বনবাণী ভট্টাচার্য
গ্রিক উপকথায় আছে কিং মিডাস যাতেই হাত দিতেন, তাই সোনা হয়ে যেত, এমনকি তার আদরের মেয়েটাও তারই হাতের স্পর্শে নিষ্প্রাণ সোনার মূর্তি হয়ে গিয়েছিল নাকি। এযুগে, এই বাংলায় ইডি, সিবিআই খাটের তলা থেকে বাথরুম যেখানে হাত দিচ্ছে কোটি কোটি টাকা মিলছে সেখানে। কিং মিডাসের স্বর্ণ তৃষ্ণার ফল ঐ বিষম স্পর্শ জাদু আর ইডি, সিবিআই কুড়িয়ে চলেছে দুর্নীতির ব্ল্যাক আর্টের জাদুর ফল।
এই স্কুল-শিক্ষক নিয়োগ অথবা আবাসন যোজনায় অনিয়ম ও দুর্নীতির চর্চা একটা জনপ্রিয় বিনোদনে পরিণত হয়েছে। আর বর্তমান তো বটেই ভবিষ্যতের ভয়ঙ্কর বিপদটাই এখানেই ওঁত পেতে। দুর্নীতি তো ঠাট্টা-মশকরার বিষয় নয়। নীতিহীনতার এক উৎকট প্রকাশ দুর্নীতি। আর এটাও ঠিক যে দুর্নীতি কেবল মোদী জমানায় বা টিএমসি’র শাসনেই দেখা দিয়েছে এমন নয়। এই নীতিহীনতা অবশ্যই, পুঁজিবাদের বাই-প্রোডাক্ট, তবে দুর্নীতির জন্ম পুঁজিবাদের গর্ভেই, এমন ভাবাটাও একটু অতিরিক্ত। বরং নিরাপদে একথাটাই বলা চলে যে, শোষণ ভিত্তিক অর্থনীতিতেই দুর্নীতির স্বচ্ছন্দ বিচরণ। রাজা রাজড়াদের আমলেও তহবিল তছরুপ, বা অসৎ পথে অর্থ উপার্জনের উল্লেখ সম্ভবত কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রেও আছে। তাছাড়া, সামন্ততান্ত্রিক অর্থনীতিতে, কৃষককে ঠকিয়ে জমি আত্মসাত, বা দাড়িপাল্লার কারসাজিতে চার সেরকে আকছাড় ছয় সের প্রমাণ করে নিরক্ষর কৃষককে ভাগিয়ে দেওয়া, দুর্নীতিরই রকমফের। তাই, শোষণ যত তীব্র, দুর্নীতির মাত্রাও তত বেশি; শোষণ যত তীক্ষ্ম, দক্ষিণপন্থী শক্তির উত্থান ও বিস্তারই তত দ্রুত।
পুঁজিবাদ এবং তার আধুনিকতম রূপ যে ফিনান্স পুঁজি, শোষণের মাত্রা সেখানে চরম। শোষণ ও মুনাফার বৃদ্ধির অনুকূল বাতাবরণ সৃষ্টি করে দক্ষিণপন্থা। দক্ষিণপন্থারও বনেদি ও আধুনিক সত্তায় তফাৎ ঘটে চলেছে। বনেদি বা ক্লাসিকাল দক্ষিণপন্থায় সাধারণভাবে স্থিতাবস্থা বজায় রাখাতেই ক্ষান্ত থাকত। কিন্তু বর্তমানের দক্ষিণপন্থা অনেক বেশি আগ্রাসী। আরও আরও মুনাফার জন্য সে স্থিতাবস্থাকে ভাঙতেও দ্বিধাহীন সংস্কারহীন। তারা তাদেরই বিধিবদ্ধতা অতিক্রম করতে দুঃসাহসী হয়ে উঠছে। তাই, দুনিয়াটাই একরকমের তালগোল পাকানো। যে অনৈতিক কর্পোরেট শোষণে, গুগলেই একদিনে (২০/১/২০২৩ তারিখে) ১২ হাজার কর্মী ছাঁটাই হয়ে, জানুয়ারি মাসে ৩০টি বহুজাতিক কোম্পানিতে ৩০ হাজার কর্মী ছাঁটাই হয়ে যায়, সেই শোষকরাই ঘটা করে, দুর্নীতি রোধে এবং অপরাধী শনাক্ত করার জন্যে সিআইডি, সিট, সিবিআই, ইডি প্রভৃতি হরেক মোড়কে কড়া পদক্ষেপ নেয়— যা প্রায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অসমাপ্ত, ফলে অমীমাংসিত থাকে। কিন্তু তবু পুঁজিবাদ এপথে যায় কেন? এ পথে পুঁজিবাদকে নামতে হয় তার বিশ্বাসযোগ্যতা ও গ্রহণযোগ্যতা বাড়াবার জন্যে। অর্থাৎ জনমানসে এই ধারণা গেঁথে দেবার জন্যে যে, দেখ কত সৎ! অন্যায় বরদাস্ত করে না, নিজের লোককেও রেহাই দেয় না। আর তদন্ত, পরীক্ষা-নিরীক্ষা তো চলতেই থাকে অনন্তকাল ধরে তার মধ্যে আরও কত জটিল, আরও কত চমক ঘটে যেতে থাকে — ক্যালাইডোস্কোপের মতো মগজ থেকে তা সরে সরে যেতেও থাকে। সারদা কাণ্ডে এক মন্ত্রী দীর্ঘ দিন হাসপাতালে শুয়ে শুয়ে জেলখাটার পর এখন খোলা হাওয়ায় দিব্যি ঘুরে বেড়ান— তার পরিণাম কি হলো? শাসকদলের সম্পাদক ও মুখপাত্ররও কি রেহাই হয়ে গেছে? স্কুল শিক্ষক নিয়োগ কাণ্ডে গ্রেপ্তার হওয়া মন্ত্রীর কালো দাড়ি সাদা হয়েছে— গোরু পাচারে শাসক দলের নেতারও চুল সাদা হলো— তাদের সাঙ্গোপাঙ্গদের ধরপাকড়-আদালত এজলাস, ইডি’র ছুটোছুটি অনেক কিছু রোজ হচ্ছে— মানুষের চোখ টিভি-তে আটকে থাকছে, কিন্তু তারপর? ব্লেনহেম যুদ্ধে, ডিউক অফমার্লবোর ফেমাস ভিক্ট্রি’ যে অজস্র মৃত্যু, অগণিত সৈন্য ও সাধারণ মানুষ থেকে শিশু ও ভাবী মায়েদের প্রাণের বিনিময়ে সম্ভব হয়েছিল, ঠাকুর্দা ওল্ড ক্যাস্পারের সেই গঠিত উচ্চারণে ঐ ছোট্ট পিটারকিনের প্রশ্ন, ‘‘বাট হোয়াট গুড কেইম অব ইট অ্যাটলাস্ট’’ এর মতো জনগণের উদ্গত প্রশ্ন নেই?
হ্যাঁ, আসলে এ এক পরিণামহীন প্রহসন। একদিকে শোষক-শাসকের, জনসাধারণের আই-ওয়াশ করা, অন্যদিকে জনমানসের কৌতূহলটুকুও ক্রমে ঝিমিয়ে গিয়ে শেষ হয়ে যাওয়াতেই ইতি। তাই দুর্নীতি তার সুযোগমতো চলতেই থাকে। আর চলতে থাকে, মানুষের প্রায় নিঃশব্দ ঘৃণা ক্ষোভ, বেদনা ও গ্লানি, সেও চেতনার প্রান্তে। তবু, ঠোঁটের কাছে প্রশ্নটা থেকেই যায় বলে, শাসকের কখনও স্বস্তি থাকে না। তাই চলতে থাকে ব্যক্তিতে-ব্যক্তিতে, সমষ্টিতে সমষ্টিতে বিচ্ছেদের ছুরি চালানো। আর এই বিভেদ-বিচ্ছেদ মানুষের মধ্যে সঞ্চার করতে থাকে অলঙ্ঘনীয় ভীতি। মানুষের মনোজগৎ গড়ে উঠছে এই ভয়ের আঘাতে আঘাতে যা তাকে নীরবে সয়ে যেতে হয়। সমাজে শিকড় গেঁড়ে যাওয়া এই ভয়ের থেকে, ক্ষমতার প্রতাপে পুড়ে যাওয়ার ভয়ের থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার চেষ্টায় আপাদমস্তক ভয়ে ডুবে থাকা মানুষ শাসকের চাতুরির চালচুলোর সন্ধানে আর এগোতে হয় আগ্রহ বোধ করে না, না হলে সাহস পায় না।
এই আতঙ্কের আবহে উত্তর সত্য আমদানি করা শাসক গোষ্ঠীর পক্ষে ফলপ্রসূ। পোস্টট্রুথ শব্দবন্ধ নিজেই নিজেকে প্রকাশ করে। সত্য তো সত্যই, তার প্রাক আর উত্তর কি? উত্তর সত্যে আর যাই থাকুক, সত্য থাকে না। ফলে ধান্দার পুঁজি আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করে উত্তর সত্যের আর উত্তর সত্যকে জনমানসে গভীরভাবে প্রোথিত করে গ্যাস লাইটিং নামে এক অমোঘ মনস্তাত্ত্বিক কৌশল।
এই বাংলায় মানুষ প্রত্যক্ষ করছে শুধু নিয়োগ-দুর্নীতি নয়, দেখছে আবাসন যোজনা, বিধবা ভাতা থেকে রেগার মজুরি চুরি। শিক্ষক পদে, শিক্ষা কর্মী পদে যোগ্য প্রার্থীর চাকরি চুরি যাওয়াই শুধু নয়—চুরি যাচ্ছে খোদ শিক্ষাই।
তবু, যে ক্ষোভ, যে প্রতিবাদ আছড়ে পড়তে পারত, বুকে বুকে যে বারুদ জ্বলে উঠতে পারত, ঠিক তেমনটা হচ্ছে না তো। রবীন্দ্রনাথের শান্তিনিকেতনে, সোনাঝুরি, কোপাইয়ের ধার দিয়ে পাচার করার নিরীহ গোরুগুলি পাচারকারী শাসকদলের নেতার ইশারায় চলতে থাকে আর সেই গোরুচোর নেতাকে মুখ্যমন্ত্রী ও দলনেত্রী দলীয় সদস্যদের বীরের সংবর্ধনা দেবার জন্য উৎসাহিত করেন, তখন লজ্জায় মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছে করে না কেন সকলের? অধঃস্তন সপারিষদ, শিক্ষা মন্ত্রী যখন গারদের ওপারে, তখন শিক্ষকতা-বৃত্তিটাতেই ঘৃণা ঠিকরে পড়ে না? শিক্ষকের নিজের উপরেই ধিক্কার আসে না?
এই লজ্জা, এই ধিক্কার যাতে জনমানসে উত্তাল না হয়ে ওঠে, তারইজন্যে গ্যাস লাইটিং-র কৌশল। গ্যাস লাইটিং উত্তর সত্যকেই প্রতিষ্ঠিত করে, যেমন চলচ্চিত্র দেখিয়েছে স্বামী গ্রেগরি স্ত্রী পলার সম্পত্তি সব হাতিয়ে নেবার জন্যে দোতলায় গিয়ে গ্যাস লাইটগুলিকে হঠাৎই ম্লান করে দেয়— কিন্তু স্ত্রীর দোতলায় পায়ের শব্দ শোনা এবং গ্যাসলাইটের আবছা আলো দেখাকে, পলারই মনের ভুল বলে স্ত্রীকেই ক্রমে মানসিকভাবে অসুস্থ হিসাবে প্রতিপন্ন করেছিল। এটা একটা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পিত পদ্ধতি অর্থাৎ প্রকৃত ঘটনার একেবারে উলটো গল্প, তীব্র সমালোচনার কশাঘাত বিরুদ্ধবাদীদের এবং সরাসরি আসল বিষয়কে অস্বীকার করা। সিঙ্গুরের টাটা মোটরস উৎখাত, মুখ্যমন্ত্রী এখন বলছেন, ওটা ওরা করেননি— সিপিএম করেছে— অর্থাৎ এতকালের প্রচার প্রতিষ্ঠার পরে এখন সম্পূর্ণ অস্বীকার। গ্যাসলাইটিং, মিডিয়া এক পরম নির্ভর পুষ্টি। গ্যাসলাইটিংয়ের তূনে তীক্ষ্ণ বানগুলো, প্রতারণা মিথ্যা-অস্বীকার-বিভ্রান্তি ও বিভেদ বিচ্ছেদ। আর তার প্রতিক্রিয়া, নিজের চিন্তাধারা, নিজের বিশ্বাসে অনাস্থা, নিজের যুক্তির ন্যায্যতা আর আত্মবিশ্বাস হারিয়ে নিজের মানসিক সুস্থতা সম্পর্কেই সন্দিহান হয়ে ওঠা। ফলে ব্যক্তিত্বই হারিয়ে ফেলে আত্মমর্যাদায় নির্বিকার হয়ে পড়া। গ্যাসলাইটিংয়ের এই সম্মোহনী প্রভাব ব্যক্তি জীবনের গন্ডি ছাড়িয়ে, সমাজের উপরেও সমান কার্যকরী— আর সমষ্টি গ্যাস লাইটিংয়ে মিডিয়া একেবারে ধন্বন্তরী।
সবসময়ে গ্যাসলাইটিং মানসিক অসুস্থতা সৃষ্টি করতে না পারলেও মানসিক স্থবিরতা সৃষ্টিতে সফল হয়। স্নায়ুতন্ত্রের যে স্নায়ু লজ্জাঘেন্না বা ক্ষোভ ক্রোধকে স্পন্দিত করে, সেগুলিকে হয়তো অসাড়ই করে দেয়। শিক্ষা মন্ত্রী ও তার বান্ধবীর কোটি কোটি টাকা বা তাদের সম্পর্কের রসায়ন নিয়ে ঠাট্টা-তামাশায় মজা লোটার পরিবর্তে, শিক্ষার সর্বনাশে, লজ্জা দুঃখ ও আতঙ্কে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠার কথা মানুষের। শিক্ষার পরিধিতে তো কেবল শিক্ষক নিয়োগই বিষয় নয়, স্কুল-কলেজের পরিকাঠামো থেকে ছাত্র-শিক্ষক রেশিও এবং শিক্ষকের পাঠদানের যোগ্যতা ও সময়ও বিবেচনায় আনতে হয়। স্কুলের পড়াশুনোয় ছাত্র-ছাত্রী কতটুকু সুযোগ পায় শেখার— শিক্ষকই বা শেখাবার জন্য যতটুকু সময় ইচ্ছে থাকলেও দিতে পারেন? স্কুলে প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিকে ছাত্র সংখ্যা অনুযায়ী শিক্ষক আছেন তো? একজন শিক্ষককেই কি গোটা তিনেক ক্লাস সামলাতে হয় না? তারপরে, এখন তো মিড ডে মিলের হিসাব নিকেশ থেকে তদারকি একদিকে, অন্যদিকে ভোটার লিস্ট থেকে ভোটগ্রহণ গণনা সব কিছুতেই ছাই ফেলতে ভাঙা কুলো শিক্ষক সমাজ। এর মাঝখান থেকে লোপাট হয়ে যাচ্ছে শিক্ষা। বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার্থী। আসলে বঞ্চিত করা হচ্ছে শিক্ষার অধিকার থেকে। আর এক-একটা প্রজন্মকে যদি টাকা দিয়ে চাকরি কেনা অযোগ্য শিক্ষকের কাছে ছাত্র হয়ে থাকতে হয়, তাহলে তাদের জ্ঞানার্জন থেকে শুরু করে, নৈতিক শিক্ষা ও মূল্যবোধ কি নিদারুণ করুণ নয়? তাহলে তাদের আগামী দিন কি ভয়ানক বিষময়! তাহলে রাজ্য গড়বে কে— দেশ গড়বে কে? তাহলে ভবিষ্যৎ তো ভয়ঙ্কর বিভীষিকাময়।
পঞ্চায়েতের নিম্নতম স্তর থেকে প্রশাসনের শিখর পর্যন্ত চুরি, প্রতারণা, ঘুষ কাটমানিতে কোন ফল বিক্রেতার সাতমহলা বাড়ি হলো, কোন মাছওয়ালার কত প্রাসাদ, কত রাইস মিল হলো, শুধু এই অন্যায় অনৈতিকতায় সীমাবদ্ধ নয়— আসল ক্ষতি হচ্ছে সমাজের মানুষের। যে টাকা দিয়ে রাস্তা পাকা হওয়ার কথা ছিল, কি নদীর পাড় বাঁধানো, কি একটা ছোট ব্রিজ তৈরি অথবা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা প্রাথমিক স্কুলের পরিকাঠামোর উন্নতি করার কথা ছিল, তা যে আপাদমস্তক প্রশাসন আত্মসাৎ করল, তাতে কি সাধারণ মানুষের ক্ষতি হলো না? বঞ্চিত হলো না তার সরকারি পরিষেবা পাওয়ার অধিকার?
ব্যক্তির অনৈতিকতার থেকেও বিষাক্ত সমষ্টির নীতিহীনতা এবং প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি। দেশ ও রাজ্যের প্রশাসনিক এই দুর্নীতিপরায়ণতা যা গ্যাসলাইটিংয়ের আলো আঁধারে স্পষ্ট হয় না, তা কেবল ন্যায়-অন্যায়ের নৈতিকতার প্রশ্ন তোলে না— তোলে সামগ্রিক বঞ্চনার, প্রশ্নও ওঠে অধিকারের। এই বঞ্চনা মেনে নেওয়ার অর্থ কোনও সৌজন্য নয়, সহনশীলতাও নয়। এই হেলদোল না থাকাটা বা উদাসীনতা এক অর্থে কাপুরুষতা, অন্যদিকে অন্যায় মেনে নেওয়ার চরম অপরাধে অপরাধী হয়ে পড়া। প্রচণ্ড গরমে তীব্র ঠান্ডায় ঝড় বৃষ্টিতে দিনের পর দিন বঞ্চিত যোগ্য চাকরিপ্রার্থীরা পথে। তারজন্য কত মানুষের গলায় ভাত আটকে যাচ্ছে? কতজন অনুতাপে পুড়ছে— অপরাধবোধে লজ্জায় মাথা নোয়াচ্ছে?
তবে, জেগে উঠছে তরুণ প্রজন্ম— জাগছে গ্রাম-মাঠ পাথার ছাপিয়ে তাদের জাগরণের আওয়াজ উঠছে। নিজের অধিকার ছিনিয়ে নিতে আবাস যোজনার বঞ্চনার বিরুদ্ধে গ্রাম বাংলা মুখর— মুষ্ঠিবদ্ধ হাত কথা বলছে। দিদির দূতেদের উষ্ণ অভ্যর্থনা মিলছে না, মিলছে লাঞ্ছনা। মানুষ প্রমাণ করছে তাদের বোধ অসাড় হয়ে যায়নি মায়াবী গ্যাসলাইটিঙে। যুদ্ধ শুরু করেছে নিজেদের হকের পাওনা বুঝে নিতে একসাথে। জেগে ওঠা গ্রামনগর ভীরু-দীন-হীন লজ্জাকে ধিক্কার দিয়ে ডাক দিচ্ছে— ‘‘আড়াল তোমার যাক রে ঘুচে, লজ্জা তোমার থাকরে মুছে,/চিরদিনের মতো তোমার ছাই/হয়ে যাক ভয়।’’ লজ্জা, অনেকটা লন টেনিস প্লেয়ারদের মতো দু’-চার পা রিট্রিট করে আরও প্রচণ্ড শক্তি নিয়ে প্রতিপক্ষকে পরাস্ত করা। মানুষ ঐ শক্তিধর লজ্জা অর্জন করে সিংহ বিক্রমে ঝাঁপিয়ে পড়ছে অন্যায়ের বিরুদ্ধে। অপরাধীরা সংখ্যালঘু, হাতে গোনা— প্রতিবাদী মানুষ অগণন।
Comments :0