Parliament Nirmala Sitharaman

পাঁচ বছরে ১০ লক্ষ কোটি টাকা কর্পোরেট ঋণ মকুব ব্যাঙ্কের, নির্বাচনী বন্ডের সঙ্গে যোগাযোগ: ইয়েচুরি

জাতীয়

Parliament Nirmala Sitharaman

মোদী সরকার গত পাঁচ বছরে কর্পোরেটের ১০ লক্ষ কোটি টাকার উপর অনাদায়ী ঋণ মকুব করেছে। মঙ্গলবার রাজ্যসভায় প্রশ্নের লিখিত জবাবে একথা জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। কর্পোরেটদের ঢালাও ব্যাঙ্কের অনাদায়ী ঋণ মকুব হওয়ায় ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স শিটে অনাদায়ী ঋণের হার কমে হয়েছে ৫.৯ শতাংশ। যদিও অনাদায়ী ঋণ মকুবের হার ধরলে অবশ্য এই মুহুর্তে ব্যাঙ্কের মোট অনাদায়ী ঋণের হার বেড়ে দাড়াবে ১১ শতাংশের উপর। টাকার অঙ্কে যা হবে ১৭ লক্ষ কোটি টাকার উপর। অনাদায়ী ঋণের সর্বকালীন রেকর্ড।

 


এদিকে মোদী জমানায় কর্পোরেট ঋণ মকুবের নামে ব্যাঙ্কের অর্থ লুটের তীব্র সমালোচনা করেছেন সিপিআই(এম) নেতা সীতারাম ইয়েচুরি। ঋণ মকুব নিয়ে তিনি বলেন, দেশে এটা একটা কলঙ্কজনক ঘটনা। কেন্দ্রের এই সরকার যত ধান্দার কর্পোরেট রয়েছে তাদের এভাবে সাহায্য করছে। শেষ পাঁচ বছরে ব্যাঙ্কে মোট অনাদায়ী ঋণ মকুব হয়েছে ১০ লক্ষ ৯ হাজার ৫১১ কোটি টাকা। তাঁর প্রশ্ন, এই যে ঋণ মকুবের টাকা মোদী সরকার তোফা হিসাবে তার বন্ধু কর্পোরেটকে তুলে দিলেন তাতে কত দেশে কত সরকারি স্কুল ও সরকারি হাসপাতাল হতো তা তিনি বলবেন কি?  তিনি এপ্রসঙ্গে নির্বাচনী বন্ডের কারচুপির কথাও টেনে আনেন। 

 

তিনি বলেন, ‌আসলে এই ঘটনায় বোঝা যাচ্ছে বছরে প্রায় ১লক্ষ ৪১ হাজার ৪৬২ কোটি টাকা চুরি হওয়ার জন্য যেন ব্যবস্থা করা হয়েছে। যে ঋণ উদ্ধার হবে না তা এখন কর্পোরেটদের চুরির জন্য রাখা থাকছে। এই কারণে আমরা মনে করি নির্বাচনী বন্ডের টাকা কারা কোথায় জমা দিচ্ছে তা গোপন থাকা উচিত নয়। কর্পোরেটের বিশাল অঙ্কের টাকা গোপনে নির্বাচনী বন্ডের নামে যা বিজেপি তহবিলে জমা পড়ছে তা বন্ধ করা উচিত। তিনি বলেন, যে কারণে ব্যাঙ্ক বিপুল ঋণ খেলাপী কর্পোরেটের নাম প্রকাশ করে না, সেই একই কারণে নির্বাচনী বন্ডে কোন কর্পোরেট বিজেপি তহবিলে অর্থ জমা দিচ্ছে তার নাম প্রকাশ করে না। আমরা চাই কর্পোরেট অনাদায়ী ঋণের সব তথ্য প্রকাশ করা হোক।

 


এদিকে সংসদে অর্থমন্ত্রীর পেশ করা তথ্য দেখা গেছে, ২০১৭-১৮, ২০১৮-১৯, ২০১৯-২০, ২০২০-২১, ২০২১-২২ এই পাঁচ বছরে কর্পোরেট ঋণ মকুব হয়েছে যথাক্রমে ১ লক্ষ ৬১ হাজার ৩২৮ কোটি টাকা, ২লক্ষ ৩৬ হাজার ২৬৫ কোটি টাকা, ২লক্ষ ৩৪ হাজার ১৭১ কোটি টাকা, ২লক্ষ ২হাজার ৭৬২ কোটি টাকা, ১লক্ষ ৭৪ হাজার ৯৬৮ কোটি টাকা। মোট ১০ লক্ষ ৯ হাজার ৫১১ কোটি টাকা। এদিকে কত জনের অ্যাকাউন্টে এই অনাদায়ী ঋণের টাকা মকুব করা হয়েছে তা জানানোর নিয়ম নেই বলে তা জানানো যাবে না বলে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক জানিয়েছে। তবে এই বড় অঙ্কের অনাদায়ী ঋণের টাকা পুরোটাই কর্পোরেট ঋণ বলেই জানা গেছে। এদিকে অনাদায়ী ঋণের অঙ্ক ব্যালেন্স শিট থেকে মুছে দিতে এই ঋণ মকুবের নিয়ম রাখা হয়েছে বলে অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন। তিনি আরো জানান ঋণ মকুব করে তা ব্যালেন্স শিট থেকে মোছা হলেও সেই অনাদায়ী ঋণ আদায়ের প্রক্রিয়া চলে। কিন্তু দেখা গেল সেই প্রক্রিয়াতে যে ঋণ আদায় হয়েছে তা খুবই কম। ঋণ মকুব অঙ্কের মাত্র ১০ শতাংশ আদায় হয়েছে। বাকি অনাদায়ী ঋণ পুরো তামাদি হয়ে যায়। মন্ত্রী দেওয়া  তথ্য বলা হয়েছে, পাঁচ বছরে মকুব হওয়া ১০ লক্ষ কোটি টাকার মধ্যে ঋণ আদায় হয়েছে মাত্র ১০ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা হলো ১লক্ষ ৩২ হাজার কোটি টাকা।

 


এদিন সংসদে অর্থমন্ত্রী বলেন,‘ব্যাঙ্কের ঋণ মকুব নিত্যদিনের কাজের মধ্যেই পড়ে। তাদের ব্যালেন্স শিটে অনাদায়ী ঋণের তথ্য মুছে দিয়ে তা পরিষ্কার করতে ঋণ মকুবের প্রক্রিয়া চলে। ব্যালেন্স শিট পরিষ্কার থাকলে থাতে কর ছাড়ের সুবিধা মেলে।’ সেই সুবিধা নিতেই ঋণ মকুব করা হয় বলে দাবি মন্ত্রীর। তিনি বলেন,রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নির্দেশ মেনে এবং বোর্ডের অনুমোদনে ঋণ মকুবের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে তিনি জানান। এভাবে গত পাঁচ বছরে ১০ লক্ষ কোটি টাকা ঋণ মকুব হয়েছে এবং তার মধ্যে ১.৩২ লক্ষ কোটি টাকা ঋণ আদায় হয়েছে বলে তিনি জানান। কার্যত কর্পোরেটের অনাদায়ী ঋণ মকুব ব্যাঙ্কের মামুলি ঘটনা বলে তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন।
 

Comments :0

Login to leave a comment