জোতদারদের দালাল ও লেঠেল বাহিনীকে হটিয়ে বৈধ বর্গাদার ও পাট্টাদাররা নিজেদের জমির অধিকার ফের প্রতিষ্ঠা করলেন বালুরঘাট ব্লকের ডাঙ্গা পঞ্চায়েতের গ্রামবাসীরা। নেতৃত্বে ছিল সারা ভারত কৃষক সভা।
প্রায় বাহান্ন একর জমিতে ধানগেড়ে আলের উপর লাল ঝান্ডা লাগিয়ে নিজেদের অধিকার আবারও বুঝে নিলেন গ্রামবাসীরা।
ঘটনা মঙ্গলবার দুপুরের। কয়েকদিন ধরে চলছিল বৈধ বর্গাদার ও খাস জমির পাট্টাদারদের উপর জমির দালাল ও মালিক পক্ষের লেঠেল বাহিনীর ভয় দেখানো। চলছিল চোরা গোপ্তা আক্রমণ। এমনকি তির ধনুক নিয়েও আক্রমণাত্মক হতে দেখা গিয়েছে।
খবর যায় এলাকার কৃষক সভার নেতৃত্বের কাছে। স্থানীয় কৃষক নেতৃত্ব ও গ্রামবাসীরা একত্রিত হয়ে পালটা লাঠি ও লাল ঝান্ডা হাতে জমিতে নেমে পড়েন। জমির দালাল আর তাদের সঙ্গী দুষ্কৃতীবাহিনী পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।
দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট ব্লকের ডাঙ্গা পঞ্চায়েতের ধলতারা, চক বিজয়শ্রী ও মাধবপাড়া মৌজার গ্রামবাসীরা জানাচ্ছেন, প্রায় বাহান্ন একর জমি পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকারের সময়ে বৈধ বর্গাদারদের নামে রেকর্ড হয়েছিল। একাংশকে দেওয়া হয়েছিল জমির মালিকানার পাট্টাও। সেই জমিগুলিতে এতদিন তাঁরা চাষবাস করে আসছেন। অনেকেই বাপ ঠাকুরদার বর্গা জমিতেই জীবিকা নির্বাহ করছেন। দু' দিন আগে গ্রামে কিছু বহিরাগত দুষ্কৃতী তির, ধনুক, লাঠি নিয়ে সেই জমিই দখল করতে নেমে পড়ে। আচমকা আক্রমণে প্রাথমিকভাবে সামান্য বিচলিত হয়ে পড়েন। কিন্তু তারপরই শুরু হয় প্রতিরোধের পরিকল্পনা। সারা ভারত কৃষক সভার নেতৃত্বে একত্রিত হয়ে পালটা লাঠি ও ঝান্ডা নিয়ে নিজেদের জমি ফের দখলে নিতে নেমে পড়েন গ্রামবাসীরা। দুষ্কৃতীরা রণে ভঙ্গ দিয়ে পালিয়ে যায়।
ইতিমধ্যে বালুরঘাট থানায় অভিযোগ জানিয়ে নিজেদের জমি সহ পরিবারের সুরক্ষা দাবিতে প্রশাসনের কাছে আবেদন জানিয়েছে গ্রামবাসীরা। এদিন দুপুরে ওই এলাকার বৈধ বর্গাদার ও বৈধ পাট্টাদাররা ধলতারা গ্রামের ওই জমিতে লাল ঝান্ডা পুঁতে সভা করেন সারা ভারত কৃষক সভার নেতৃত্বে। নিজেদের জমির আল দিয়ে মিছিল করে কৃষক সভার লাল ঝান্ডা নিয়ে। দুষ্কৃতীরা জমির দখল নিয়ে চারাও বসিয়ে দিয়েছিল। সেসব উপড়ে ফেলে নতুন করে চারা রোপন করেন কৃষকরা।
গ্রামবাসী চন্দন পাল, দেওয়ান মুর্মু, কানাই হেমব্রমরা বলেন, ‘‘আমরা এই এলাকার কয়েকশো নথিভুক্ত বর্গাদার। বামফ্রন্ট সরকারের সময় থেকেই জমিতে চাষবাস করে আসছি। কিন্তু হঠাৎ জোদ্দার তথা জমির মালিকের দালাল ও দুষ্কৃতীরা তির ধনুক নিয়ে জমিতে এসে বলে বর্গাদার আর পাট্টাদাররা এই সব জমিতে চাষবাস করতে পারবে না। জমি না ছাড়লে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকিও দেওয়া হয়। আমরা মারমুখী দুষ্কৃতীদের আক্রমণে সামান্য বিচলিত হয়েছিলাম। আমরা কৃষক সভার নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ করতেই ছুটে আসে নেতৃত্ব। সমস্ত বর্গাদার সহ গ্রামবাসীরা একত্রিত হয়ে পালটা অভিযান চালাতেই পালিয়ে যায় জমির মালিকের দালাল আর দুষ্কৃতীবাহিনী।’’
সারা ভারত কৃষক সভার নেতা পরিমল সরকার বলেন, ‘‘ বামফ্রন্ট সরকারের সময়ে বৈধ নথিভুক্ত বর্গাদার ও পাট্টাধারি জমির মালিকদের বেআইনি ভাবে উচ্ছেদের প্রচেষ্টা চালিয়েছিল। জোতদার আর তাদের দালাল ও দুষ্কৃতীদের এই আক্রমণ আমরা রুখে দিয়েছি।’’ তিনি বলেন,‘‘ আগামী দিনে আরো আক্রমণ আসতে পাড়ে। কিন্তু লাল ঝান্ডা ভয় পায় না এই সব দুষ্কৃতীদের। ন্যায্য লড়াইয়ে কৃষকদের স্বার্থে সারা ভারত কৃষক সভা লড়াই চালিয়ে যাবে।’’ এদিন সভা সহ জমি পুনরুদ্ধারে উপস্থিত ছিলেন সারা ভারত কৃষক সভার জেলা সভাপতি অমিত সরকার, গণ আন্দোলনের নেতা কল্যাণ দাস, সত্যব্রত দেব বর্মন, স্থানীয় কৃষক নেতা পীযূষ সরকার প্রমুখ।
বামফ্রন্ট সরকারের ভূমি সংস্কারের হাত ধরে চাষের অধিকার নিশ্চিত করতে দেওয়া হয়েছিল বর্গা এবং পাট্টার নথি। তৃণমূল সরকারের মেয়াদে সেই অধিকার বারবার আক্রান্ত হচ্ছে, জানিয়েছে কৃষক সভা।
Comments :0