বিশ্বজিৎ রায়: সোদপুর
কটা কারখানার উদ্বোধন করেছেন মোদী এবং মমতা ব্যানার্জি? এই প্রশ্ন তুলে সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেছেন, ওঁরা মানুষের কর্মসংস্থান করেননি, মানুষের কাজ কেড়ে নিয়েছেন। কারখানা নয় মোদী মন্দির নিয়ে ব্যস্ত থেকেছেন, আর মমতা ব্যানার্জি সেই সুযোগে চাকরি নিয়ে দুর্নীতির বন্দোবস্ত কায়েম করেছেন।
সোমবার দমদম লোকসভা কেন্দ্রের কংগ্রেস সমর্থিত সিপিআই(এম) প্রার্থী সুজন চক্রবর্তীর সমর্থনে সোদপুরে একটি বড় রোড শো হয়েছে এবং তারপরে দুটি জনসভায় মহম্মদ সেলিম ভাষণ দিয়েছেন। সোদপুর ঘোলা কদমতলা থেকে শুরু হয়ে ট্রাফিক মোড়ে শেষ হয় রোড শো। বহু মানুষের সঙ্গে বামফ্রন্টের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন এই কর্মসূচীতে। এরপর সেলিম উত্তর দমদমের ফতেল্লাপুর ও দমদম রোডে সেন্ট মেরিজ স্কুলের সামনে দুটি জনসভায় ভাষণ দেন। সভায় সেলিম বলেন, বিজেপি’র তল্পিবাহক মিডিয়াকে দিয়ে প্রচার করানো হয়েছিল মোদীর কোনো বিকল্প নেই। মোদী সবকা সাথ, সবকা বিকাশের কথা বলেছিলেন, কিন্তু দশ বছরে করেছেন কেবল কর্পোরেটদের বিকাশ। তাদের সম্পদ আকাশছোঁয়া হয়েছে, গরিব মানুষ আরো গরিব হয়েছে। বছরে দুই কোটি বেকারের কর্মসংস্থানের কথা মোদী বলেছিলেন, কিন্তু মোদীর শাসনকালে সবচেয়ে বেশি মানুষ কাজ হারিয়েছে। নতুন শিল্প হয়নি। গত দশ বছরে দেশের প্রধানমন্ত্রী একটিও কারখানার ফিতে কাটেননি। এই রাজ্যে তৃণমূলও একই পথে চলছে। মুখ্যমন্ত্রী এই রাজ্যে গত তেরো বছর ধরে কোনো শিল্প আনতে পারেননি, কর্মসংস্থানের সুযোগ না থাকায় এরাজ্যের যুবকরা ভিনরাজ্যে চলে যাচ্ছেন, ঝুঁকিপূর্ণ কাজে গিয়ে বিপদে পড়ছেন। আর সরকারি চাকরি নিয়ে একটার পর একটা দুর্নীতি হয়েছে। চুরি জোচ্চুরিতে তৃণমূল ও বিজেপি র মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। চাকরি বিক্রি হয়েছে। সেই টাকার ভাগ কালীঘাটে পৌঁছেছে। দুর্নীতিতে জড়িত তৃণমূলের অনেক নেতা মন্ত্রীরা জেলে গেছেন, কিন্তু পিসি ভাইপো নিজেদের জেলযাত্রা আটকাতে মোদীর সাথে বোঝাপড়া করে চলছেন। মমতা ব্যানার্জি এই কারণে আরএসএস’এর বিরুদ্ধে কোনো কথা বলেন না। আরএসএস’এর চোখে তিনি মা দুর্গা।
তিনি বলেছেন, কিন্তু রাজ্যের মানুষ চোর ধরতে জেগে উঠেছে, তৃণমূল ও বিজেপি মানুষের যত বেশি আস্থা হারাচ্ছে তত বেশি মরিয়া হয়ে উঠেছে। শেষ পর্বে ভোট লুট করে নিজেদের জমি ধরে রাখতে চাইছে। এই ভোট লুটেরাদের রুখতে মানুষকে জোটবদ্ধ হওয়ার জন্য আহ্বান জানান সেলিম।
ফতেল্লাপুরের সভায় এছাড়াও ভাষণ দেন তন্ময় ভট্টাচার্য, সিপিআই(এম) নেত্রী অতসী চক্রবর্তী, কংগ্রেস নেতা শক্তি মৈত্র প্রমুখ। সভায় সভাপতিত্ব করেন পার্টি নেতা পিন্টু চক্রবর্তী। দমদমের সভায় বক্তব্য রাখেন দমদম লোকসভা কেন্দ্রের সিপিআই(এম) প্রার্থী সুজন চক্রবর্তী, পার্টি নেতা পলাশ দাশ, শৈলেন মাকড়, ময়ুখ বিশ্বাস, কংগ্রেস নেতা সুদীপ দেব প্রমুখ। সভায় সভাপতিত্ব করেন পার্টি নেতা দেবশঙ্কর রায় চৌধুরী।
পরাজয় নিশ্চিত বুঝে শেষ দফার ভোটগ্রহণে বেপরোয়া হয়ে ওঠা তৃণমূল বিজেপি’র সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়ে সেলিম বলেছেন, দুটো দল গণতন্ত্রকে ধংস করে দিচ্ছে। এরা ভোট দেওয়ার গণতান্ত্রিক অধিকারও কেড়ে নিতে চায়। এই দুই লুটেরাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। শেষ দফার নির্বাচনের আগে এই দুই দল মিলে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে। মমতা ব্যানার্জি রামকৃষ্ণ মিশনকে রাজনীতিতে টেনে এনে প্রচার করছেন। মোদী নিজেকে অবতার রূপে প্রচার করছে। এরা ধর্মের নামে মানুষকে বিভাজিত করতে চাইছে। ধর্মকে রাজনীতির সাথে মিশিয়ে দিয়েছে। রুটি রুজির কথা, মূল্যবৃদ্ধির কথা চাপা দিতে চাইছে, মানুষ এই দুই দলের দুঃশাসন থেকে মুক্তি চাইছে।
দমদমের সভায় সিপিআই(এম) নেতা পলাশ দাশ বলেন, মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেশের সংবিধান মানতে চাইছে না। এরা দেশে একনায়কতন্ত্র কায়েম করতে চায়। স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থা কায়েম করতে চায়। এই রাজ্যে মমতা ব্যানার্জিও একই পথে চলছে। এই দুই দলকেই পরাস্ত করে দমদম লোকসভা কেন্দ্র থেকে সুজন চক্রবর্তীকে বিপুল ভোটে জয়ী করে শ্রমিকদের কথা, সাধারণ মানুষের কথা সংসদে পৌছে দিতে হবে।
Salim Sujan Dumdum
দমদমের দুই সভায় সেলিম, কাজ দিতে ব্যর্থ হয়েই বিজেপি-তৃণমূল এখন ধর্মীয় মেরুকরণের চেষ্টা করছে
×
Comments :0