GUJARAT UP MUHARRAM

মহরমের ছুটি বাতিল উত্তর প্রদেশ-গুজরাটে, প্রতিবাদ সিপিআই(এম)’র

জাতীয়

GUJARAT UP MUHARRAM

নয়া শিক্ষানীতির বর্ষপূর্তিতে ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। অনলাইনে সেই ভাষণ শুনতে হবে স্কুলে বসে। তার জন্য উত্তর প্রদেশ এবং গুজরাটে বাতিল হলো মহরমের ছুটি। 

নয়া শিক্ষানীতি চালুর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সব অংশের মতামত নেয়নি নরেন্দ্র মোদী সরকার। শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ এবং সাম্প্রদায়িকীকরণের একের পর এক নজির দিয়ে আন্দোলনে শামিল শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন অংশ। তার মধ্যেই শনিবার, মহরমের দিন, ছুটি বাতিল করল গুজরাট এবং উত্তর প্রদেশের বিজেপি সরকার। এদিন ‘অখিল ভারতীয় শিক্ষা সমাগম’ অনুষ্ঠানের নামে ভাষণ দেন মোদী। 

সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম। তিনি বলেছেন, ‘‘শিক্ষা লাটে তুলে দিয়ে মোদীর ভাষণ শোনানো হচ্ছে। তাই শিক্ষা দপ্তরে, স্কুলে ছুটি নেই। শিক্ষা এবং রাজনীতিকে কোন জায়গায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তার উদাহরণ এমন সিদ্ধান্ত।’’

বিজেপি এবং আরএসএস’র দৃষ্টিভঙ্গির সমালোচনায় মুখর হন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক। সেলিম বলেন, ‘‘সংখ্যাধিক্যবাদ এবং ইসলাম ভীতি ছড়ানো হচ্ছে কিভাবে, তার উদাহরণ এই ঘটনা। দেশের সাংস্কৃতিক বৈচিত্রের ওপর সাংস্কৃতিক রাষ্ট্রবাদের নামে আক্রমণ হচ্ছে। এই আক্রমণের প্রতিবাদ করছি।’’ 

ধর্মীয় মেরুকরণ এবং সংখ্যাধিক্যবাদের দৃষ্টিভঙ্গি মোহন দাস করমচাঁদ গান্ধীর অনুগামীদের ওপরও আক্রমণ নামিয়ে চলেছে। বারণসীতে গত ২২ জুলাই গান্ধীবাদী প্রতিষ্ঠান সর্বসেবা সঙ্ঘের প্রধান দপ্তর বন্ধ করে দেয় উত্তর প্রদেশ পুলিশ। প্রায় পাঁচশো পুলিশের সশস্ত্র বাহিনী ঘিরে রাখে আশ্রমসম এই প্রতিষ্ঠানকে। 

সেলিম ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ করেন। তিনি বলেন, ‘‘বেনারসে বুলডোজার রাজনীতিতে গান্ধী স্মৃতি প্রতিষ্ঠানটিকে নির্মূল করা হলো। মোদী সরকার গান্ধীর হত্যাকারীকে পুরস্কৃত করে। আর মিলনধর্মী সংস্কৃতির কথা বলে যে প্রতিষ্ঠানগুলি তার ওপর আক্রমণ নামায়। গান্ধীকে হত্যা করেও তুষ্ট নয় আরএসএস। এখন সুস্থ মূল্যবোধকে নির্মূল করার চেষ্টা করছে।’’

সর্বসেবা সঙ্ঘ কস্তুরবা বালবাদী বিদ্যালয়ের নামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও চালায়। বেণারসের এই কেন্দ্রেই পড়ে ৩ থেকে ১২ বছরের প্রায় একশো ছাত্র। তাদের পড়াশোনাও বন্ধ হওয়ার মুখে। যোগী আদিত্যনাথের পুলিশ ছুঁড়ে ফেলে দেয় সর্বোদয় পাবলিকেশনের ছাপানো প্রায় হাজার বই।  

বিরোধী রাজনৈতিক বিন্যাস ‘ইন্ডিয়া’ কেন, এই পরিপ্রেক্ষিতেই ব্যাখ্যা করেন সেলিম। তিনি বলেন, ‘‘ভারতীয় সংবিধানের ভিত্তি স্বনির্ভর, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক গণরাজ। এই বুনিয়াদ রক্ষা করা জরুরি। সংবিধানকে আক্রমণের মুখে ফেলেছে বিজেপি-আরএসএস। আমরা সব মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করছি।’’ 

লোকসভায় অনাস্থা প্রস্তাব গ্রহণে সরকারকে বাধ্য করার ওপর জোর দিয়েছেন সেলিম। তিনি বলেছেন, ‘‘সরকারকে বাধ্য করা হয়েছে অনাস্থা প্রস্তাব গ্রহণ করতে। মণিপুর থেকে জম্মু কাশ্মীর, নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন নাগরিকরা। সংখ্যালঘু, আদিবাসী, তপশিলি জাতি, মহিলারা আক্রান্ত। অনাস্থা বিতর্কে আসবে এই সব প্রসঙ্গ। উঠবে বেকারদের কাজ, রেশন ব্যবস্থা, অপুষ্টি, রক্তাল্পতা, চিকিৎসা, বয়স্কদের সামাজিক নিরাপত্তা, শ্রমজীবীর মজুরি, কৃষকের ফসলের দামের অধিকার আদায়ের প্রশ্ন।’’

সিপিআই(এম) আগস্ট মাস জুড়ে প্রচার চালাবে সংবিধানের ওপর আক্রমণ নিয়ে। সিপিআই(এম) বলেছে, ব্রিটিশের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা আন্দোলনের ফসল সংবিধান। সেই স্বাধীনতা আন্দোলনে ছিল না বিজেপি’র ভিত্তি সংগঠন আরএসএস। বরং ফ্যাসীবাদী লক্ষণসম্পন্ন আরএসএস ব্রিটিশের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।   

সেলিম জানিয়েছে যে স্বাধীনতা আন্দোলনের বোধকে কেবল বাঁচিয়ে রাখা নয়, তাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লড়াই অন্যদের সঙ্গে নিয়ে চালাবে সিপিআই(এম)। সম্প্রীতির পাশাপাশি নাগরিকের গণতান্ত্রিক অধিকার আক্রান্ত। তুলে ধরা হবে সে কথাও। এই প্রসঙ্গেই সেলিম বলেন, ‘‘এ রাজ্যেও কথা বলা, ভোট দেওয়া, নির্বাচিত হওয়ার অধিকার মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। পঞ্চায়েত নির্বাচনেও আমরা তা দেখেছি। বিডিও, এসডিও’দের ব্যবহার করে গণতন্ত্রের ওপর আক্রমণ হলো। এখন বিডিও, এসডিও’রা আদালতে বকা খাচ্ছে। রাজ্যের তৃণমূল সরকারের মনোভাবের সঙ্গে বিজেপি-আরএসএস’র মনোভাব মিলে যাচ্ছে। সেই জন্যই এদের বোঝাপড়া।’’ 

Comments :0

Login to leave a comment