Recruitment scam

সিবিআই, ইডি জেরা করুক মানিককে

রাজ্য

প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে পরিকল্পনামাফিক দুর্নীতি হয়েছে। এর নেপথ্যে রয়েছেন তৎকালীন পর্ষদ সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন রয়েছে। সিবিআই, ইডি একযোগে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে। মঙ্গলবার প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত একটি নতুন মামলায় এই নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। এদিন বিচারপতি সিবিআই’র জিজ্ঞাসাবাদ এবং তদন্তে ঢিলেমি নিয়ে কড়া বার্তা দিয়েছেন। তিনি বলেন, আপনারা বারে বারে বলছেন, মানিক ভট্টাচার্য তদন্তে সহযোগিতা করছেন না। এবার সেই কথা আর শুনতে চাই না। জিজ্ঞাসাবাদের পরই রিপোর্ট দেখে আমি তা সিবিআই’র ডিরেক্টরকে জানাবো। প্রয়োজনে আমি প্রধানমন্ত্রীকেও জানাতে বাধ্য হবো। 
এদিন আদালত আরও মন্তব্য করেছে, ‘প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি হয়েছে ছক তৈরি করেই, এই ছকের পিছনে রয়েছেন মানিক ভট্টাচার্য।’ তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে সিবিআই’র সিট। আর্থিক তছরূপের তদন্ত করবে ইডি। প্রয়োজনে ইডি তাঁকে হেপাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে। জেলে গিয়েও জিজ্ঞাসাবাদ করা যেতে পারে। 
বিচারপতি মন্তব্য করেন যে ব্যক্তি টাকার বিনিময়ে সুযোগ করে দিতে পারে তাঁকে মঙ্গলবারই জিজ্ঞাসাবাদ করবে অফিসাররা। আদালতকে এদিনই রিপোর্ট দেবে তদন্তকারী সংস্থা। আদালত সিবিআই’র সিট প্রধান অশ্বিনী সেনভিকে দক্ষ অফিসারদের আদালতে পাঠিয়ে আইনজীবীদের কাছ থেকে গোটা বিষয়টি বুঝে নিতে বলে। সিবিআই’র তরফে আদালতকে জানানো হয়, সেনভি কলকাতায় নেই। তিনি দিল্লি গেছেন। বিচারপতি বলেন, আদালত এই মামলা সন্ধ্যায় ফের শুনবে তাঁকে ভার্চুয়ালি মামলায় থাকতে বলুন। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় নির্দেশ দিয়েছেন মানিক ভট্টাচার্যকে যে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে তার গোটাটাই ভিডিও রেকর্ডিং করার।
মঙ্গলবার ২০২০ সালে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে মুর্শিদাবাদ, বাঁকুড়া এবং বীরভূম জেলায় বড় ধরনের অস্বচ্ছতা ধরা পড়ার অভিযোগ জানিয়ে একটি নতুন মামলা দায়ের হয়েছে। এই মামলার শুনানির পরই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় সিবিআই’কে বলেছেন, মানিক ভট্টাচার্যকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে। এই নিয়োগ দুর্নীতির পিছনে তার হাত রয়েছে। প্রসঙ্গত, টেট ২০১৪ শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে সিবিআই তদন্ত চলছে। তার মধ্যেই  ২০২০ নিয়োগে দুর্নীতি সামনে এসেছিল। মঙ্গলবার সুকান্ত প্রামাণিক নামে এক ব্যক্তি নতুন করে বেশ কিছু অভিযোগ নিয়ে আদালতে মামলা করেছিলেন। গত বছর ২০জুন শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি, তৃণমূলের বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্যকে তাঁর পদ থেকে অপসারণ করেছিল হাইকোর্ট। গত ১১অক্টোবর ইডি তাকে গ্রেপ্তার করে। তৃণমূলের এই বিধায়কের বিরুদ্ধে নিয়োগে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ ওঠার পরই সে বলেছিল ‘‘আমার বিরুদ্ধে একটা দুর্নীতি নিয়োগের অভিযোগ প্রমাণিত হলে আমি পর্ষদ সভাপতির পদ ছেড়ে দেবো।’’ এরপর গত ১১অক্টোবর আর্থিক তছরূপের অভিযোগেই ইডি তাঁকে গ্রেপ্তার করে। ইডি তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জির বিরুদ্ধে যে চার্জশিট জমা দিয়েছে সেখানে এই মানিক ভট্টাচার্যের নাম রয়েছে। আদালতে ইডি যে রিপোর্ট জমা দিয়েছে সেখানে বলা হয়েছে ২০১২ সালের পর মানিক ভট্টাচার্যের পরিবার বিশ্বের বহু দেশে এই সময়ে ভ্রমণ করেছেন। ইংল্যান্ড, আমেরিকা, দক্ষিণ আফ্রিকা সহ বহু দেশে তাঁরা ভ্রমণ করেছেন। এই বিদেশ ভ্রমণে তঁদের খরচ হয়েছে ৫কোটি টাকার বেশি। মানিক ভট্টাচার্যের স্ত্রী শতরূপা ভট্টাচার্য এবং পুত্র শৌভিক ভট্টাচার্য এখন জেলে রয়েছেন। তৃণমূল সরকার রাজ্যে তৈরি হবার পরই মানিক ভট্টাচার্য প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতির পদ পেয়েছিলেন। তারপর থেকে টেট নিয়োগের কাজ শুরু করেছিলেন তিনি। ইডি আদালতকে জানিয়েছে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জির সঙ্গে ফোনে তার কথাবার্তার প্রমাণ মিলেছে। 
রাজ্যে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের জন্য ২০১৪ সালে টেট’র বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিল। এই বিজ্ঞপ্তি জারির পর ২০১৫ সালের ১১অক্টোবর পরীক্ষা নেওয়া হয়। প্রায় ২৩ লক্ষ পরীক্ষার্থী এই পরীক্ষায় বসেছিলেন। ২০১৬ সালে প্যানেল (মেধা তালিকা) তৈরি হয় এবং নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। ৪২হাজার প্রার্থীকে নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছিল। এই নিয়োগের মধ্যে বহু অনিয়ম নিয়ে মামলা হয়েছে। আদালত বারে বারে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদকে সতর্ক করে স্বচ্ছতার সঙ্গে নিয়োগপত্র দেবার নির্দেশ দিয়েছিল। আদালতের নির্দেশের কোনও মান্যতা দেয়নি শিক্ষা পর্ষদ। প্রাথমিককে শিক্ষক নিয়োগের প্রথম মেধাতালিকা থেকে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ হয়ে যাবার পর ফের ২০১৭ সালে দ্বিতীয় মেধাতালিকা প্রকাশ করা হয়। এই দ্বিতীয় প্যানেল বেআইনিভাবে প্রকাশ করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। বহু চাকরি প্রার্থী পর্ষদের দপ্তরে গিয়ে জানতে চেয়েছিলেন এই দ্বিতীয় মেধা তালিকা কী মাপকাঠিতে তৈরি হয়েছে। পর্ষদ কোনও উত্তর দেয়নি। এরমধ্যেই মায়ারানি পাল নামে এক প্রার্থী আদালতে মামলা দায়ের করে অভিযোগে বলেন, টেট পরীক্ষা ফলাফল জানতে গত ৮বছর ধরে তিনি পর্ষদ সভাপতির কাছে যাচ্ছেন। প্রথম টেটের ফলাফল জানতে না পারায় পরের দুটি টেট পরীক্ষায় বসার সুযোগ হয়নি। পর্ষদ সভাপতির কাছে বারে বারে যাওয়া সত্ত্বেও তিনি কোনও গুরুত্ব দেননি। এই মামলায় আদালত মানিক ভট্টাচার্যকে ১লক্ষ টাকা জরিমানার নির্দেশ দিয়েছিল।
এদিনই নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় মানিক ভট্টাচার্যের হলফনামা জমা দেবার দিন ধার্য করা ছিল। জেলবন্দি পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতির হয়ে তাঁর কন্যা স্বাতী ভট্টাচার্য এই হলফনামা নিয়ে আদালতে জমা দিতে গিয়েছিলেন। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় এই হলফনামা গ্রহণ করেননি। আদালত নির্দেশ দিয়েছে, জেল কর্তৃপক্ষ মানিক ভট্টাচার্যের হলফনামা জমা দেওয়ার ব্যবস্থা করবে। উল্লেখ্য, এর আগেও মানিক ভট্টাচার্যকে জেল থেকে নিয়ে এসে আদালতে হাজির করেছিল জেল কর্তৃপক্ষ।

Comments :0

Login to leave a comment