সিএএ-বিরোধী আন্দোলনকে আরএসএস’র শাসনতন্ত্র উৎখাতের লড়াইয়ের সঙ্গে জুড়তে হবে। অন্যথায় দেশের অখণ্ডতা রক্ষা করা যাবে না। সোমবার গুয়াহাটিতে সিএএ-বিরোধী আন্দোলনের বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে একথা বলেন দেশের কৃষক আন্দোলনের অন্যতম নেতা যোগেন্দ্র যাদব।
তিন বছর আগে আজকের দিনে আসামে সিএএ-বিরোধী আন্দোলনে বিজেপি সরকারের পুলিশের গুলিতে দীপাঞ্জন দাস, সেম স্টেফার্ড, ঈশ্বর নায়ক, আবদুল হালিম এবং দ্বিজেন্দ্র পাংসিং নিহত হন। তাঁদের স্মরণে প্রতি বছর ১২ ডিসেম্বর আসামের বিভিন্ন সংগঠন রাজ্য জুড়ে শহীদ দিবস পালন করে। এদিন গুয়াহাটির লক্ষ্মীধর কলাক্ষেত্রে শহীদ স্মরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল সিএএ-বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক নাগরিকত্ব সংশোধিত আইন বিরোধী কোঅর্ডিনেশন কমিটি। রাজ্যের বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী ড. হীরেন গোঁহাইয়ের সভাপতিত্বে এই সভায় যোগেন্দ্র যাদব ছাড়াও বক্তব্য রাখেন প্রবীণ সিপিআই(এম) নেতা হেমেন দাস, শিক্ষাবিদ অপূর্ব শর্মা প্রমুখ।
মুখ্য বক্তা যোগেন্দ্র যাদব বলেন, সিএএ’র বিরুদ্ধে আন্দোলন প্রথম আসামে গড়ে উঠেছিল। আসামে এই আন্দোলন বিদ্রোহের রূপ নেয়। দিল্লির শাহিনবাগেও এই আন্দোলন গড়ে ওঠে। কিন্তু শাসক ঘনিষ্ঠ সংবাদমাধ্যম আসামের আন্দোলনকে চাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। তুলনায় শাহিনবাগের আন্দোলন কিছুটা প্রচারের আলোয় এসেছিল। এর পেছনে সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য ছিল। কারণ, শাহিনবাগের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মুসলিম মহিলারা। আর আসামের আন্দোলনে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সবাই নেমেছিলেন। শাহিনবাগের আন্দোলনকে দেখিয়ে বিজেপি সারা দেশে মুসলিম-বিরোধী প্রচার চালিয়ে বলেছিল, সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন দিয়ে মুসলিমদের শিক্ষা দিয়েছি।
তাই মুসলিমরাই শুধু এর প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছে। কিন্তু আসামে এই আন্দোলনকে হিন্দু-মুসলিম বলে ভাগাভাগি করতে পারেনি। ফলে আসামের বিদ্রোহকে ‘গোদী-মিডিয়া’ চাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল, যদিও তা পারেনি।
যাদব বলেন, দেশের সংবিধান ধ্বংস করতে সিএএ পাশ করেছে মোদী সরকার। বিজেপি-আরএসএস দেশের সংবিধান মানে না। ধর্মনিরপেক্ষ কাঠামোকে ভেঙে ভারতকে ধর্মীয় রাষ্ট্রে পরিণত করতে উঠেপড়ে লেগেছে ওরা। এজন্য দেশকে ফের টুকরো টুকরো করার ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। এই ষড়যন্ত্রের অঙ্গ হিসাবেই নাগরিকত্ব আইন বদলানো হয়েছে।
হেমেন দাস সভায় জানিয়ে দেন, সিএএ-বিরোধী আন্দোলন থেকে বামপন্থীরা একচুলও পিছু হটবে না। সভাপতি হীরেন গোঁহাই বলেন, দুঃখজনক হলেও একথা সত্যি, আসামে সিএএ-বিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্বের একাংশ সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করেছে। কিন্তু বিজেপি’র জেনে রাখা ভালো, নেতাদের কিনে নিলেও রাজ্যের মানুষ এই আইনকে মেনে নিচ্ছেন না। সিএএ বাতিলের দাবিতে রাজ্যে ফের জোরালো আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
Comments :0