‘‘ন্যায়বিচার চাওয়ায় কি আমরা দেশদ্রোহী হয়ে গেলাম?’’ পুরস্কার ফিরিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে সরাসরি জানতে চাইলেন কুস্তিগির বীনেশ ফোগট। বহু পরিশ্রমের প্রতীক ধ্যানচাঁদ খেলরত্ন এবং অর্জুন পুরস্কার ফিরিয়ে দিচ্ছেন তিনি। মোদীকে মঙ্গলবার দীর্ঘ চিঠি লিখেছেন। সেই চিঠি প্রকাশ করেছেন নিজের এক্স হ্যান্ডেলে।
দীর্ঘ লড়াইয়ের পর যৌন হেনস্তায় অভিযুক্ত বিজেপি সাংসদ ব্রিজভূষণ শরণ সিংকে তাঁরা জাতীয় কুস্তি ফেডারেশনের গদি থেকে সরাতে পারলেও সংস্থার নির্বাচনে এমন একজন জিতেছেন, যিনি সাংসদের কাছের লোক। গত বৃহস্পতিবার ফলাফল বেরনোর পরই কুস্তিগির সাক্ষী মালিক খেলা ছেড়ে দেন। কাঁদতে কাঁদতে নিজের বুট খুলে রেখে দেন টেবিলের উপর। পরের দিনই পদ্মশ্রী ফিরিয়ে দেন আরেক খ্যাতনামা কুস্তিগির বজরঙ পুনিয়া। ব্রিজভূষণ-ঘনিষ্ঠ সঞ্জয় সিং রেসলিং ফেডারেশনের প্রধান হওয়ার পর বীনেশ সেদিন বলেছিলেন, ‘‘এবার যৌন হেনস্তা আরও বাড়বে।’’ এদিন অত্যন্ত যন্ত্রণার সঙ্গেই তিনি লিখেছেন, ‘‘এই পুরস্কার দু’টি ফিরিয়ে দিচ্ছি, যাতে সম্মানের সঙ্গে বাঁচার রাস্তায় এগুলি বোঝা হয়ে না দাঁড়ায়।’’
হিন্দিতে লেখা মর্মস্পর্শী ওই চিঠিতে বীনেশ প্রধানমন্ত্রীকে বলেছেন, ‘‘আমরা যখন পদক জিতি, তখন আমাদেরকে দেশের গর্ব বলা হয়। কিন্তু এখন আমরা বিশ্বাসঘাতক, কারণ আমরা ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই করছি। সাক্ষী মালিক খেলা ছেড়ে দিলেন, বজরঙ পুনিয়া পদ্মশ্রী ফিরিয়ে দিলেন। অলিম্পিকে পদক জয়ী খেলোয়াড়রা কেন এটা করতে বাধ্য হলেন, গোটা দেশ জানে। আপনি তো দেশের মুখিয়া, নিশ্চই আপনার কান অবধি পৌঁছেছে সেকথা। প্রধানমন্ত্রীজী, আমি আপনারই ঘরের মেয়ে বীনেশ ফোগট এবং আজ আপনাকে আমি এই চিঠি লিখতে বাধ্য হচ্ছি, গত বছর থেকে আমরা কী অবস্থার মধ্যে দিয়ে গিয়েছি, তা বোঝাতে।’’
কমনওয়েলথ এবং এশিয়ান গেমস— দু’টিতেই সোনা জিতেছেন বীনেশ। আবেগপ্রবণ হয়ে তিনি লিখেছেন, ‘‘এই পদক আমাদের কাছে প্রাণের থেকেও প্রিয়। আমি যখন পুরস্কার জিতি, তখন আমার মা মিষ্টি বিলি করেছিলেন। আমার কাকী সবাইকে খবর দিয়েছিল, বীনেশকে টিভিতে দেখা যাবে। পুরস্কার নেওয়ার সময় আমার মেয়েটাকে কী সুন্দর দেখাচ্ছিল। আর আজ আমাদের হাল দেখছেন আমার মা-কাকী। ভারতের কোনও মা কি চাইবেন নিজের মেয়েকে এই অবস্থায় দেখতে?’’
২০১৬ সালে অলিম্পিকে পদক জিতেছিলেন সাক্ষী মালিক। সেকথা মনে করিয়ে দিয়ে মোদীকে বীনেশ বলেছেন, ‘‘আপনার সরকার তৎক্ষণাৎ ওঁকে বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও’র ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর করে দিয়েছিল। কিন্তু আমাদের জীবনটা আসলে একদমই বিজ্ঞাপনের মতো নয়। মহিলা কুস্তিগিররা গত কয়েকবছর ধরে কী অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন, তা কেউ খোঁজ নেয়নি। আপনাদের ওই বিজ্ঞাপনও পুরানো হয়ে গিয়েছে, আর সাক্ষীকেও খেলা ছেড়ে দিতে হলো। আর যে এর নেপথ্যে সে এখনও বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আপনি আপনার ব্যস্ত সময় থেকে পাঁচ মিনিট বের করে শুনে নেবেন উনি (ব্রিজভূষণ) মিডিয়ার সামনে কী বলছেন। আপনি বুঝে যাবেন, উনি কী কী করেছেন! আজ যখন সাক্ষীকে খেলা ছেড়েই দিতে হলো, আমার বারবার ২০১৬ সালই মনে পড়ছে। আমরা মহিলারা সম্মানের সঙ্গে বাঁচতে চাই গোটা জীবন, শুধু বিজ্ঞাপনের মুখ হয়ে নয়।’’
পদ্মশ্রী ফিরিয়ে দিয়ে বজরঙ মোদীকে বলেছিলেন, ‘‘মেয়েরা নিজেদের সুরক্ষার কথা ভেবে খেলা ছেড়ে দিচ্ছেন। আর আমি পদ্মশ্রী আঁকড়ে বসে থাকব?’’ মোদী মুখ খোলেননি। একটি শব্দও খরচ করার সময় হয়নি তাঁর। বরং মেয়েদের যৌন হেনস্তায় অভিযুক্ত সাংসদকে আড়ালের চেষ্টাই করে যাওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় ক্রীড়া মন্ত্রক ফেডারেশনের নবনির্বাচিত কমিটিকে সাসপেন্ড করে দিয়েছে নিয়মনীতি অমান্য করে দ্রুত কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য। ফেডারেশনের কাজকর্ম পরিচালনার জন্য অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনকে অ্যাডহক কমিটি তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে সেই কমিটি অবশ্য এখনও দিনের আলো দেখেনি।
WRESTLERS PROTEST
‘আমরা কি দেশদ্রোহী’?
পুরস্কার ফিরিয়ে মোদীকে প্রশ্ন বীনেশের
×
Comments :0