Health issues

৩ বছরেই ডাক্তার, ১৫ দিনে নার্স মুখ্যমন্ত্রীর নয়া ফরমানে প্রশ্ন

রাজ্য

রাজ্যে ৩ বছরে চিকিৎসক তৈরি করতে চাইছেন মমতা ব্যানার্জি! স্যালাইন, ইনজেকশান আর মেডিসিন দেওয়ার জন্য ১৫ দিনের প্রশিক্ষণে নার্স! কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়াতে স্বাস্থ্য দপ্তরকে লক্ষ্য বেঁধে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াশোনায় যেমন ডিপ্লোমা ডিগ্রি আছে ঠিক তেমনই চিকিৎসাবিজ্ঞানের ৩ বছরের ডিপ্লোমা কোর্স চালু করার জন্য স্বাস্থ্য দপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। নবান্নে বৃহস্পতিবার রাজ্যের স্বাস্থ্য সচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগমকে মমতা ব্যানার্জি বলেছেন, ‘‘ডাক্তারদের আমরা একটা ডিপ্লোমা কোর্স চালু করতে পারি কিনা দেখে নাও। ইঞ্জিনিয়ারদের মতো তাহলে অনেক ডাক্তারি ডিপ্লোমার সুযোগ পাবে।’’ 
মুখ্যমন্ত্রী নিজেই স্বাস্থ্য দপ্তরের দায়িত্বে। তাঁর কাছ থেকে এমন নির্দেশ পাওয়ার পর স্বাস্থ্য সচিবকে বলতে শোনা যায়, ‘‘আমরা বিষয়টি দেখে নিচ্ছি।’’ মুখ্যমন্ত্রীর অনুপ্রেরণায় যদি শেষ পর্যন্ত এরাজ্যে চিকিৎসক তৈরি করার জন্য ডিপ্লোমা কোর্স চালু হয়ে যায় তাহলে শুরুতেই বিপদে পড়তে চলেছেন রাজ্যের গরিব মানুষ। কারণ, এই ডিপ্লোমা প্রাপ্ত চিকিৎসকদের ঠাঁই হবে গ্রামের প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে। ‘‘ হাসপাতাল বাড়ছে। লোকসংখ্যা বাড়ছে। ডিপ্লোমা দিয়ে প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলিতে তাহলে তাদের ব্যবহার করা যাবে।’’ জানিয়েছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। ৩ বছর ডিপ্লোমা কোর্স করিয়ে কী ধরনের চিকিৎসক শেষ পর্যন্ত তৈরি করা সম্ভব তার থেকেও বিপদের আশঙ্কা এই ডিপ্লোমা চিকিৎসকদের আর্থিক কারণেই ভরসা হয়ে উঠতে বাধ্য হবেন গ্রামের গরিব মানুষই। রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তরের এক আধিকারিকের বক্তব্য,‘‘ আর্থিকভাবে সম্পন্ন মানুষ ৫ বছর পড়াশোনা শেষ করে এমবিবিএস পাস করা চিকিৎসক থেকে বিশেষজ্ঞদের কাছেই যাবেন। কিন্তু গরিব মানুষকে কার্যত ঠেলে দেওয়া হবে ডিপ্লোমা চিকিৎসকদের হাতেই। বিপদের আশঙ্কা এখানেই সবচেয়ে বেশি।’’ 
বর্তমানে প্রবেশিকা পরীক্ষা দিয়ে এমবিবিএস ডিগ্রি লাভের চিকিৎসকদের সময় লাগে ৫ বছর। মুখ্যমন্ত্রীর কথায় এঁরা অরিজিনাল ডাক্তার। আর এই অরিজিনাল ডাক্তার তৈরি করার জন্য এত সময় দিতে নারাজ মমতা ব্যানার্জি। রাজ্যের মানুষের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করাই তাঁর প্রাথমিক লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য বাস্তবায়িত করতে গিয়েই এদিন মমতা ব্যানার্জির পরিকল্পনায় উঠে এসেছে ডিপ্লোমা ডাক্তার। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন,‘‘ অরিজিনাল ডাক্তাররা ৫ বছর পায়। তাতে অনেকটা সময় চলে যায়। তাদের স্টাডি করতে হয়। পরীক্ষা দিতে হয়। আমরা কি তিন বছরের জন্য ডিপ্লোমা কোর্স চালু করতে পারি না?’’ 
কর্মসংস্থানের জন্য মুখ্যমন্ত্রী এখন ৫ বছরের ‘অরিজিনাল ডাক্তার’ থেকে ৩ বছরের ডিপ্লোমা ডাক্তার চাইছেন। ১৫ দিনের মধ্যে নার্সিং ট্রেনিং দিয়ে নার্স তৈরি করতে চাইছেন। সেই নার্সদের নামকরণ করেছেন ‘সেমি ডাক্তার’! যাঁদের এখন ১০ বছর চাকরি আছে তাঁদের ট্রেনিং দিয়ে চিকিৎসকের সমতুল কাজ করিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দিতে শোনা গেছে মমতা ব্যানার্জিকে। এমনকি মানুষের জীবন-মরণের সঙ্গে যুক্ত পেশার সঙ্গে জড়িয়ে দিয়েছেন পুলিশকেও। পুলিশের ছয় মাসের ট্রেনিং দিতে গিয়ে শূন্যপদ পূরণ করা যাচ্ছে না বলে দাবি করেছেন মমতা ব্যানার্জি। তাই রাজ্য পুলিশের সব নিয়োগ তিন মাসের মধ্যে সম্পূর্ণ করে পুলিশকে থানায় পাঠিয়ে দিতে হবে। তারপর কী হবে? ২১ দিন সেই পুলিশ ‘ফিল্ড ডিউটি’ করবে। আর বাকি সাতদিন প্রশিক্ষণ নেবে। 
রাজ্যে কর্মসংস্থান তৈরি করতে ডাক্তার নার্স ও পুলিশকে এক সুতোয় বেঁধে এদিন মমতা ব্যানার্জি বলেছেন,‘‘ আমি টাইমটাকে নষ্ট করতে চাই না। এতে এমপ্লয়মেন্টের সুযোগ বাড়বে।’’ মুখ্যমন্ত্রীর এই পরিকল্পনা প্রসঙ্গে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সরকারি চিকিৎসকদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টরস-এর সাধারণ সম্পাদক ডাঃ মানস গুমটা। তাঁর বক্তব্য,‘‘ এটা সাধারণ মানুষকে প্রতারণা করা। মানুষের স্বাস্থ্য নিয়ে, জীবন নিয়ে খেলা করা। রাজ্যে ভেঙে পড়া স্বাস্থ্য ব্যবস্থা থেকে মানুষের নজর ঘোরাতে ফন্দি ফিকির বলেই মনে হচ্ছে। যারা এই কোর্সের প্রবক্তা তাঁরা তাঁদের প্রাথমিক স্বাস্থ্যের জন্যে এই সমস্ত চিকিৎসকদের কাছে যাবেন তো? নাকি গ্রামের মানুষ, গরিব মানুষের সাধারণ মানুষের জীবনের কোনও মূল্য নেই? তিন বছরে মডার্ন মেডিসিন আর পনেরো দিনে নার্সিং শেখা যায় নাকি?’’ সরকারি চিকিৎসক সংগঠনের বক্তব্য, স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর অপ্রতুলতা, নিয়োগ, প্রমোশন, বদলিতে নানা অস্বচ্ছতা, স্বজনপোষণের জন্যে সরকারি চাকরিতে যোগদান কিছু অনীহা থাকলেও, সরকারি চাকরিতে নিয়োগের জন্যে মাঝে মধ্যেই তাঁরা রাস্তাতে নামছেন। ডেন্টাল সার্ভিসে বিগত ৭ বছর নিয়োগ বন্ধ ছিল। তাহলে চিকিৎসকের অভাব কোথায়?
নবান্নে এদিন বৈঠক ছিল স্কিল ডেভেলপমেন্ট নিয়ে। এরাজ্যে যার নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে উৎকর্ষ বাংলা। রাজ্যের পলিটেকনিক, আইটিআই ও ভোকেশানাল কোর্সে পাঠরত ছাত্র-ছাত্রীদের কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা নিয়ে আয়োজিত বৈঠকে পলিটেকনিক, আইটিআই পড়ুয়াদের কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা নিয়ে এদিন আরও একটি কমিটি গড়ে দিয়েছেন মমতা ব্যানার্জি। তবে ভবিষ্যতে রাজ্যের সব ধরনের মেলা, খেলা উৎসবের আয়োজনে সরকার এক পা খাড়া করে এগিয়ে গেলেও ‘জব ফেয়ার’-এর কোনও আয়োজন করতে নারাজ। কারণ ১০ হাজার লোককে কাজ দেওয়া হলে ৫০ হাজার চলে আসে। জানিয়েছেন মমতা ব্যানার্জি।

Comments :0

Login to leave a comment