কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে জম্মু ও কাশীরে শান্তিপূর্ণ ও স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসার যত বেশি দাবি করা হচ্ছে এবং কাশ্মীরে মোদী সরকারের সাফল্যের ঢাক যত বেশি পেটানো হচ্ছে তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে উগ্রপহী তৎপরতা ও সন্ত্রাবাদী হামলার ঘটনা। কাশ্মীরের মানুষের বিশেষ সাংবিধানিক আধিকার কেড়ে নিয়ে, রাজ্যটিকে ভেঙে দু’টুকরে করে দু’টি কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলে পরিণত করে এমন বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া হয় যে ৫৬ ইঞ্চি ছাতির কড়া চাবুকের ঘায়ে সন্ত্রাসবাদীদের কোমর ভেঙে গেছে। আর পাঁচটা রাজ্যের মতোই কাশ্মীর এখন শান্ত ও স্বাভাবিক হয়ে গেছে। অথচ মানুষ দেখতে পাচ্ছেন কাশ্মীরে জঙ্গি কার্যকলাপ শুধু বাড়ছে না তার সাথে সাথে জঙ্গি হামলায় সেনা মৃত্যুও সাধারণ মানুষের মৃত্যু এবং জখম হবার ঘটনাও দ্রুত বাড়ছে। বস্তুত কাশ্মীরে মোদী সরকারের সাফল্য নয়, ব্যর্থতার দগদগে ক্ষত ফুটে উঠেছে। জনজীবন বিপর্যন্ত ও দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। লক্ষ লক্ষ নিরাপত্তা বাহিনীর সশস্ত্র দাপুটে সাধারণ মানুষের অসহায় অবস্থা। জঙ্গি বিরোধী অভিযানের নামে সাধারণ মানুষের ওপর চলছে অকথ্য অত্যাচার ও নির্যাতন। মানুষ ন্যূনতম নাগরিক অধিকার থেকেও বঞ্চিত। সেনা আরোপিত হাজারো নিষেজ্ঞার জালে বন্দি জন্মু ও কাশ্মীরের মানুষ।
পাঁচ বছর আগে স্বৈরাচারী ক্ষমতা প্রয়োগ করে ৩৭০ ও ৩৫-ক ধারা বাতিল করে গোটা কাশ্মীরকেই কার্যত বন্দিশালা বানিয়ে ফেলা হয়েছিল। তারপর থেকে চলছে জঙ্গি দমনের নামে সন্ত্রাসের রাজত্ব। মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রার ছন্দ স্তব্ধ করে দেওয়া হয়। কার্যত গৃহবন্দি হয়ে পড়েন মানুষ। এমন এক কাশ্মীরকেই শান্তিপূর্ণ ও স্বাভাবিক বলে প্রচার চালানো হচ্ছে মোদীর সাফল্য ও ভাবমূর্তির বিজ্ঞাপনের জন্য। কিন্তু এই সব মিথ্যা প্রচার আর সাজানো বিজ্ঞাপনের পেছনে নির্মম সত্য হলো কাশ্মীর স্বাভাবিক নয়। কাশ্মীরের মানুষ ভালো নেই। তারা একটা গণতান্ত্রিক দেশের নাগরিক হয়েও নিজেদের রাজ্যে নিজেদের নির্বাচিত সরকার নেই। এমনকি নেই স্থানীয় নির্বাচিত স্বায়ত্ত শাসনও। দিল্লি থেকে চাপিয়ে দেওয়া আমলারাই ঠিক করে কাশ্মীরের মানুষের জীবনযাত্রা। এমন কঠোর ও একতরফা সেনা নির্ভর সেনাশাসনের মধ্যে বাড়ছে জঙ্গিদের কাজ। একদা জঙ্গিমুক্ত জম্মু অঞ্চল এখন জঙ্গিদের ঘাঁটি হয়ে উঠেছে। সাম্প্রতিক কালে এই অঞ্চলে দু’-তিনদিন পরপর ঘটছে জঙ্গি হামলার ঘটনা। গত ৩২ মাসে ৫০ জন সেনাকে জীবন দিতে হয়েছে জঙ্গিদের হাতে। এই সময়কালে প্রায় চারশোটি জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ ঘটনায় জম্মু অঞ্চলের ডোডা জেলায় ৪ সেনার মৃত্যু হয়েছে। সতদিন আগে পাশের জেলা কাঠুয়ায় মৃত্যু হয়েছে ৫ সেনার।
ক্রমাগত জঙ্গি তৎপরতা বৃদ্ধি এবং ক্রমবর্ধমান সংখ্যায় সেনা ও সাধারণ মানুষের মৃত্যু ও জখম হওয়া থেকে কাশ্মীরে মোদী সরকারের ব্যর্থতা ও অপদার্থতাই স্পষ্ট। মোদী জমানায় ৩৭০ ধারা বাতিলের আগের পাঁচ বছর ও পরের পাঁচ বছরে কাশ্মীরের অবস্থার গুরুতর অবনতি হয়েছে। কাশ্মীরকে বলির পাঁঠা বানিয়ে মোদীর দল সারা দেশে হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িক রাজনীতির ফায়দা তুলেছে। সাফল্যের মিথ্যা বয়ান লিখেছে। আর নির্মম সত্যকে এবং মোদী সরকারের ব্যর্থতাকে আড়াল করতে সেনা ও পুলিশ কর্তাদের দিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে কুৎসামূলক রাজনৈতিক বক্তব্য বলিয়েছে। কাশ্মীরে ফের প্রমাণ হয়ে গেছে সশস্ত্র সেনা শক্তি ও নির্মম প্রশাসনিক দাপটে সমস্যা সমাধান করা যায় না। মানুষকে সঙ্গে নিয়ে তাদের আস্থা অর্জন করে রাজনৈতিক-প্রশাসনিক পথেই সমাধান খুঁজতে হবে।
Comments :0