দীপাঞ্জনা দাশগুপ্ত দে, কাকদ্বীপ
বৃষ্টি এলেই তো আতঙ্কে থাকি। এই বুঝি এবার শেষ সম্বল বাড়িটাও গেল নদীতে। কাকদ্বীপের কাছে বুড়ি ভদ্র (বুড়ি গঙ্গা বলেও পরিচিত) নদীর তীরে বুধাখালি, দুর্গানগর, ঈশ্বরীপুর গ্রাম।
প্রতি বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগে নদীর পার ভাঙা এক নিত্য ঘটনা। বুলবুল, অমফান, ইয়াসের ঝড়ে গ্রামের মানুষের চাষের জমি, বসতবাটি সহ বিঘা বিঘা জমি তলিয়ে গিয়েছে নদী গর্ভে। আগ্রাসী নদীকে আটকাতে গত দশ বারো বছর ধরে শুধু প্রতিশ্রুতিই দিয়ে গেছে তৃণমূল। ‘‘আজ অবধি বোল্ডার ফেলে নদীর বাঁধ ভাঙার পথ আটকাতে পারেনি তৃণমূল’’, বলেন বুধাখালী গ্রামের বাসিন্দা সঙ্গীতা মন্ডল।
ছোটো থেকে এই গ্রামেই বড় হয়েছেন বছর ৩৮’র সঙ্গীতা। বিয়েও হয়েছে এই গ্রামেই। নদীর দিকে মুখ করে প্রায় আঙুল তুলে প্রায় দশ কিলোমিটার দূরে দেখিয়ে বলেন, ‘‘ওই চরার কাছে অবধি এক সময় ছিল আমাদের গ্রাম। এখন নদী ভাঙতে ভাঙতে এখানে এসে দাঁড়িয়েছে। আমার শ্বশুরের প্রায় ১২ বিঘে জমি জলে গেছে। গত দশ বছরে প্রায় সাতবার ভেঙেছে নদীবাঁধ। তৃণমূলের পঞ্চায়েত নেতারা সব দেখেও শুধু করে দেব করে দেব বলে।’’
সামান্য নিম্নচাপের বৃষ্টিতেই বুধাখালি বাঁধের মাটি গলে পড়ছে। একদিকে কংক্রিটের বাঁধ থাকলেও জলের ঢেউতে তাও ভগ্ন। সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ টানা বাঁধের কোনও ব্যবস্থা নেই। মাঝখান থেকে ভাঙা। সেখান থেকেই অনায়াসে ফের জল ঢুকে যেতে পারে গ্রামে।
বাঁধের মাঝখানে ভাঙা অংশ দেখিয়ে প্রৌঢ়া শর্মিষ্ঠা ভান্ডারি বললেন, ‘‘এখান থেকে নোনা জল ঢুকলেই তো আমাদের ফসল সব নষ্ট হয়ে যাবে। ৫০০ টাকা করে দিচ্ছে। আমাদের ৫০০ টাকা দরকার নেই এই বোল্ডার ফেলে দিলেই গ্রাম গুলো, আমাদের জমি গুলো বেঁচে যায়।’’
নদী গর্ভে তো এত জমি গেল, তা নিয়ে সরকারের কাছ থেকে কোনও ক্ষতিপূরণ কি পাওয়া গেছে? গণশক্তি ডিজিটালের এই প্রশ্নের উত্তরে প্রায় চেঁচিয়ে উঠে শর্মিষ্ঠা ভান্ডারি বলেন, ‘‘ক্ষতিপূরণ দেবে তৃণমূল? দেখোগে সেই টাকা হয়তো কাটমানি খেয়ে বসে আছে তৃণমূলের নেতা। এক একজনের দশ বছর আগে আমাদের মতো মাটির বাড়ি ছিল। এখন দেখোগে অট্টালিকা। এত টাকা আসে কোথা থেকে বোঝোনি? সব আমাদের ভাগের টাকা চুরি করেছে তৃণমূল।’’
শান্তিরাম মন্ডলের চাষের জমি ইয়াসের সময় তলিয়ে গেছে নদী গর্ভে। প্রচুর টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে চোখ মুছতে মুছতে ৬৫ বছরের প্রৌঢ় বলেন, ‘‘এতো ক্ষতি হয়েছে তবুও মমতা ব্যনার্জির পঞ্চায়েত কোনোও কিছুর জন্য টাকা দেয়নি। কিন্তু খেটে খাব যে সেই উপায়ও নেই। গ্রামে কোনো রোজগার নেই। চাষের জমি চলে গেলে তো সব গেল। এখন গ্রামের অধিকাংশ ছেলে, যুবকরা কাজের জন্য ভিন রাজ্যে চলে গিয়েছে টাকা রোজগার করতে। আর মেয়ে, বউরা অন্যের জমিতে দিনমজুরি খেটে যা রোজগার করে। এভাবে কোনও মতে চলছে। ক্ষতিপূরণ কোনও উপায় আমাদের সরকার করে দেয়নি।’’
Comments :0