প্রধানমন্ত্রী মোদীর নির্দেশ মতো প্রায় কোনোরকম প্রস্তুতি ছাড়া সোমবার থেকে দেশে চালু হয়ে যাচ্ছে নয়া ফৌজদারি সংহিতা আইন। বিগত লোকসভায় বিরোধীদের মতামতকে গুরুত্ব না দিয়ে, কার্যত বিরোধী সাংসদদের বড় অংশকে সংসদ থেকে বের করে দিয়ে তিন ফৌজদারি সংহিতা আইন প্রণয়নে বিল পাশ করায় মোদী সরকার। সেই সংহিতা আইন মোদীর মোর্চা সরকার সারা দেশে এবারে চালু করছে।
কোনোরকম প্রস্তুতি ছাড়া আইন চালু হওয়ায় ‘আইনি এবং বিচার ব্যবস্থায় চরম ডামাডোলের মতো অবস্থা হবে’ বলেই আশঙ্কা করছেন সুপ্রিম কোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবী প্রাক্তন অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল ইন্দিরা জয়সিং। একই আশঙ্কা পেশ করে আইন মন্ত্রী অর্জুন রাম মেঘাওয়ালকে চিঠি দিয়েছে পিপলস ইউনিয়ন ফর সিভিল লিবার্টিস (পিইউসিএল)। চিঠিতে নয়া সংহিতা আইন চালু বন্ধ রেখে আলোচনা ডেকে তা নিয়ে সংশয় দূর করা উচিত বলে জানিয়েছে। আলোচনার জন্য কিছুদিন সংহিতা আইন চালু বন্ধ করলে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়বে না জানানো হয়েছে। ইতিমধ্যে নয়া সংহিতা আইনের দানবীয় ধারা উল্লেখ করে তা ফ্যাসিস্ত রাজ কায়েমের দলিল অভিযোগ করে তা চালু না করার জন্য সমস্ত বিরোধী দল চিঠি দিয়ে প্রতিবাদের আবেদন জানিয়ে বিশিষ্ট নাগরিক ও বুদ্ধিজীবীরা।
প্রসঙ্গত, দেশে ফৌজদারি অপরাধ নিয়ে যে পুরানো তিনটি আইন ছিল তা হলো, ভারতীয় ফৌজদারি দণ্ডবিধি আইন (আইপিসি), ফৌজদারি কার্যবিধি কোড (সিআরপিসি), ভারতীয় প্রমাণ আইন (এভিডেন্স অ্যাক্ট)। এই তিন আইন বাতিল করে আনা হয়েছে নয়া তিন ফৌজদারি আইন। তা হলো, ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা, ভারতীয় নয়া সংহিতা, ভারতীয় সাক্ষ্য অধিনিয়ম আইন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহের দাবি, পুরানো আইন বাতিল করায় দেশকে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আইন থেকে মুক্ত করা হলো। বিশিষ্ট আইনজীবীরা জানাচ্ছেন, কেন্দ্র ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আইন মুক্তির নামে আসলে সংবিধানে নাগরিক জীবনের যে অধিকার দেওয়া হয়েছে তা নয়া সংহিতা আইনে পুরো হরণ করা হয়েছে। নয়া সংহিতা আইন প্রসঙ্গে বিশিষ্ট আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিং সম্প্রতি ‘দ্য ওয়ার’ পত্রিকায় এক সাক্ষাৎকারে জানাচ্ছেন, আইন চালু করতে দেশের আইনি যে পরিকাঠামো রয়েছে তাদের ঠিক মতো প্রস্তুতি হয়েছে কিনা তা নিয়ে সমীক্ষা চালায়নি সরকার। আইন ব্যবস্থার পরিকাঠামোর কোথায় ঘাটতি রয়েছে কিছুই দেখা হয়নি। এই সময় কোনও প্রস্তুতি ছাড়া আইন চালু হওয়ায় তাতে আইনি ও বিচার ব্যবস্থায় ডামাডোল অবস্থা তৈরি হবে। তিনি কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রী এবং বিরোধী দলকে এই আইন কার্যকর স্থগিত রাখতে উদ্যোগী হওয়ার আবেদন জানান। তিনি বলেন, বর্তমানে সরকারি তথ্যে জানা যায় আদালতে বিপুল বকেয়া মামলা পড়ে রয়েছে। আদালতের পরিকাঠামো ঘাটতি তার অন্যতম কারণ। সেই ঘাটতি না মিটিয়ে ফের নতুন সংহিতা আইন কার্যকরে আদালতে জটিলতা দেখা দেবে। তিনি আদালতের নয়া আইনের জটিলতার কথা উল্লেখ করে বলেন, নতুন আইন কার্যকরের আগে যে এফআইআই দায়ের হয়েছে তার বিচার পুরানো আইনে হবে না কি নতুন সংহিতা আইনে হবে এনিয়ে আইন পরিষ্কার নয়। এবারে যে আইন সংশোধন হলো তাতে সুপ্রিম কোর্টের কোনও মতামত নেওয়া হয়নি। ফলে আদালতে নয়া সংহিতা আইনে সমস্যা বাড়বে। তিনি আরও বলেন, নয়া সংহিতা আইনে জটিলতার কারণে মামলা বকেয়া পড়ে থাকবে।
এই নয়া তিন ফৌজদারি সংহিতা আইন ভারতকে ফ্যাসিস্ত রাষ্ট্রে পরিণত করবে বলে বিরোধী দলগুলিকে দেওয়া চিঠিতে জানান বিশিষ্ট নাগরিক ও বুদ্ধিজীবীরা। তাই নয়া সংহিতা আইন চালু স্থগিত রেখে তা যৌথ সংসদীয় কমিটিতে আলোচনার জন্য পাঠানোর আবেদন জানিয়েছেন তাঁরা। দেশের ৩ হাজার ৭০০ জন বিশিষ্ট নাগরিক ও বুদ্ধিজীবী যৌথ আবেদনে সই করেছেন। নয়া তিন সংহিতা আইন কীভাবে অর্জিত গণতান্ত্রিক অধিকার রোধ করে ফ্যাসিস্ত রাজ কায়েম করবে তা তাঁরা চিঠিতে ব্যাখা করেছেন।
Comments :0