Modi Govt

কেন্দ্রীয় কর্মীদের সব ধরনের প্রতিবাদ, আন্দোলন নিষিদ্ধ

জাতীয়

 কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীরা কোনও প্রতিবাদ, মিছিল, ধর্মঘটে অংশ নিতে পারবেন না। এই মর্মে কেন্দ্রীয় সরকার ফতোয়া জারি করেছে। আপাত উপলক্ষ, পুরানো পেনশন প্রকল্প ফিরিয়ে দেবার দাবিতে ন্যাশনাল জয়েন্ট কাউন্সিলের ডাকা প্রতিবাদ কর্মসূচি। এই কর্মসূচি ছিল মঙ্গলবারই। রাজ্যে রাজ্যে, জেলা ভিত্তিতে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভের ডাক দেওয়া হয়েছিল। 
কিন্তু শুধু এই কর্মসূচি নয়, কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে সোমবার জারি করা নির্দেশিকায় সব ধরনের প্রতিবাদই কেন্দ্রীয় কর্মীদের জন্য নিষিদ্ধ করতে চাওয়া হয়েছে। কর্মীবর্গ ও প্রশিক্ষণ দপ্তরের তরফে জারি করা নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছে সমস্ত কেন্দ্রীয় সরকারী দপ্তরের সচিবদের কাছে। বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকারী কর্মীরা কোনো ধরনের ধর্মঘট, গণক্যাজুয়াল লিভ, গো স্লো, অবস্থান ধরনা করতে পারবেন না। এমন কাজও করতে পারবেন না যা ধর্মঘটে মদত দেয়। সরকারি কর্মচারীদের কাজের আচরণবিধি ৭ নম্বর ধারা লঙ্ঘিত হয় এমন কোনও কাজই নিষিদ্ধ। 
এই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, কর্মচারীদের ধর্মঘটে যাবার কোনও অধিকার বিধিবদ্ধ ধারায় নেই। সুপ্রিম কোর্টও বিভিন্ন রায়ে একমত হয়েছে ধর্মঘট করা সরকারি কর্মচারীদের পক্ষে গুরুতর আচরণবিধি লঙ্ঘন করা। এই ধরনের কোনও আচরণ আইন মোতাবেক মোকাবিলা করা দরকার। 
নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, যে কোনও ধরনের প্রতিবাদ করলেই পরিণতি ভোগ করতে হবে। বেতন কাটা ছাড়াও যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সচিবদের বলা হয়েছে, কর্মীদের এই নির্দেশের কথা জানিয়ে দিতে হবে। প্রতিবাদসহ যে কোনও ধরনের ধর্মঘটকে থেকে তাঁদের বিরত রাখতে হবে। যদি ধরনা, প্রতিবাদ, ধর্মঘট হয় তাহলে কতজন সেখানে অংশ নিয়েছেন তা সেদিনই সন্ধ্যায় কর্মীবর্গ মন্ত্রককে জানাতে হবে। 
পুরানো পেনশন প্রকল্প ফেরানোর দাবিতে রাজ্যে রাজ্যে সরকারি কর্মীরা আন্দোলনে রয়েছেন। ইতিমধ্যেই একাধিক অ-বিজেপি শাসিত রাজ্যে এই প্রকল্প ফিরিয়ে আনার ঘোষণা হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীরাও এখন এই প্রকল্প ফেরানোর দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন। ২০০৪ সালে চালু হওয়া নতুন পেনশন প্রকল্পের জটিলতা ও ব্যর্থতা দেখে সরকারও কিছু অংশের কর্মীদের বিকল্প বেছে নেবার সুযোগ দিয়েছে। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের নতুন নির্দেশিকা শুধু এই দাবিতে আন্দোলনের কথাই বলেনি, সাধারণভাবে সমস্ত প্রশ্নে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের আন্দোলনের অধিকার কেড়ে নেবার কথা বলেছে। শুধু ধর্মঘটই নয়, ‘প্রতিবাদ’ করাও যে অপরাধ বলে বিবেচিত হবে তা বারে বারে এই নির্দেশিকায় উল্লেখ করা হয়েছে।  
পশ্চিমবঙ্গে ধর্মঘটে অংশ নিলে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবার জন্য তৎপর থাকে রাজ্যের তৃণমূল সরকার। ১০ মার্চ রাজ্য কোষাগার থেকে বেতনপ্রাপ্তদের সম্মিলিত ধর্মঘট আটকাতেও একাধিক ফতোয়া দেওয়া হয়েছিল। তার মধ্যে ‘ডায়াস নন’, চাকরি জীবনে একদিনের ছেদ, বেতন কাটার কথা ছিল। এতদ্‌সত্ত্বেও সেই ধর্মঘট বেনজির সাফল্য অর্জন করেছে। এখন রাজ্য সরকার কর্মী ও শিক্ষকদের হেনস্তা করতে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করেছে। ইতিমধ্যেই শিক্ষকদের বেতন ট্রেজারিতে যাবার সময়সীমা পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ধর্মঘটী শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার লক্ষ্যেই এই পদক্ষেপ। 
কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে দেওয়া নির্দেশিকায় ‘নিষিদ্ধ’ তালিকার বহর আরও প্রশস্ত। সেখানে ধর্মঘট তো বটেই এমনকি ধরনাও নিষিদ্ধ। কার্যত ট্রেড ইউনিয়নের ন্যূনতম অধিকারের ওপরেও হস্তক্ষেপ করা হয়েছে।
 

Comments :0

Login to leave a comment