Mid Day Meal in Bankura

বাঁকুড়ার স্কুলে পড়ুয়াদের পাতে মিড ডে মিলে হলুদ গোলা জল আর শাকভাজা

রাজ্য জেলা

স্কুল পড়ুয়াদের পড়াশুনোর পাশাপাশি পুষ্টিকর খাদ্য জোগানোর উদ্দেশ্যেই চালু করা হয়েছিল মিড ডে মিল। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, এই মিড ডে মিলের জন্যই ফের স্কুল যাওয়া শুরু করেছে অনেক স্কুল পড়ুয়া। মিড ডে মিলের নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিদিন পড়ুয়াদের পাতে দিতে হবে ভাত, ডাল, সবজি। সপ্তাহে একদিন করে মাছ বা মাংস দিতে হবে। সপ্তাহের দুদিন পড়ুয়াদের পাতে থাকতে হবে ডিম। কিন্তু নিয়মের পরোয়া না করেই উল্টো ছবিই দেখা গিয়েছে বাঁকুড়া জেলার জঙ্গলমহলের রানীবাঁধ ব্লকের হলুদকানালী অঞ্চলের অন্যতম আর্থিক, সামাজিক কাঠামোয় একেবারে পিছিয়ে পড়া নাচনা গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ছাত্রছাত্রীরা গত একমাস ধরে অনিয়মিত ভাবে মিড ডে মিল পাচ্ছে। যে কদিন পেয়েছে সে কদিন খালি হলুদ গোলা জল যাকে ডাল বলে দেওয়া হয় আর শাকভাজা আর ভাত। 
অন্যদিকে স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও সহকারি শিক্ষক নিয়মিত স্কুলে থাকেননা বলে এলাকার অভিভাবকদের অভিযোগ। তাঁরা শনিবার লিখিত আকারে খাতড়ার মহকুমা শাসক, রানীবাঁধের বিডিও, সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয় পরিদর্শকের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন। দিনের পর দিন এই ঘটনা ঘটায় নাচনা গ্রামের মানুষজনের মধ্যে তীব্র বিরুপ প্রতিক্রিয়া তৈরী হয়েছে। তাঁদের অভিযোগের তীর মুলত প্রধান শিক্ষক সুনীল সর্দারের দিকেই। 
ঘটনা হল একেবারে পিছিয়ে পড়া এই নাচনা গ্রাম। তপসীলি জাতি, উপজাতির মানুষজনের বাস। কোথাও কোন কাজ নেই। মহিলারা জঙ্গলের পাতা, ডালপালা তুলে এনে গ্রামে গ্রামে ঘুরে বিক্রি করেন। বেশিরভাগ বাড়িই ভেঙ্গে পড়ছে। বর্ষায় এর আকার ভয়ঙ্কর নেবে। একটা হতাশার মধ্যে দিয়ে নাচনা গ্রামের একটা বড় অংশের মানুষ বাস করেন। সেই সব পরিবার থেকে ছেলে মেয়েদের স্কুলে পাঠানোই একটা দুরহ ব্যাপার। সেখানে গিয়ে যদি নিয়মিত মিড ডে মিল না পায় তাহলে তারা যাবে কেন? আর বেশিরভাগ দিনই প্রধান শিক্ষক সুনীল সর্দার স্কুলে থাকেননা। সই করে চলে যান। প্রায় একইভাবে চলেন অন্য এক সহ শিক্ষকও। একজন অতিথি শিক্ষক কোন মতে স্কুল সামলান। দিনের পর দিন এই ঘটনা প্রত্যক্ষ করে শনিবার গ্রামের মানুষজন বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। এদিন ১৩জন ছাত্রছাত্রী এসেছিল।  তাঁরা সকালে গিয়ে দেখেন প্রধান শিক্ষক এসে সই করে চলে গেলেন। ছিলেননা সহকারি শিক্ষকও। একাধিক অভিভাবক জানান, প্রধানশিক্ষককে কিছু বলতে গেলেই তিনি একপ্রকার হুমকি দিয়ে জানান, তাঁর স্ত্রী রানীবাঁধ পঞ্চায়েত সমিতির সহকারি সভাপতি। অভিভাবকরা জানান, স্কুলে প্রায় ৪০জন ছাত্রছাত্রী আছে। কিন্তু মিড ডে মিলে ছাত্রছাত্রী পিছু ৫টাকা ৪৫পয়সা যে দেওয়া হয় সেই মতো খাবার পায়না ছাত্রছাত্রীরা। বেশিরভাগ দিনই ভাতের সঙ্গে ডাল বিহীন হলুদ জল ও শাকভাজা খেতে হয় তাদের। কারন প্রধান শিক্ষক রান্নার তরকারির জন্য যে অর্থ দেন সেই অর্থেই স্বয়ম্ভরগোষ্টীর মহিলারা রান্না করেন। অভিভাবকদের বক্তব্য পূর্ণ তদন্ত করলেই সবটা ধরা পড়বে। কতজন ছাত্রছাত্রী স্কুলে আসে আর কতজনের নাম আছে। গড়ে কতজনের মিড ডে মিলের রান্না দেখানো হচ্ছে। তাঁরা জানান, আমাদের ছেলে মেয়েদের ভবিষ্যত নিয়ে কার্যত ছিনিমিনি খেলা হচ্ছে। এটা কোন মতেই মানবনা। তাঁরা বিষয়টি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকেও জানাবেন বলে জানান। এদিকে শনিবারই তাঁরা এক যোগে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে জানিয়েছেন। এদিন রানীবাঁধের বিডিও শিবব্রত ব্যানার্জি জানান, তিনি অভিযোগ পেয়েছেন। সিরিয়াস অভিযোগ। তিনি সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয় পরিদর্শকের সঙ্গে কথা বলবেন এবং নিজেও তদন্ত করবেন। রানীবাঁধের বিদ্যালয় পরিদর্শক( এস আই) সৌকত সাহা এদিন জানান, তিনিও অভিযোগ পেয়েছেন। আগে এই স্কুল সম্পর্কে কোন অভিযোগ আসেনি। এখন কি ঘটনা ঘটেছে তা তদন্ত করার জন্য তিনি সোমবারই তিনি যাবেন। সরকারি নিয়ম ভাঙ্গা হলে যথাযত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান। 

Comments :0

Login to leave a comment