প্রতীম দে ও সৌরভ গোস্বামী
"গত কয়েক বছর ধরে ডোমজুড়, বাঁকরা, হাওড়া জুড়ে লুট করেছে তৃণমূল। মদত দিয়েছেন কল্যাণ ব্যানার্জি। আপনাদের কাছে আবেদন জানাতে এসেছি এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। লুট বন্ধ করতে সংসদে পাঠান দীপ্সিতাকে।"
শুক্রবার সলপ বাজারের সভা থেকে শ্রীরামপুর লোকসভার সিপিআই(এম) প্রার্থী দীপ্সিতা ধরের সমর্থনে প্রচারে এসে এমনই আবেদন জানালেন মহম্মদ সেলিম।
জাপানি গেট থেকে সলপ মোড় পর্যন্ত দীপ্সিতা ধরের সমর্থনে মিছিল হয়েছে শুক্রবার সকালে। ভোট ২০ মে। শনিবার শেষ প্রচার। এদিন মিছিলে হাঁটলেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক। দীর্ঘ মিছিলকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যে উৎসাহ আর আগ্রহ ধরা পড়ছিল স্পষ্টই।
এই এলাকায় নির্বাচনে বিষয় একাধিক। এখানেও স্থানীয়দের কথায় উঠে এল যে ভোট দিতে না পারার যন্ত্রণা রয়েছে। রয়েছে ক্ষোভ। ২০১১ সালের পর থেকে শান্তিতে ভোট দিতে পারেননি এই এলাকার মানুষজন। এলাকা জুড়ে লুট চালাচ্ছে তৃণমূল। বার বার আক্রান্ত হয়েছেন সিপিআই(এম) কর্মী সমর্থকরা।
এদিন সেলিম বলেন, "যারা এই এলাকায় ঝান্ডা বাঁধতে দেয়নি তাদের বলে রাখছি এবার ভোট লুট করতে এলে ঘাড় ধরে বের করে দেওয়া হবে। কালীঘাটের খুঁটি নড়ে গিয়েছে। যারা ওই খুঁটির জোরে এতদিন মাস্তানি করেছে তাদের শুধরে যেতে হবে।"
কাছেই এক টোটো চালক গাড়িতে বসেই তখন বলছেন, ‘‘এবার আর ওসব হবে না। ভোট নিজে দেব।’’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই টোটো চালক বলছেন, "কোনও ভোট দিতে পারিনি। দিতে গেলেই বলে ভোট হয়ে গিয়েছে।"
কারা বলে?
-- শুনলেন না। সেলিম বাবু বললেন তো। উনি ঠিক বলছেন। তৃণমূল ভোট দিতে দেয় না।
বিজেপি’র কোনও প্রভাব আছে ?
-- আমি হাওড়া কেন্দ্রের ভোটার। সেখানে বিজেপির সেভাবে কোনও প্রচার নেই। কয়েকটা দেওয়াল লেখা আর ফ্লেক্স।
কিছুটা থেমেই ফের বললেন, ‘‘বিজেপি’র প্রার্থী তো আগে তৃণমূল করত।’’
হাওড়ায় রথীন চক্রবর্তীকে তৃণমূল থেকে এনে দাঁড় করিয়েছে বিজেপি।
জাপানি গেটে স্থানীয়রা দুই লোকসভা কেন্দ্র হাওড়া এবং শ্রীরামপুর সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। শ্রীরামপুরের কথা জিজ্ঞেস করতেই উঠে এল একরাশ ক্ষোভ। দুই কেন্দ্র নিয়েই স্থানীয়দের অন্যতম ক্ষোভ গত পাঁচ বছরে দেখা যায়নি তৃণমূল সাংসদদের। হাওড়ায় প্রসূন ব্যানার্জি বা শ্রীরামপুরে কল্যাণ ব্যানার্জিকে ঘিরে এই ক্ষোভ স্পষ্ট।
দুই কেন্দ্রেই এবার তরুণ প্রার্থীদের দাঁড় করিয়েছে সিপিআই(এম)। হাওড়ায় প্রার্থী আইনজীবী সব্যসাচী চ্যাটার্জি। শ্রীরামপুরে ছাত্র আন্দোলনের সর্বভারতীয় স্তরের নেত্রী দীপ্সিতা ধর। ধারালো বক্তব্য রাখছেন দু’জনেই। এলাকায় ঘুরলে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে বক্তব্য দাগ কেটেছে জনতার মনে।
একথা অনেকেই বলছেন সরাসরি যে প্রসূন ব্যানার্জি আর কল্যাণ ব্যানার্জি, দু’জনকেই, এলাকায় দেখা যায় না। কোনও কাজের জন্য দরকার হলে পাওয়া যায় না।
কিন্তু এই এলাকায় আশঙ্কা রয়েছে ভোট লুট নিয়ে একের পর এক ভোটে লুট করে জিতেছে তৃণমূল। ভোট লুটের প্রতিবাদে সরব বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেস। প্রচারেও বলা হচ্ছে সেকথা।
সেলিমও বলেছেন, ‘‘ভোট যাতে শান্তিপূর্ন হয় সেই ব্যবস্থা নির্বাচন কমিশনকে নিতে হবে। কোন লুট বরদাস্ত করা হবে না।’’
তৃণমূল প্রসঙ্গে তিনি বললেন, ‘‘তৃণমূলের গোটা দলটা জেলে যাবে। আমাদের কাছে সব প্রমাণ আছে। কেউ ছাড় পাবে না।’’
সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদকের কথায়, "মমতা দেখছে বিজেপির হাওয়া খারাপ তাই বলছে ‘ইন্ডিয়া’-কে সমর্থন দেবে। ভাইপো কে বাঁচানোর জন্য উনি আগেই ট্রেন থেকে নেমে গিয়েছেন। জেলে ওঁদের যেতেই হবে।"
Comments :0