অভীক ঘোষ, পুড়শুড়া
১৭ দিন আগে আটকে পড়েছিলেন উত্তরকাশীর সুড়ঙ্গে। সবার নজর ছিল তাঁদের দিকে। অনেক অনিশ্চয়তা, আতঙ্ক, আশঙ্কা শেষে সেই সুড়ঙ্গে আটকে পড়া ৪১ কর্মী বেরিয়ে এলেন। অন্ধকার থেকে আলোর মুখ দেখলেন তাঁরা।
১৭ দিনে কাটল উৎকন্ঠার রাত। যুদ্ধ জয়ের হাসি উদ্ধারকর্মীদের চোখেমুখেও। কারও চোখে চিকচিক করছে আনন্দাশ্রু। ফিরলেন, বাংলার ৩ শ্রমিকও। হুগলির পুড়শুড়াট সৌভিক পাখিরার বাড়িতেও তখন আনন্দ উচ্ছ্বাস। রাত ঠিক সাড়ে ৮ টা নাগাদ এল সেই ফোন। ততক্ষণে শ্রমিকদের উদ্ধারের খবর পৌঁছে গিয়েছে পুরশুড়ার পাখিরা পরিবারে। জড়ো হয়েছেন আত্মীয়-প্রতিবেশীরা। তবু যতক্ষণ ছেলের কন্ঠস্বর না শোনা যায়, ততক্ষণ তো মায়ের বুক কাঁপেই।
টানেল থেকে বেরনোর পর আর দেরি করেননি পুরশুড়ার সৌভিক। ফোন করেন মা-কে। ফোন পেয়ে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে মায়ের মুখ। ফোন ধরেই তাঁর মা প্রশ্ন করেন, কেমন আছ? ওপার থেকে উত্তর আসে ভাল আছি। 'চেক আপ করিয়েছ তো?', ছেলের সঙ্গে ১৭ দিন পরে মোবাইলে কথা বলার সময় প্রথম এই প্রশ্নই করলেন হুগলির বাসিন্দা সৌরভ পাখিরার মা। ১৭ দিন ধরে আরও ৪০ জন শ্রমিকের সঙ্গে উত্তরকাশীর টানেলের মধ্যেই আটকে ছিলেন সৌভিক পাখিরা। সৌভিকের মা জানান, ‘তুমি জয়ী হয়ে ফিরছ বাবা।’ ফোনেই সৌভিক জানান, ৪১ জনই সুস্থ আছেন। ছেলেকে তিনি চিন্তামুক্ত থাকতে বললেন।
১২ নভেম্বর কালিপুজোর দিন ভোরে উত্তরকাশীর সিল্কিয়ারা টানেলের ভেতরে ধস নামে। সুড়ঙ্গ মুখ থেকে প্রায় ২০০ মিটার ভেতরে কংক্রিটের চাঙড়, মাটির স্তূপে আটকে পড়েন ৪১ শ্রমিক। তার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের ৩ শ্রমিকও রয়েছেন। প্রায় ৬০ মিটার পুরু ধস কেটে উদ্ধারের কাজে পদে পদে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে গত ১৭ দিন। অবশেষে মুক্তি পেলেন ৪১ জন শ্রমিকই।
সৌভিকের পাশাপাশি পুড়শুড়ার নিমডাঙির আর এক শ্রমিক জয়দেব প্রামাণিকের মা জানান, “ছেলের সঙ্গে কথা হয়েছে। ও বলেছে আমি ভালো আছি চিন্তা করো না। ও আরও জানিয়েছে, ওর জামাইবাবু ওর সঙ্গেই আছে। ওদেরকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এতগুলো দিন প্রচণ্ড চিন্তার মধ্যে ছিলাম। যাঁরা উদ্ধার করেছে, তাঁদের ধন্যবাদ।”
Comments :0