MAMATA BJP

বিজেপি’তে যোগ না দেওয়ার প্রসঙ্গ কেন মমতার ভাষণে, উঠছে প্রশ্ন

রাজ্য

অনিন্দ্য হাজরা

ধর্মতলায় ২১ জুলাইয়ের কর্মসূচি করলেন মমতা ব্যানার্জি। নাম ধরে ধরে অরূপ বিশ্বাস, ফিরহাদ হাকিম থেকে শুরু করে সুজিত বসু অবধি এলেও অভিষেক ব্যানার্জির নাম নিজের মুখে আনেননি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। এবং নিজের বক্তব্যের মাঝে এমন দু’একটি কথা ছুঁড়ে দিয়েছেন, নিজের স্বকীয় ভঙ্গিতে, যা ভাবনার খোরাক যুগিয়েছে। 
এদিন বক্তব্যের মাঝেই মমতা ব্যানার্জি বলেন, ‘‘এজেন্সি দিয়ে তৃণমূলের কিছু করা যাবে না এটা প্রমাণ হয়ে গিয়েছে। আমাদের বুকে রক্ত থাকতে বিজেপির সঙ্গে হাত মেলাব না।’’
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর মুখে হঠাৎ এই কথা কেন? 
এজেন্সি প্রভাব তৃণমূলের ভোটবাক্সে পড়েনি এটা মোটের উপর স্পষ্ট। কিন্তু ইন্ডিয়া বিন্যাসের একটি দলের নেত্রীর মুখে বিজেপির সঙ্গে যাওয়া না যাওয়া নিয়ে এমন বক্তব্য কেন? 
এখানেই শেষ নয়। আবার কিছুটা বক্তব্য রাখার পরে মমতা ব্যানার্জি বলেছেন, ‘‘ বিজেপি নিজের জোরে মেজরিটি পায়নি। শেয়ার কেলেঙ্কারি করেছে। টাকা দিয়ে গোটা দল কিনেছে। কিন্তু মিনিস্ট্রি দেয়নি। আমরা ওই ফাঁদে পা দেব না!’’
বক্তব্য থেকে স্পষ্ট, তিনি একনাথ শিন্ডে ও অজিত পাওয়ারের নিজেদের দল নিয়ে বিজেপির জোটে সামিল হওয়াকে ইঙ্গিত করেছেন। কিন্তু তৃণমূলের সেই ফাঁদে পা দেওয়া কিংবা না দেওয়ার প্রসঙ্গ আসছে কেন? তৃণমূলের কোনও অংশ কি সেই ধরণের কোনও চেষ্টা করেছিল? 
রাজনৈতিক ভাবে ওয়াকিবহাল অংশের বক্তব্য, লোকসভা নির্বাচনের আগে সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম একাধিকবার সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছেন, ‘‘বাংলার একনাথ শিন্ডে হল অভিষেক ব্যানার্জি। মমতা ব্যানার্জির দলে ট্রোজান হর্স ছেড়ে রেখেছে বিজেপি।’’ এদিনের হুঁশিয়ারি বা সতর্কতা কি সেইদিকেই ইঙ্গিত করল? যখন নিজের মুখে একবারের জন্যও অভিষেক ব্যানার্জির নাম আনেন নি মমতা ব্যানার্জি। 
এর পাশাপাশি যদিও বিজেপিকে আক্রমণ করেছেন মমতা ব্যানার্জি। আরএসএস নিয়ে যদিও একটি শব্দও খরচ করেননি। উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদবকে পাশে বসিয়ে বলেছেন, ‘‘উত্তর প্রদেশে সমাজবাদী পার্টি যা খেল দেখিয়েছে, জবাব নেই। বিজেপির লজ্জা থাকলে এতদিনে পদত্যাগ করা উচিত ছিল। এজেন্সিকে ব্যবহার করে দিল্লিতে বিজেপি সরকার তৈরি করেছে। কিন্তু এই সরকার বেশিদিন টিকবে না। আনস্টেবেল সরকার।’’
মমতা ব্যানার্জির কথায়, জয়ী তৃণমূল প্রার্থীদের ৩৮ শতাংশ মহিলা। কেউ কেউ ৩৩ শতাংশ সংরক্ষণই করে উঠতে পারেনা।’’
প্রসঙ্গত, সংসদে মহিলাদের জন্য ৩৩ শতাংশ আসন সংরক্ষণ করার প্রতিশ্রুতি পালনে ব্যর্থ হয়েছে বিজেপি। অপরদিকে পঞ্চায়েত ব্যবস্থার  ৫০ শতাংশ আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত করেছিল বামফ্রন্ট সরকার। 
এদিন কলকাতায় তৃণমূলের মঞ্চে দাঁড়িয়ে অখিলেশ যাদব বলেছেন, ‘‘দেশে আজ সাম্প্রতিক শক্তিগুলি ষড়যন্ত্র করছে। দিল্লি থেকে চক্রান্ত হচ্ছে। কিন্তু এরাজ্যের মানুষ সেটা রুখে দেবে। বিভাজনের রাজনীতি মানুষকে ভাগ করে চিরকাল ক্ষমতা ধরে রাখতে চায়। সাময়িক ভাবে সফল হলেও দীর্ঘমেয়াদে সেটা ব্যর্থ হবে । ভুল লক্ষ কখনও সাফল্য এনে দিতে পারেনা।’’
অখিলেশ বলেছেন, ‘‘মুনাফা করার মানসিকতা নিয়ে সরকার চলছে। স্বাভাবিক ভাবেই এরা মানুষের ভালো চায় না।দিল্লির সরকার বেশিদিন টিকবে না। বিজেপি অন্যের শহীদ, নেতাজী, গুরুদেব, মহাপুরুষ ধার নেয়, চুরি করে। এরা বিভাজনের রাজনীতি করে। নেগেটিভ রাজনীতি করে। কোন মহাপুরুষ কেন এদের দল করবে?’’ 
তিনি আরও বলেছেন, ‘‘মানুষের জোট দেখে বিজেপি শঙ্কিত। পজিটিভ রাজনীতি করেই আমরা এদের হারাব। সংবিধান, ভ্রাতৃত্ব বাচাতে আমাদের একজোট হতে হবে। আপনারা যেভাবে আমাদের পাশে থেকেছেন, আমরাও শেষ অবধি আপনাদের পাশে থাকব।’’

Comments :0

Login to leave a comment