MUKTADHARA : ANAYAKATHA : BAMKEYES : PALLAV MUKHOPADHAYA : 6 OCTOBER 2024, SUNDAY

মুক্তধারা : অন্যকথা : শরদিন্দু ও ব্যোমকেশ : পল্লব মুখোপাধ্যায় : ৬ অক্টোবর ২০২৪, রবিবার

সাহিত্যের পাতা

MUKTADHARA  ANAYAKATHA  BAMKEYES  PALLAV MUKHOPADHAYA  6 OCTOBER 2024 SUNDAY

মুক্তধারা : অন্যকথা

শরদিন্দু ও ব্যোমকেশ
পল্লব মুখোপাধ্যায়
পর্ব - ৩

শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়-এর গোয়েন্দা চরিত্র 'ব্যোমকেশ বক্সী' দৈহিক
শক্তিপ্রয়োগ, গুলিগোলা -- এসব পছন্দ করে না। যে সব ব্যাপারে প্রাণসংশয় হতে পারে

সে সবও তার পছন্দ নয়, অবশ্য সবসময় সেটা তার ইচ্ছে অনিচ্ছের ওপর নির্ভর করে
না। শরদিন্দু বলছেন, 'আমার মেজাজের সঙ্গে গুলিগোলা খাপ খায় না। তাছাড়া গোয়েন্দা
কাহিনীকে আমি ইনটেলেকচুয়াল লেভেলে রেখে দিতে চাই।' সাতটি কাহিনীতে
ব্যোমকেশকে ঘুষোঘুষি বা গোলাগুলির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে, তিন বার অজিতকেও
জড়িয়ে ফেলতে হয়েছে। ব্যোমকেশের ইচ্ছেমতো যদি সব করা যেত তাহলে সে বোধহয়
বৈঠকখানায় বসে শুধু বুদ্ধি খাটিয়েই সব রহস্যের কিনারা করে ফেলত। তবে দরকার হলে
অর্থাৎ তথ্য সংগ্রহের জন্য অকুস্থল তো বটেই, আরও এদিক ওদিক যাওয়া, নানা
লোকের সঙ্গে কথা বলা, ছদ্মবেশ ধারণ-- এসব কাজে তার কোনও শৈথিল্য কিন্তু আমরা
দেখি না। শরদিন্দুর রহস্য কাহিনী সাধারণত বেশ ঠাসবুনোটের, অনেক চরিত্র আনেন না,
ছোটো গল্পে তো নয়ই। গল্প শেষও করেন নিপুণভাবে, সব আলগা সূত্র গুছিয়ে বেঁধে দিয়ে।
ঘটনার যাথার্থ্য বোঝাবার জন্য যতটা প্রাক্‌কথন দরকার ততোটুকুই রাখেন। শরদিন্দুর
গল্প ছোট ছোট প্রায় অদৃশ্য সূত্র খুব মুন্সিয়ানার সঙ্গে আবছাভাবে দেখিয়ে তার
অমোঘ পরিণামের দিকে এগিয়ে যায়, শ্লথতা নেই তাতে। মাঝে মাঝে ব্যোমকেশের
দাম্পত্যজীবনের কিছু ছবি ঝলক দিয়ে যায় কিন্তু তা সাধারণত এত মধুর, কম কথায়
মধুর প্রেমের আভাস দেওয়া শরদিন্দুর রচনাশৈলীর একটি বৈশিষ্ট্য যে সামান্য বিক্ষেপ
ঘটালেও তা কমিক রিলিফ মাত্র।
ব্যোমকেশের সব গল্প মেলালে আমরা দেখি যে পুলিশ প্রায় সবরকমভাবেই এসেছে | সে
সহপাঠী বন্ধু, বর্তমান পুলিশ ইন্‌স্পেক্টর এ কে রে ('মগ্নমৈনাক') অথবা বাল্যবন্ধু
বর্তমান ডি এস্‌ পি শশাঙ্ক বাবু (“ব্যোমকেশ ও বরদা”) থেকে শুরু করে সপ্রশংস
সহযোগী পুরন্দর পাণ্ডে (“চিত্রচোর” ও অন্যান্য) বা অসহনীয় আত্মম্ভরি বিধুবাবু
(“অর্থমনর্থম”) পর্যন্ত। এর মধ্যে তো শশাঙ্কবাবুর সঙ্গে মতান্তর দীর্ঘস্থায়ী
মনান্তরে পৌঁছে যেতে চলেছিল। কাজেই পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রচলিত রহস্যকাহিনীর
সঙ্গে ব্যোমকেশের কাহিনীর খুব একটা তফাৎ দেখা যাবে না। রহস্যকাহিনীর আর
একটি বৈশিষ্ট্য হল গোয়েন্দার ছদ্মবেশ ধারণ, গোয়েন্দা হতে গেলে এই কর্মে কুশলী
হওয়া অপরিহার্য। ব্যোমকেশও ব্যতিক্রম নয়, যদিও তিন বারের বেশি ব্যোমকেশকে
ছদ্মবেশ ধরতে হয়নি । এ ছাড়া কোনও বিশেষ চরিত্রের কার্যকলাপের ওপর নজর রাখা
বা বিশেষ কিছু খবর বের করার জন্য ছায়া-সহকারী ব্যবহার করার চল আছে
গোয়েন্দাজগতে। শরদিন্দু ব্যোমকেশকে তার থেকে বঞ্চিত করেননি, বিকাশ দত্ত প্রমুখ
সহযোগীরা মাঝে মাঝেই ব্যোমকেশের আহ্বানে সাড়া দিয়ে এসে কাহিনীতে প্রয়োজনীয়
তথ্য সরবরাহ করে গেছে।

ক্রমশ

Comments :0

Login to leave a comment