তৃণমূলের নেতাদের চুরির জন্য ২২ লক্ষ চাকরিপ্রার্থী বঞ্চিত হয়েছেন। আদালত প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক, শিক্ষাকর্মীর চাকরি বাতিল করেছে। সবচেয়ে বেশি চুরি হয়েছে শিক্ষাকর্মী নিয়োগে, সেখানে ‘যোগ্য-অযোগ্য’ বিচার করা অত্যন্ত কঠিন মনে করে সুপ্রিম কোর্ট শিক্ষাকর্মীদের কাউকে স্কুলে ফেরার অনুমতি দেয়নি।
শনিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি সেই শিক্ষাকর্মীদের জন্যই ভাতা ঘোষণা করেছেন। তাতে আন্দোলনরত শিক্ষাকর্মীদের একাংশ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তবে তৃণমূল নেতাদের সবচেয়ে ভয় ছিল এই শিক্ষাকর্মীদের একাংশকে, যাঁদের থেকে তাঁরা অনেক টাকা ঘুষ নিয়েছিলেন। আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল তাঁরা তৃণমূল নেতাদের বাড়ি চড়াও হতে পারেন।
তাই এদিন তৃণমূলের নেত্রী হিসাবে মমতা ব্যানার্জি ভাতা ঘোষণা করেছেন। প্রসঙ্গত, সারদা কেলেঙ্কারির সময়েও তৃণমূলের নেতাদের চুরির টাকা সরকারের কোষাগার থেকে ফেরতের বন্দোবস্ত করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। যদিও পুরো টাকা ফেরত দেননি ক্ষতিগ্রস্তদের।
এবার কী হয়, তা-ই দেখার। তবে চাকরি হারানো শিক্ষাকর্মীদের একাংশ প্রশ্ন তুলেছেন, সারদার ক্ষেত্রে মমতা ব্যানার্জি বলেছিলেন যে, ‘যা গেছে তা গেছে।’ এবার বলেছেন, সরকার রিভিউ পিটিশন করবে। তার রায় বেরনো পর্যন্ত সরকার ভাতা দিয়ে যাবে। অর্থাৎ রিভিউ পিটিশনে সরকার হারলে, যার সম্ভাবনাই বেশি, এই ক্ষেত্রেও ‘যা গেছে তা গেছে’-ই হবে।
মমতা ব্যানার্জির এদিনের ঘোষণার পরও মধ্যশিক্ষা পর্ষদে অনশন এবং বাইরে অবস্থান জারি থাকবে বলে জানাচ্ছেন শিক্ষাকর্মীরা। নিয়োগে দুর্নীতির জন্য চাকরি বাতিল হয়েও সরকার তাঁদের সাহায্যের হাত বাড়াচ্ছেন, কিন্তু ২২ লক্ষ পরীক্ষার্থী যাঁরা দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত না থেকেও বঞ্চিত হয়েছিলেন তাঁদের জন্য সরকার ভাবলো না কেন? প্রশ্ন একাংশের।
মুখ্যসচিবের সঙ্গে এদিন বৈঠক হয় শিক্ষাকর্মীদের প্রতিনিধিদের। সেখানে মুখ্যমন্ত্রী ফোন কলের মাধ্যমে শিক্ষাকর্মীদের সামনে বার্তা রাখেন, ডানলপের বন্ধ কারখানার শ্রমিকদের মতোই গ্রুপ সি কর্মীদের ২৫ হাজার এবং গ্রুপ ডি কর্মীদের ২০ হাজার টাকা দেওয়া হবে শ্রম দপ্তরের অধীনে। মুখ্যমন্ত্রী যেমন চাকরিহারা শিক্ষক শিক্ষিকাদের জন্য রিভিউ করবেন, তেমন শিক্ষাকর্মীদের জন্যও রিভিউ পিটিশন করবেন। ‘‘মামলার যতদিন না নিষ্পত্তি হচ্ছে ততদিন এই টাকা দেওয়া হবে শিক্ষাকর্মীদের। কোর্ট রিজেক্ট করলে অন্য কিছু দেখবো।’’ সন্তুষ্ট হচ্ছেন না চাকরিহারা শিক্ষাকর্মীরা। তাঁদের বক্তব্য, প্রথমত মুখ্যমন্ত্রী গ্রুপ সি-এর জন্য ২৫ হাজার টাকার ঘোষণা করেছেন তা যথার্থ নয়। তাঁরা ন্যূন্যতম ৩০ হাজারের দাবি করেছিলেন। তাছাড়াও তাঁদের অন্যতম প্রধান দাবি ছিল যোগ্য-অযোগ্য তালিকা প্রকাশ করার। কিন্তু সরকার তা করেনি এবং কোনও সদুত্তরও দেয়নি। বরং মুখ্যমন্ত্রী যোগ্য অযোগ্য জানা নেই বলেই জানিয়েছেন। তাই তাঁরা বৈঠককে সফল বলে মনে করছেন না এবং অবস্থানে অনড় থাকছেন ‘যোগ্য গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি অধিকার মঞ্চের সদস্যরা। তবে শিথিলতা এনেছেন অনশনে, এখন থেকে কেবল জল পান করেই অনশন করবেন ৮ জন শিক্ষাকর্মী।
গ্রুপ সি কর্মী বিক্রম পোলে জানান, ‘‘আমরা যোগ্য অযোগ্য তালিকা চেয়েছিলাম। সেটা না দিলে আমরা নিজেদের অবস্থানে থাকবো। সরকারের প্রস্তাবে গ্রুপ সি কর্মীরা মানছে না, তবে গ্রুপডি কর্মীরা তাতে রাজি। তবে তালিকা নিয়ে আমরা একমত। যেহেতু সরকার এক কদম এগিয়েছে তাই মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি আস্থা রেখে অনশন যাঁরা করছেন, তাঁরা এখন থেকে নির্জলা থাকার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করেছে। এমনিতেও টানা অনশনে তাঁদের সকলের শারীরিক অবস্থা ভালো নেই। অবস্থানরত গ্রুপ ডি কর্মী অসিত বড়াই গুরুতর অবস্থায় আছেন তা সত্বেও তিনি অনশন জারি রাখবেন। ফলে আমরা এখনও আমাদের দাবিতে অনড়।’’
মুখ্যমন্ত্রীর প্রস্তাবে কার্যত স্তম্ভিত শিক্ষকমহলের একাংশ। শিক্ষক সংগঠন এবিটিএ’র সাধারণ সম্পাদক শিক্ষাকর্মীদের দাবিকে সমর্থন জানিয়ে বলেন, রাজ্য সরকার কোর্টে আবেদনে এই যোগ্য শিক্ষাকর্মীদের চলতি শিক্ষাবর্ষে বহাল রাখার বিষয়ে একটি শব্দও ব্যয় করেননি। রাজ্য সরকার কয়েক হাজার টাকা দিয়ে চাকরি কেনা শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীর জন্য বিপুলসংখ্যক যোগ্য ও বৈধ শিক্ষক শিক্ষা কর্মীকে বলি দিচ্ছে। রাজ্য কোষাগার থেকে যেভাবে অযোগ্য এবং অবৈধ শিক্ষা কর্মীদের বিপুল পরিমাণে ভাতা দেওয়ার ঘোষণা করেছেন তা পুরোপুরি অনৈতিক, বেআইনি এবং সরকারের দুর্নীতিকে প্রশ্রয়ের নীতিকে প্রতিষ্ঠিত করেছে।’’
প্রসঙ্গত, ২০১৬-র নিয়োগের নির্দেশিকা অনুসারে পরীক্ষার পর গ্রুপ-সি’র ক্ষেত্রে স্কুল সার্ভিস কমিশন নিয়োগের জন্য ২০৬৭ জনের সুপারিশ করেছিল। অথচ নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছিল ২৪৮৩ জনকে। বাকি ৪১৯টি নিয়োগপত্র কী করে পেল? গ্রুপ-ডি’র ক্ষেত্রে একইভাবে এসএসসি ৩৮৮১জনের নিয়োগের সুপারিশপত্র পাঠিয়েছিল। অথচ তার ভিত্তিতে ৪৫৫০ জনের নামে নিয়োগপত্র বিলি হলো। বাকি ৬৬৯টি কোথায় গেল? কীভাবে কমিশনের সুপারিশের থেকে নিয়োগপত্র বিলির সংখ্যা বেড়ে গেল? সেই রহস্যের উত্তর দিতে পারেনি রাজ্য সরকার
ssc scam
তালিকার দাবিতে অনড় শিক্ষাকর্মীরা, ভাতা ঘোষণা করে দায় এড়ানোর চেষ্টা মুখ্যমন্ত্রীর

×
Comments :0