ষোভ কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন সিআইটিইউ উওর চব্বিশ পরগনা জেলা কমিটির সম্পাদিকা গার্গী চ্যাটার্জি, সিআইটিইউ নেতা সুবীর মৌলিক, সোমনাথ সরকার, সৌমিত্র নাগ, সুব্রত দাস, গোপা দাস সহ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ। এই সভায় সভাপতিত্ব করেন শ্রীঅন্নপূর্ণা কটন মিল ওয়ার্কাস ইউনিয়ন সাধারণ সম্পাদক চিরন্তন গাঙ্গুলী।
বিক্ষোভ সভায় গার্গী চ্যাটার্জী বলেন, শিল্প পার্ক হওয়ার সাথে কারখানা চালু রাখার কোনো সম্পর্ক নেই। এই কারখানার পাশে অব্যাবহৃত অনেক খালি জমি পড়ে আছে। সেই জমিতে শিল্প পার্ক করা যেতেই পারে। সেখানে শিল্প পার্ক না করে এই কারখানার জমিতেই শিল্প পার্ক হওয়ার কথা বলা হচ্ছে। এই কারখানার শ্রমিকরা ভয়াবহ আর্থিক সংকটে দিন কাটাচ্ছেন। রাজ্যের বহু জায়গায় শিল্প পার্ক হয়ে বন্ধ হয়ে গেছে। তিনি বলেন, ১৯৪৫ সাল থেকে একটি ঐতিহ্যবাহী কারখানা অত্যন্ত সুস্থ শিল্প পরিবেশে রয়েছে। এই কারখানার উৎপাদন চালু রাখার দায়িত্ব রাজ্যের শিল্প দপ্তরকে নিতে হবে। শ্রমিকদের মজুরি নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাজ্য সরকারের, সেই দায়িত্ব বর্তমান সরকার পালন করছে না। তিনি আরো বলেন, পশ্চিমবঙ্গে শিল্প পরিস্থিতি এবং কেন্দ্রীয় সরকারের নীতির ফলে গোটা দেশে কটন টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রি সঙ্কটের মুখে পড়েছে। রাজ্য সরকার শিল্প মেলা করছেন বছরের পর বছর। একটিও নতুন শিল্প আসে নি। অন্যদিকে চালু কারখানাগুলো একটার পর একটা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। চালু কারখানার জমি বেঁচে দেওয়ার অভিযোগ উঠছে। এর ঠিক পাশেই ডানবার কটন মিলের জমি প্রোমোটারের হাতে তুলে দেওয়ার চক্রান্ত চলছে।
Workers Agitation
মিল খোলার দাবিতে অবস্থান বিক্ষোভ শ্যামনগরে

×
Comments :0