Anubrata Mondal

জেল, পুলিশের অসহযোগিতায় থমকে গেল অনুব্রতর দিল্লি যাত্রা

রাজ্য

আদালতের নির্দেশের পরেও স্রেফ রাজ্য পুলিশ-প্রশাসনের চরম অসহযোগিতায় মুখ্যমন্ত্রীর স্নেহধন্য ‘বীর’ অনুব্রত মণ্ডলের দিল্লি যাত্রা ফের পিছলো একদিন। আদালতের নির্দেশের পরে রবিবারও দিনভর টানাপোড়েনের পরে শেষমেশ দিল্লি নিয়ে যাওয়া গেল না গোরু পাচারকাণ্ড অন্যতম অভিযুক্ত এই তৃণমূল নেতাকে। 
দিল্লির ইডি’র মুখোমুখি অনুব্রত মণ্ডলকে জেরা করা হলে শীর্ষ মহলের রক্তচাপ কেন বাড়ছে, এবার সেই প্রশ্ন সামনে আসতে শুরু করেছে। প্রথমে দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউ কোর্ট, তারপর আসানসোলে সিবিআই’র বিশেষ আদালত এবং শেষে কলকাতা হাইকোর্ট— অনুব্রত মণ্ডলকে দিল্লিতে ইডি’র জেরার মুখোমুখি হাজির করার অনুমতি মিলেছে। দফায় দফায় মরিয়া চেষ্টার পরেও মেলেনি রক্ষাকবচ। তারপরও অনুব্রতর দিল্লি যাত্রা ঠেকাতে রবিবার সকাল থেকে আসানসোল জেল কর্তৃপক্ষ ও আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট অসযোগিতার যে ছবি তুলে ধরল তা কার্যত বেনজির। 


দিল্লি যাওয়া আটকাতে অনুব্রতর তরফে কলকাতা হাইকোর্টে যে আবেদন জানানো হয়েছিল তাও শনিবার খারিজ হয়ে যায়। শুধু তাই নয় একই আবেদনের ভিত্তিতে দিল্লি হাইকোর্টেও কপিল সিবাল মামলা করেন। ক্ষুব্ধ কলকাতা হাইকোর্ট সেই ঘটনা জানতে পারার পরে তথ্য গোপনের অভিযোগে ১ লক্ষ টাকা জরিমানাও করে অনুব্রতকে। অনুব্রতর তিহার যাত্রা ঠেকাতে ময়দানে নামে রাজ্য পুলিশ প্রশাসন। শনিবার রাত থেকে চলল এনিয়ে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার সঙ্গে চাপনউতোর, এমনকি পত্র-যুদ্ধ!
কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশের পরেই শনিবার রাতেই আসানসোল জেল কর্তৃপক্ষকে চিঠি পাঠিয়ে ইডি’র জানতে চায় অনুব্রতকে কখন জেল থেকে বের করে দিল্লি নিয়ে যাওয়া হবে। কেননা শনিবার কলকাতা হাইকোর্টে বিচারপতি বিবেক চৌধুরি নির্দেশ দিয়েছিলেন অনুব্রতকে কলকাতায় কোন কেন্দ্রীয় হাসপাতালে মেডিক্যাল টেস্ট করিয়ে তারপরে বিমান দিল্লি নিয়ে যাওয়া যাবে। যেহেতু তিনি আসানসোল জেলে বন্দি, ফলে তাঁকে দিল্লিতে পাঠানোর দায়িত্ব জেল কর্তৃপক্ষের। শনিবার রাত থেকে রবিবার সকাল পর্যন্ত দুফায় ইডি’র তরফে আসানসোল জেল কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হয়। আসানসোল জেল কর্তৃপক্ষের তরফে প্রথমে কোনও উত্তর মেলেনি। পরবর্তীতে আসানসোল জেলের তরফে অনুব্রতকে কলকাতা হয়ে দিল্লি নিয়ে যাওয়ার জন্য আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটকে দায়িত্ব নিতে অনুরোধ করা হয়। যদিও আসানসোল পুলিশ জানিয়ে দেয় অনুব্রতকে নিয়ে যেতে পারবে না। এরপর জেল কর্তৃপক্ষ ইডি-কে একথা জানায়। দুপুর পর্যন্ত চলে দফায় দফায় এই নাটক। যদিও সকাল থেকে আসানসোল জেল কর্তৃপক্ষের ‘তৎপরতা’ দেখেই স্পষ্ট হয়ে যে আদৌ অনুব্রতকে রবিবার জেল থেকে বের করার কোনও উদ্যোগই নেই।


আদালতে নির্দেশ সত্ত্বেও পুলিশ প্রশাসন এমন অসহযোগিতায় বিস্মিত কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকরাও। দুপুরে ইডি’র তরফে পালটা জেল কর্তৃপক্ষকে জানানো হয় অনুব্রতকে দিল্লি নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব তাঁদের নয়। যে ভাবে সায়গল হোসেনকে দিল্লি নিয়ে গিয়ে রাউস অ্যাভিনিউ কোর্টে পেশ করা হয়েছিল সেভাবেই অনুব্রতকেও নিয়ে যেতে হবে। হাইকোর্টের নির্দেশনামায় বলা নেই যে অনুব্রতকে এসে নিয়ে যাবে ইডি। এদিকে পুলিশও অনড়, অনুব্রতকে নিয়ে যেতে পারবে না তারা। জেল কর্তৃপক্ষও হাত তুলে দেয়। ফলে রবিবার অনুব্রতর দিল্লি যাত্রা ফের থমকে যায়।
গোটা ঘটনা দুপুরেই দিল্লির সদর দপ্তরে জানান কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি’র আধিকারিকরা। জানা গিয়েছে গোটা পরিস্থিতি জানিয়ে সোমবার সকালেই আসানসোলে সিবিআই’র বিশেষ আদালতে দ্বারস্থ হবে ইডি। যেভাবে আদালতে নির্দেশ অমান্য করা হয়েছে তাও জানানো হবে ইডি’র তরফে। জেল কর্তৃপক্ষের তরফে আদালতে জানানো হবে গোটা পরিস্থিতি।
গত ডিসেম্বর থেকেই অনুব্রতর দিল্লি যাত্রা ঠেকাতে রাজ্য সরকার, প্রশাসনের বেনজির তৎপরতায় স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে একমাত্র ওঁর ক্ষেত্রে এমন আচরণ কেন? কিছু কি ‘ভয়’ পাচ্ছে সরকার, প্রশাসন? 
স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে, কয়লা পাচারকাণ্ডে রাজ্য তৃণমূল ও সরকারের একেবারে শীর্ষ মাথার যোগ আড়াল করতেই এমন তৎপরতা চলছে। প্রায় সাত মাস জেলে থাকা অনুব্রতর রক্ষণ আদৌ দিল্লিতে ইডি’র জেরায় সুরক্ষিত থাকবে কীনা তা নিয়ে শঙ্কায় ভুগছে শাসক শিবির। তাই অনুব্রতর দিল্লি যাত্রা ঠেকাতে সর্বোচ্চ শক্তি দিয়েই নেমেছে মমতা ব্যানার্জির সরকার।

 

 

Comments :0

Login to leave a comment