Tripura violence

ত্রিপুরায় যা চলছে তা কোনও সভ্য দেশে হয় না, অভিযোগ সিপিআই(এম)’র

জাতীয়

ত্রিপুরায় সন্ত্রাস বন্ধ করতে সোচ্চার হতে সমস্ত ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির কাছে আহ্বান জানালো সিপিআই(এম)। রবিবার দশরথ দেব ভবনে এক সাংবাদিক বৈঠকে সিপিআই (এম) রাজ্য সম্পাদক জীতেন্দ্র চৌধুরি এই আহ্বান জানান। বৈঠকে ছিলেন রাজ্য বামফ্রন্টের আহ্বায়ক নারায়ণ কর এবং পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তপন চক্রবর্তী। এদিন তাঁরা তিনজন রাজ্যের মুখ্য সচিবের সঙ্গে দেখা করেন। ২ মার্চ রাজ্যে ফলপ্রকাশের পর থেকে বিজেপি যে ভয়ঙ্কর সন্ত্রাস চালাচ্ছে তা নির্দিষ্ট তালিকা দিয়ে তুলে ধরেন। ঘরবাড়ি-দোকান ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, রুটি-রুজির উপরে হামলা, মহিলাদের উপরে আক্রমণ সহ ৬৬৮টি ঘটনার নাম, ঠিকানা দিয়ে মুখ্য সচিবের কাছে জমা দিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়েছে।  
সেখান থেকে ফিরে সাংবাদিক বৈঠকে জীতেন্দ্র চৌধুরি বলেন, মুখ্যমন্ত্রী জিবি হাসপাতালে ভর্তি কয়েকজন আহতকে দেখতে গেছেন। এরা কি আক্রমণকারী না আক্রান্ত? এরা তো আক্রমণ করতে গিয়ে প্রতিরোধে আহত। এদের অভয় দিচ্ছেন তিনি, আক্রান্তদের হুমকি দিচ্ছেন। মুখ্যমন্ত্রী বার্তা দিচ্ছেন এসব হিংসাত্মক ঘটনা যারা ঘটাচ্ছে তাদের কাউকে ছাড়া হবে না। শনিবার তিনি মুখ্যসচিব, ডিজিপি এবং বিজেপি’র প্রদেশ সভাপতিকে নিয়ে খোয়াই এবং সিপাহিজলা জেলায় সফর করেছেন। আর এই দুটি জেলাতেই সবচেয়ে বেশি আক্রমণ চালাচ্ছে বিজেপি। সেজন্যই আমরা মুখ্যসচিবকে অবিলম্বে রাজ্যস্তরে সর্বদলীয় শান্তি বৈঠক ডাকার অনুরোধ করেছি। তাতে যদি মুখ্যমন্ত্রী সভাপতিত্ব করেন তাহলে আরও ভালো হবে। সন্ত্রাস বন্ধ করতে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ করতে হবে। 
জীতেন্দ্র চৌধুরি বলেন, মুখ্য সচিবকে আমরা প্রশ্ন করেছি, পুলিশ কী ব্যবস্থা নিচ্ছে?  তিনি বলেন ডিজিপিকে বলা হয়েছে। ডিজি বলেছেন ২৩৮ জন গ্রেপ্তার হয়েছে। আমরা চ্যালেঞ্জ করে বলেছি একজনও লক-আপে নেই। এফআইআর দূরের কথা, জিডি এন্ট্রি অবধি হচ্ছে না।  কৈলাসহরে আমাদের পার্টি অফিস পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। থানার ওসি বলছেন এফআইআর নেওয়া যাবে না। আমরা সব ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক শক্তির কাছে আহ্বান করছি এই সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে। কারণ আজ আমরা আক্রমণের শিকার, আগামী দিনে কেউ রেহাই পাবে না। আমরা এর বিরুদ্ধে রাস্তায় নামবো। অচিরেই সমস্ত এলাকায় আক্রান্তদের পাশে দাঁড়াবো। যা চলছে তা কোনও সভ্য, গণতান্ত্রিক দেশে চলতে পারে না।
রাজ্যপালকে নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে এদিন তীব্র কটাক্ষ করেন জীতেন্দ্র চৌধুরি। তিনি বলেন, রাজ্যপাল সময় দিচ্ছেন না, সকাল দুপুর বিকেলে ঘুমোচ্ছেন। ২ মার্চ বিধানসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর থেকে রাজ্যে লাগামহীন গতিতে সন্ত্রাস চলছে। জঙ্গলে রাত কাটাচ্ছেন শত-শত বিরোধী দলের নেতা কর্মী সমর্থক। বামফ্রন্ট ও কংগ্রেসের তরফে এই বিষয়ে কথা বলার জন্য শনিবার রাজ্যপালের সময় চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু সকাল দুপুর, বিকেল রাজ্যপাল ঘুমোচ্ছেন বলে তাঁর সিএ জানিয়েছেন। 
জীতেন্দ্র চৌধুরি বলেন, রাজ্যপালের সচিবের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করেছি। সকাল দুপুর বিকেল যখনই বলছি তখনই বলা হচ্ছে রাজ্যপাল নাকি ঘুম থেকেই উঠছেন না। সচিব বলছেন, রাজ্যপাল বললেই তিনি আমাদের খবর দেবেন। আমরাও বলেছি খবর পেলেই ১০ মিনিটের মধ্যে পৌঁছে যাবো। কিন্তু সেটাও দিচ্ছেন না রাজ্যপাল। এবার বুঝুন এই হলো রাজ্যপাল আর এই রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা। তিনি আরও জানালেন, আইনের শাসন ফিরিয়ে আনতে বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেস একসঙ্গে আগামী দিনে যৌথ কর্মসূচি গ্রহণ করবে।
সাংবাদিক সম্মেলনে জীতেন্দ্র চৌধুরি বলেন, গতবারের চেয়ে ১১ শতাংশ ভোট কম পেয়েছে বিজেপি, তাদের আসনও কমেছে। নৈতিকভাবে পরাজিত হলেও ভোট ভাগাভাগির সুযোগে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের পরের মুহূর্ত থেকেই বিজেপি আবার সেই ভয়াবহ সন্ত্রাস শুরু করেছে, যে সন্ত্রাসের জন্য গত ৫ বছর ত্রিপুরার চরম ক্ষতি হয়েছে। আমরা মুখ্য সচিবের কাছে দাবি করেছি, এই সবকটি ঘটনার তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। যারা আক্রান্ত, সর্বস্বান্ত, তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। 
জীতেন্দ্র চৌধুরি বলেন, নির্বাচনের ঘোষণা ও আদর্শ আচরণ বিধি কার্যকর থাকার সময়ে প্রশাসন এবং পুলিশ কিছুটা নিরপেক্ষ ভূমিকা গ্রহণ করেছিল। ফলে আমরা ৫ বছর পর বহু পার্টি অফিস খুলতে পেরেছি, সব দল মিছিল, সভা, প্রচার করতে পেরেছে। হুমকি চোখ রাঙানো থাকলেও দুর্বৃত্তরা সেভাবে সক্রিয় হতে পারেনি। ফলে মানুষ ভোট দিতে পেরেছেন।  কিন্তু নির্বাচনের ফল প্রকাশ হতেই প্রশাসন আবার শীতঘুমে চলে গেছে। ফলে সাহস পেয়েছে সমাজবিরোধীরা। পুলিশকে ফোন করলে পুলিশ যায়, তাদের দেখলে এরা সরে যায়, পুলিশ চলে গেলে আবার হামলা করে। 
বামফ্রন্ট আহ্বায়ক নারায়ণ কর বলেন, হাজার হাজার মানুষ ঘরছাড়া, জঙ্গলে রাত কাটাচ্ছেন, অসুস্থ হলে হাসপাতালে অবধি যেতে পারছেন না। এটা কোনও সভ্য দেশে হতে পারে না। মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, কাউকে ছাড়া হবে না। তার প্রতি অনুরোধ, নিজের দলের কর্মীদের সংযত করুন। আমরা চ্যালেঞ্জ করে বলছি সমস্ত আক্রমণ শাসক দলের তরফে হচ্ছে। এমন একটা ঘটনাও নেই যেখানে আমরা আক্রমণ করেছি। এমনকি আক্রান্তদের কাছে যেতেও বাধা দেওয়া হয়েছে। আক্রান্ত, সন্ত্রস্ত মানুষ রাজ্য ছেড়ে চলে যাচ্ছেন।
 

Comments :0

Login to leave a comment